
ঢাকা: হয়ে গেল রায় ঘোষণা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশকর্তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর ট্রাইবুন্যালে হয়েছে রায় ঘোষণা। সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই হাসিনার ফাঁসির সাজা প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি জারি করেছে দেশের বিদেশমন্ত্রক। তাতে বাংলাদেশকে ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ বলেই উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দেওয়ার রায় সম্পর্কে ভারত অবগত বলেও জানিয়েছে। সেই বিবৃতি অনুযায়ী, ‘যেহেতু বাংলাদেশ, ভারতের খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। তাই তাঁদের জনগণের স্বার্থে— শান্তি, গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতার প্রতি ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে ভারত সরকার অবশ্যই আলোচনা করবে।’
Our statement regarding the recent verdict in Bangladesh⬇️
🔗 https://t.co/jAgre4dNMn pic.twitter.com/xSnshW6AzZ— Randhir Jaiswal (@MEAIndia) November 17, 2025
হাসিনা ও প্রত্যর্পণের দাবিতে সরব বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের রায়ের পর ভারতে ‘থাকা’ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তরের জন্য আহ্বান ঢাকার। এদিন সেদেশের বিদেশমন্ত্রক একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, ‘আমরা ভারত সরকারের প্রতি পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনতিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দুই দেশের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারেই তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
সোমবার রায় ঘোষণার পরই আওয়ামী লিগের সমাজমাধ্য়মে পোস্ট হয়েছে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া। সমস্ত অভিযোগকে নস্যাৎ করে, গোটা রায়দান প্রক্রিয়াকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
কী প্রতিক্রিয়া দিলেন হাসিনা? পড়ুন এখানে ক্লিক করে।
মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামীর নামে দেশে থাকা সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। অর্থাৎ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামানের সমস্ত সম্পত্তি এবার বাজেয়াপ্ত করবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু কত সম্পত্তি রয়েছে এই দুই সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর?
দেখুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে: হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে কতটা ভরবে ইউনূস সরকারের ভাঁড়ার?
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃ্ত্যুদণ্ডের ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। পাশাপাশি এই মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানেরও ‘ক্যাপিটাল পানিশনমেন্ট’ বা ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে আদালত। কিন্তু ছাড় পেয়েছেন একজন তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন পুলিশকর্তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। হাসিনা ও আসাদুজ্জমান পলাতক হলেও প্রাক্তন পুলিশকর্তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামন থেকেছেন বাংলাদেশে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। তাই তাঁর সাজা একেবারে কমিয়ে দিয়েছে ট্রাইবুন্যাল। সোমবার প্রাক্তন পুলিশকর্তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইবুন্যাল।
হাসিনাকে মৃ্ত্যুদণ্ডের সাজা দিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আদালত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিল বেঞ্চ।
হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। পাশাপাশি, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার নেপথ্য়ে তিনটি কারণ তুলে ধরলেন বিচারপতি।
শুরু হয়ে গিয়েছে রায়ের শেষ অংশ পড়া। ইতিমধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কালে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইবুন্যাল। এবার পালা সাজা ঘোষণার। প্রথম থেকেই হাসিনা-সহ মোট তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছে বিরোধী পক্ষ। একই দাবি সরকার পক্ষ ও প্রতিবাদী ছাত্রদেরও। এবার তিন আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে ও বিপক্ষে তৈরি হওয়া যুক্তিতর্কের বিবরণ দিচ্ছেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার।
হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগ প্রমাণিত। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আদালতে চলা রায়দান পর্বে জানালেন বিচারপতি। তবে কী সাজা হবে, তা এখনও উল্লেখ করেনি বেঞ্চ। পাশাপাশি, এই মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শককেও দোষী সাব্যস্ত করল আদালত।
বিদ্বেষমূলক মন্তব্য থেকে হত্যার নির্দেশ, নিজের শাসনক্ষমতায় বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সবই করেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জানালেন বিচারপতি। এই সময়কালে নিজের এক ঘনিষ্ঠকে মোট ২২৬ জন আন্দোলনকারীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশে গঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। তখন ঢাকায় ‘রাজত্ব’ আওয়ামী লিগের। প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা। সেই তাঁর গড়া আদালতেই সোমবার চলছে আরও একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা। যে মামলার মূল অভিযুক্ত খোদ শেখ হাসিনাই। ২০১০ থেকে ২০২৫, এই ১৫ বছরে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট ৫৭টি রায় দিয়েছিল ট্রাইবুন্যাল। যা সোমবার রায় দিতে চলেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কালে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের।
সোমের রায়দান শুধু বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্য়ই নির্ধারণ করবে না, করবে আরও দুই ব্যক্তিরও। একজন বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অন্যজন, প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মোট পাচঁটি মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে এই তিন নের বিরুদ্ধে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ফোনে কাকে, কী নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা? ফোনালাপের সেই অংশ উঠে এল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের রায়দান পর্বে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তি নি হেলিকপ্টার, ড্রোন, মারণাস্ত্র ব্য়বহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশ দিয়েছিলেন বোমাবর্ষণের। এদিন বিচারপতি বলেন, ‘হাসিনা বলেছিলেন, কাউকে ছাড়বেন না। একটাও রাজাকারদের রেহাই দেবেন না। এঁদের সবাইকে ফাঁসি দেব।’
একদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের ১নং এজলাসে চলছে হাসিনা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে হওয়া মানবতাবিরোধী মামলার রায়দান। সেই সময় আদালতের বাইরে অবস্থানে বসেছে গণঅধিকার পরিষদ ও মঞ্চ। শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আদালতের বাইরে অবস্থান তাঁদের। উঠেছে, ‘ফাঁসির’ স্লোগান পর্যন্ত।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি। হাসিনার পৈতৃক ভিটে। যে ভিটেতে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুকেও। সোমবার রায় ঘোষণার পূর্বে সেই বাড়ির সামনেই সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করল পুলিশ। মোতায়েন হল বিপুল সেনা। কিন্তু কেন? ঢাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুলডোজার নিয়ে সেই বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ভেঙে দিতে আসে এক দল প্রতিবাদী। বুলডোজ়ার নিয়ে ঢুকে পড়ে তাঁরা। তখনই ‘ঢাল’ হয়ে রুখে দাঁড়ায় পুলিশ।
দুপুর ১২টা নাগাদ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে শুরু হয় পড়া। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় শোনাচ্ছেন বিচারপতি।
এই রায় ঘোষণা পর্ব দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের বসানো হয়েছে এক বিরাট পর্দা। সেখানেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের ১-এর এজলাসে থেকে চলা সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন ছাত্র-শিক্ষকরা। পাশাপাশি ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ পথচারিরাও।