ঢাকা: বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ফিরছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী, অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস। বাংলাদেশের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে চলেছেন তিনি। ঠিক তার আগের দিনই ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি এক বিশেষ সতর্কবার্তা দিলেন তিনি। বুধবার, এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দায়িত্ব নিয়ে তাঁর প্রথম কাজই হবে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ স্থিতাবস্থা না আসলে, তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, তার প্রতিবেশি দেশগুলির পক্ষেও বিপজ্জনক হবে বলে সতর্ক করেছেন ইউনুস। তিনি জানান, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের উত্তর–পূর্বের রাজ্যগুলি, মায়ানমার – সর্বত্র তার প্রভাব পড়বে।
ড. ইউনূস বলেন, “মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। এই জনসংখ্যার অধিকাংশই যুব সম্প্রদায়। জীবনে তারা কেউ ভোট দিতে পারেননি। সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই হবে প্রধান কাজ। ওখান থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। তাদের বলতে হবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তোমরা সবাই হবে তার অংশীদার।” শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও বাংলাদেশে হিংসা থামছে না। হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’। তবে, এই হিংসার দায়ও হাসিনা প্রশাসনের উপরই চাপিয়েছেন নোবেলজয়ী।
তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে এতদিন ধরে কোনও আইনশৃঙ্খলা ছিল না বলেই আজ এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল বলেই, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি এতটা জোরালো হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন তিনি। এখন মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের পতন উদযাপন করছে বলে জানান ইউনুস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এটা ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “প্রথমটা ছিল পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া, এবার স্বৈরাচারী সরকারের কাছ থেকে। শুরু হয়েছে এক নতুন যুগের। মানুষ এখন মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে।” সেই ‘উদযাপন’কে কেন্দ্র করে যে বাংলাদেশে চূড়ান্ত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন অর্থনীতিবিদ। তবে, শিগগিরই স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে আশাবাদী তিনি।
ইসলামি মৌলবাদীদের উত্থান, উগ্রপন্থীদের উত্থান এমনকি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙার দায়ও হাসিনার ঘাড়েই দিয়েছেন ডয় মহম্মদ ইউনুস। নোবেলজয়ী বলেন, “এই সব ঘটনার যাবতীয় দায় শেখ হাসিনার। নিজের বাবার ভাবমূর্তি তিনিই নষ্ট করেছেন। দেশের মানুষের মন এমন বিষিয়ে দিয়েছেন যে আজ বীতশ্রদ্ধ হয়ে মানুষ এমন কাজ করছে। এর দায় হাসিনাকেই নিতে হবে।” বর্তমান ঘটনাক্রম হাসিনার শাসনেরই ধারাবাহিকতা বলে দাবি করেছেন তিনি। ইউনুস বলেন, “দেশবাসীকে গণতন্ত্রহীন করে রেখে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করে রেখেছিলেন। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রই অস্থিতিশীলতার ওষুধ। এবার বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে। স্বচ্ছ নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবে। এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল সেটাই।”
আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র কায়েম হলে সংখ্যালঘুরাও নিরাপদে থাকবেন বলেই মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, “তাঁদের বক্তব্য প্রাধান্য পাবে। গুরুত্ব পাবে। গ্রাহ্য হবে। সংখ্যালঘুরা ভোট দিতে পারবেন। নিজেরাই নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবেন। ভারতের সংখ্যালঘুরা যে সুযোগ পান।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)