কাবুল: ঘূর্ণিঝড়ে যেভাবে বাড়িঘর উড়ে যায়, চোখ খুলে দেখলাম সেভাবেই আকাশে উড়ছে দেহের টুকরো। আশেপাশে ঝরে পড়ছে কারোর হাত-পা। মৃতদেহের স্তূপের মাঝেও কাউকে চেনার উপায় নেই। এই ভয়াবহ দৃশ্য সারাজীবন তাড়া করে বেড়াবে, এমনটাই জানালেন কাবুল বিস্ফোরণের এক প্রত্যক্ষদর্শী।
বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে যে পরপর বিস্ফোরণ হয়, তা থেকে কোনও মতে রক্ষা পান এক ব্যক্তি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মী কাজের দায়েই আফগানিস্তানে এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি ১৮০ ডিগ্রি বদলে যায়। মার্কিন অনাবাসী ভিসা থাকায় একটু স্বস্তি পেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালেই হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে তিনিও ভিড় জমিয়েছিলেন বিমানবন্দরের বাইরে। আশা করেছিলেন, গেট খুললেই তিনি আধিকারিকদের ভিসার কাগজপত্র দেখিয়ে মার্কিন সামরিক বিমানে উঠে পড়বেন তিনি।
গতকালই আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনের তরফে বিমানবন্দরে হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এবং সকলকে গেটগুলি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তালিবানের ভয়ে বিমান হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। তাই টানা ১০ ঘণ্টা ধরে অ্যাবেই গেটের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিকেল পাঁচটা নাগাদই বদলে গেল সবকিছু। হটাৎ একটা বিকট শব্দ। ব্যাস তারপরই সবকিছু অন্ধকার।
প্রাণ ভয়ে নাম প্রকাশ করতে না চাইলেও প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি বলেন, “হঠাৎ মনে হল পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে মনে হল আমার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। আর কোনওদিন শুনতে পাব না। চোখ খুলে দেখলাম আকাশে দেহের ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া টুকরোগুলি উড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ে যেভাবে প্লাস্টিক উড়ে যায়, সেভাবেই দেহগুলি উড়ছিল। বয়স্ক থেকে বাচ্চা, চারিদিকে শুধু মৃতদেহই পড়ে থাকতে দেখছিলাম।”
তিনি বলেন, “লোকজন বলে যে জীবিত অবস্থায় নরক দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু আজ আমি দেখেছি। নিজের চোখে গোটা ঘটনাটা দেখেছি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কেউ ছিল না। মৃতদেহ সরানো বা আহত দের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কেউ ছিল নী। রাস্তা ও খালগুলিতে শুধুমাত্র মৃতদেহই পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। যেটুকু জল বইছিল খালে, তা রক্তে লাল হয়ে যায়। ”
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও গতকালের ঘটনায় যে মানসিক ধাক্কা লেগেছে, তা হয়তো কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না, এমনটাই জানান প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি।