দ্বিতীয় ডোজ দেরিতে দিলেই কার্যকারিতা বেশি, বলল অক্সফোর্ডও! ভারত নীতি বদলাবে?

নতুন ট্রায়াল-রিপোর্টে অক্সফোর্ডও (Oxford) জানাল, টিকা (Covid 19 Vaccine) বেশি সুরক্ষা দিচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ (Covishield) ১২ সপ্তাহ পর দিলেই। তাতে এফিকেসি রেট অর্থাৎ কার্যকারিতার হার মিলছে ৮১.৩%।

দ্বিতীয় ডোজ দেরিতে দিলেই কার্যকারিতা বেশি, বলল অক্সফোর্ডও! ভারত নীতি বদলাবে?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 11:48 PM

কমলেশ চৌধুরী: প্রথম ডোজের নেওয়ার ৪ সপ্তাহ পরই কোভিশিল্ডের (Covishield) দ্বিতীয় ডোজ (Second Dose) দিচ্ছে ভারত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই নীতি আর কত দিন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আগেই বলেছিল, দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ ৮-১২ সপ্তাহ পর দিলেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে অক্সফোর্ডের (Oxford) টিকা। এ বার নতুন ট্রায়াল-রিপোর্টে অক্সফোর্ডও জানাল, টিকা (Covid 19 Vaccine) বেশি সুরক্ষা দিচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ ১২ সপ্তাহ পর দিলেই। তাতে এফিকেসি রেট অর্থাৎ কার্যকারিতার হার মিলছে ৮১.৩%। অথচ, ৬ সপ্তাহের মধ্যে দিলে অনেকটাই কমে যাচ্ছে কার্যকারিতার হার। মাত্র ৫৫.১%। ভারতে যেহেতু বেশিরভাগ নাগরিককে কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে, তাই করোনার বিরুদ্ধে পাকাপোক্ত রক্ষণ তৈরির প্রশ্নে দ্বিতীয় ডোজ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করছেন টিকা বিশেষজ্ঞরা।

এখনও পর্যন্ত যে ক’টি ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে, সব ক’টিই জোড়া ডোজের। প্রথম ডোজের নির্দিষ্ট সপ্তাহের পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা। তারও ২-৪ সপ্তাহ পর করোনার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি হয় শরীর। তাই একটি নয়, দু’টি ডোজই নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে জরুরি নির্দিষ্ট সময়েই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া। কারণ, প্রথম ডোজ শরীরের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাগিয়ে তোলে। দ্বিতীয় ডোজে তারই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়।

শুক্রবার প্রথম সারির বিজ্ঞান পত্রিকা ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ৪-১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের কথা বলা হলেও, ১২ সপ্তাহের পর প্রয়োগেই সবচেয়ে বেশি কাজে দিচ্ছে চ্যাডক্স ওয়ান বা এজেডডি১২২২। এই ভ্যাকসিনই কোভিশিল্ড নাম দিয়ে ভারতে উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। ফলে এই রিপোর্ট ভারতীয়দের মধ্যেও চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে সিলমোহর দিতে গিয়ে দেরিতে দ্বিতীয় ডোজের সুপারিশ করেছিল হু। আর অক্সফোর্ডের বক্তব্য, প্রথম ডোজের পর ৯০ দিন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বজায় থাকছে। ফলে দেরি করলেও দুশ্চিন্তা নেই।

দিনকয়েক আগে লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে ২ কোটি ১৫ লক্ষ টিকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৯ লক্ষ কোভিশিল্ড, ২৫ লক্ষ ৭৪ হাজার কোভ্যাক্সিন। অর্থাৎ, কোভিশিল্ডই বেশি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাতেও ছবিটা এক। এই অবস্থায় হু-র রিপোর্ট সামনে আসার পরই অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ৪ সপ্তাহের পরই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পথে হাঁটেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, শনিবার সন্ধে পর্যন্ত ৮,৭৩,৯৪০ জনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পেয়েছেন ৪৫,১২০ জন। রাজ্যে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকা নিয়েছিলেন ৮০,৫৪২ জন। সংখ্যাতেই স্পষ্ট, প্রায় অর্ধেক লোক ৪ সপ্তাহ ব্যবধানের পরামর্শ মানেননি। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে ডোজ পিছনোর প্রসঙ্গ তোলে কয়েকটি রাজ্য। যদিও স্পষ্ট কোনও দিশা দেখাতে পারেনি কেন্দ্র।

ব্রিটেন অবশ্য ডিসেম্বর থেকেই বুস্টার ডোজ ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছিল। যে সিদ্ধান্তের পিছনে অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, শুরুতে বেশি সংখ্যক লোককে অন্তত একটি করে ডোজ দিয়ে দেওয়া।

আরও পড়ুন: ‘সাংস্কৃতিক চৈতন্যে ধাক্কা’, ‘টুম্পা-প্রচার’ নিয়ে সিপিএমকে একহাত শুভেন্দু মাইতির

ভারতের কী করা উচিত?

ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিমত, “টিকাকরণের নীতি বদলে ফেলা উচিত বলেই মনে হয়।” তাঁর যুক্তি, “জরুরি ভিত্তিতে যখন টিকা দেওয়া হচ্ছে, তখন প্রয়োজনে নতুন রিপোর্টের জন্য নমনীয় থাকাই ভাল। কারণ, সবটাই প্রথমবার হচ্ছে। তাছাড়া, ব্রিটেনের আগের ট্রায়াল দেখেই ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে কোভিশিল্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ভারতে। দেশের ট্রায়াল এখনও শেষই হয়নি। ফলে নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজও পিছিয়ে দেওয়া উচিত।” ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও বলছেন, “এই রিপোর্টের ভিত্তিতে কোভিশিল্ডেরও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার স্ট্র্যাটেজি বদলানো যেতে পারে। বিশেষ করে যখন দেখা যাচ্ছে, বুস্টার ডোজ দিতে দেরি হলেও সুরক্ষায় ঘাটতি হচ্ছে না, বরং লাভই বেশি।”

এমনিতেই ভ্যাকসিনে অনীহা নিয়ে বেশ কিছুটা বেকায়দায় সরকার। তারপর এক এক সময় এক এক রকম রিপোর্ট সামনে এলে আরও বেশি দ্বিধা তৈরি হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রথম বড়দের টিকাকরণ কর্মসূচি হচ্ছে। মহামারী ঠেকানোই উদ্দেশ্য। এই পরিস্থিতিতে এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে সরকারের উচিত, ধোঁয়াশা দূর করা। যেমন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, “আমাদের দেশে বলা হয়েছে, ৪ সপ্তাহের পর কোভিশিল্ড নেওয়া যাবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, ১২ সপ্তাহের ফারাকে নিলেই লাভ বেশি, তাহলে সরকারি ভাবে সেই গাইডলাইন স্পষ্ট করা উচিত। তাহলে কারও মনে প্রশ্নও থাকবে না।” তিনিও দ্বিতীয় ডোজ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে।

আরও পড়ুন: ধুঁকছে কংগ্রেসের কোষাগার, পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনে লড়ার খরচ জোগানে হিমশিম