ওয়াশিংটন : প্রথমবার কোয়াড (Quad) দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন। কোয়াড অর্থাৎ, ভারত – আমেরিকা – অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নিরীখে কোয়াডের বয়স খুব বেশি নয়, কিন্তু বিশ্ব কূটনীতিতে নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বড় ছাপ ফেলেছে কোয়াড। এর আগে ভার্চুয়ালি বৈঠক হলেও এই প্রথম মুখোমুখি বসছেন চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বৈঠকের আহ্বায়ক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (Narendra Modi)।
বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম মার্কিন সফরে নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক। বাইডেনের ডেপুটি কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বৈঠক। তারপর হোয়াইট হাউজ়ে মোদীকে আহ্বান বাইডেনের। একান্ত আলাপচারিতা। দুই দেশের বাণিজ্য ও প্রযুক্ত সহ একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা। আর তারপর কোয়াড সম্মেলন। আর নমোর এই ঠাসা কর্মসূচিতে ঘেরা মার্কিন সফর কূটনৈতিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের দিক থেকে।
বিশেষ করে তালিব যোদ্ধারা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর যখন সেখানকার পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে, তখন ভারত মার্কিন সম্পর্ক আরও মজবুত করাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। শুধু যে ভারতের আমেরিকাকে পাশে প্রয়োজন এমনটাই নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে দেখতে গেলে ভারত – মার্কিন সম্পর্ক যতটা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই আমেরিকার জন্য। কারণ, আফগানিস্তান – পাকিস্তান – চিন একটি অক্ষ তৈরি করলে এশিয়া মহাদেশে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা আরও বেশি করে দরকার আমেরিকার।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে সেই কারণেই নমোর এবারের মার্কিন সফর এতটা গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশের জন্য। আজ কোয়াড সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমাদের কোয়াড ‘বিশ্বের একটি ভাল শক্তি’ হিসেবে কাজ করবে। আমি বিশ্বাস করি যে কোয়াডে আমাদের সহযোগিতা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগর এবং সমগ্র বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।”
প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, “আমাদের কোয়াড ভ্যাকসিন সংক্রান্ত যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলিকে সাহায্য করবে। কোয়াড গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাপ্লাই চেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, জলবায়ু, কোভিড বা প্রযুক্তি সবক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়াবে কোয়াড।”
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোয়াডের বৈঠকে বলেন, “আমরা যখন কয়েক মাস আগে দেখা করেছি, তখন আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম। আজ, আমি গর্ব করে বলছি যে আমরা চমৎকার উন্নতি করছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মরিসন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী সুগাকে হোয়াইট হাউজ়ে কোয়াডের বৈঠকে স্বাগত জানাই।”
এই কোয়াডের প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক ভাবধারা, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি, সব মিলিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে তিনি জানান, করোনা টিকার বিশ্বব্যাপী সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ভারতে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডোজ তৈরির পরিকল্পনা চলছে।
বাইডেন বলেন, “আজ, আমরা আমাদের কোয়াড দেশগুলির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লিডারশিপ স্টেম প্রোগ্রামে উন্নত ডিগ্রি অর্জনের জন্য একটি নতুন কোয়াড ফেলোশিপও চালু করছি, যা আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।”
আরও পড়ুন : Modi – Biden Diplomacy: গান্ধীজিতে মুগ্ধ বাইডেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে নিয়ে আলোচনা হোয়াইট হাউজ়ের অন্দরে