প্র দী প চ ক্র ব র্ত্তী
ইউক্রেনে হামলার ঠিক আগে কৃষ্ণসাগরে নৌ মহড়া করেছিল রাশিয়া (Russia)। তাতে ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল পরীক্ষাও করা হয়। দূরপাল্লার পরমাণুবহ মিসাইল পরীক্ষা কেন? উদ্বেগ ছড়িয়েছিল তখনই। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে এখন পরমাণু আশঙ্কা পুরোদস্তুর। বেপরোয়া পুতিন কখন কোনদিকে পা ফেলেন কেউ জানে না। ইতিমধ্যেই পরমাণু প্রতিরোধ বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিরোধ বাহিনী অবশ্য পোশাকি পরিচয়। আসলে পরমাণু হামলা চালানোর জন্য রাশিয়ার যে বিশেষ বিভাগ রয়েছে তাই ডিটারেন্স ফোর্স। সব দেশই দাবি করে, আক্রান্ত হলেই তবে তারা পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করবে।
রাশিয়ারও নো ফার্স্ট ইউজ পলিসি ছিল। দুহাজার কুড়িতে তা বদল করেছেন পুতিন। রাশিয়া বা সরকারি দেশের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে, শত্রুদেশ রাশিয়ার ওপর পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করলে, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারে শত্রুদের হামলা করলে, রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হলে রাশিয়া পরমাণু যুদ্ধে ঝাঁপাতে পারে। পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সময়েই অখণ্ড রাশিয়ার তত্ত্ব আউড়ে দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর রাশিয়ার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অর্থাত্ পরমাণু নীতি প্রয়োগের একটি শর্ত তিনি নিজের থেকেই পূরণ করে দিয়েছেন। পশ্চিমী গোয়েন্দাদের রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ার হাতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র। ছয় হাজারের কিছুটা বেশি বা কম। তার একটা অংশ সবসময় যুদ্ধের জন্য তৈরি রাখা হয়।
শীতযুদ্ধের সময় রাশিয়া ও আমেরিকার অস্ত্র প্রতিযোগিতা চরমে পৌঁছয়। তখন মূল ভূখণ্ড ছাড়াও ইউনিয়নের আরও তিনটি দেশে পরমাণু ঘাঁটি বানিয়েছিল সোভিয়েত। ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র মজুত রেখেছিল রাশিয়া। কাজাখস্তান ও বেলারুশেও রুশ পরমাণু ঘাঁটি ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর, ১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট সমঝোতা হয়। সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী ইউক্রেন, বেলারুশ ও কাজাখস্তান নিজেদের হেফাজতে থাকা পরমাণু অস্ত্র রাশিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বিনিময়ে রাশিয়া ও পশ্চিমী বিশ্ব এই তিনটি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ইউক্রেন আক্রমণ করে সেই শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। তবে তা অন্য বিতর্ক। এখন প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রগুলি কোথায় রয়েছে? মার্কিন গুপ্তচরদের একাংশ বছরভর সেই খোঁজই চালায়।
রাশিয়া অতিকায় দেশ। প্রায় গোটা উত্তর গোলার্ধ জুড়ে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপ থেকে আলাস্কার পূর্ব সীমানা পর্যন্ত। দক্ষিণে এশিয়া মাইনর থেকে উত্তর মেরুপ্রদেশ পর্যন্ত। এই বিশাল ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে পরমাণু ঘাঁটি রয়েছে রাশিয়ার। রুশ ক্ষেপনাস্ত্রের যা পাল্লা, তাতে গোটা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় অনায়াসে হামলা চালানো যায়। এছাড়াও, এছাড়াও রুশ পরমাণু অস্ত্রবাহিনী ডুবোজাহাজ প্রায় প্রতিটি মহাসাগরেই নিয়মিত ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুতিনের নির্দেশ পেলেই তারা টার্গেট লক্ষ্য করে টর্পেডো বা মিসাইল ছেড়ে দিতে পারে। সেই সাবমেরিনগুলির ওপর নজর রাখে মার্কিন সাবমেরিনগুলি। রুশ ভূখণ্ডে পরমাণু ঘাঁটিগুলিরও নিরন্তর খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন স্যাটালাইট। গোটা রাশিয়াই মার্কিন স্যাটালাইটের নিয়মিত স্ক্যানারে থাকে।
কোথাও কোন পরমাণু সক্রিয়তা দেখা গেলেই তা স্যাটালাইটে ধরা পড়ে। শক্তিশালী মার্কিন স্যাটালাইটগুলি ঘন মেঘ, দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ বা রাতের অন্ধকারেও নজরদারিতে সক্ষম। রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র বের করলেই আমেরিকা টের পাবে। কিন্তু, আমেরিকা কি যুদ্ধ ঠেকাতে রুশ পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালাবে? এই নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ পরমাণু ঘাঁটি আক্রান্ত হলেই সবকটি মিসাইল শত্রুর দিকে চালিয়ে দেবে রাশিয়া। দুহাজার কুড়িতেই সেকথা ঘোষণা করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন আক্রমণের আগে কৃষ্ণসাগরে ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রও পরীক্ষা করেছে রাশিয়া। সমর বিশারদদের মতে, আমেরিকাকে পরমাণু হুঁশিয়ারি দিয়েই যুদ্ধে নেমেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তাই গ্যালারি থেকে চিত্কার করলেও, মাঠে নেমে পুতিনকে বাধা দেওয়ার সাহস এখনই কেউ দেখাচ্ছে না।
আরও পড়ুন : Imran Khan: অনাস্থা প্রস্তাবের পিছনে রয়েছে ‘বিদেশি চক্রান্তকারী’ই! নামও ফাঁস করলেন ইমরান