Agafya Lykova: ‘বিশ্বের নিঃসঙ্গতম মহিলা’র দুয়ারে পুতিনের রকেটের ভাঙা অংশ

World's loneliest woman: তিনি 'বিশ্বের নিঃসঙ্গতম মহিলা'। থাকেন পূর্ব সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাঁরই জমিতে পড়ল ভ্লাদিমির পুতিনের রকেটের ভাঙা অংশ।

Agafya Lykova: 'বিশ্বের নিঃসঙ্গতম মহিলা'র দুয়ারে পুতিনের রকেটের ভাঙা অংশ
আগাফ্যা লাইকোভার জমিতেই এসে পড়ল প্রোটন-এম রকেটের একটা অংশ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 20, 2023 | 7:00 AM

মস্কো: তাঁকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মহিলা। কারণ, তিনি বসবাস করেন রাশিয়ার সাইবেরিয়ার একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। পূর্ব সাইবেরিয়ার তাইগা অঞ্চলে তাঁর বাড়ি। দূর-দূরান্ত অবধি দ্বিতীয় কোনও মানুষের বাস নেই। থাকবে কী করে? শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রিতে! এই ভয়ঙ্কর পরিবেশেই সম্পূর্ণ একা একা থাকেন ৭৮ বছরের সন্ন্যাসিনী, আগাফ্যা লাইকোভা। সম্প্রতি তাঁর জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছোড়া একটি রকেট। রাশিয়ার যোগাযোগ স্যাটেলাইট বহনকারী পোর্টন-এম রকেটের একটা অংশ ভেঙে পড়েছে তাঁরই জমিতে।

১৯৩৬ সালে লাইকোভা পরিবার পালিয়ে এসেছিল পূর্ব সাইবেরিয়ার তাইগা অঞ্চলে। তাঁরা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ‘ওল্ড বিলিভার্স’ সম্প্রদায়। ১৬৬৬ সালে ধর্মীয় সংস্কারের বিরোধিতা করে রুশ অর্থোডক্স চার্চ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন ‘ওল্ড বিলিভার্স’রা। রুশ বিপ্লবের পর, জোসেফ স্ট্যালিন ধর্মীয় কারণে তাঁদের নিপীড়ন করতে পারেন, এমনকি, মৃত্যুদণ্ডও দিতে পারেন, এই আশঙ্কায় ওয়েস্ট সায়ান পর্বতমালার তাইগা অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন লাইকোভার। তারপর থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁদের কেউ হদিশ পায়নি। লাইকোভারাও জানত না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা মানুষের প্রথম মহাকাশ যাত্রার মতো বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ঘটনাবলী। সেই পরিবারের শেষ সদস্য জীবিত সদস্য আগাফ্যা।

যে হাতে গোনা কয়েকজন তাঁকে সামনে থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন এই একাকী সন্নাসিনী তাঁর জীবনের বেশিরভাগটাই কাটিয়েছেন একজন অষ্টাদশ শতকের কৃষকের মতো। প্রাচীন বাইবেলে বর্ণিত জীবনচর্যা মেনে চলেছেন। তবে, সম্প্রতি সেই অবস্থাটা কিছুটা বদলেছে। আগাফ্যার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রুশ সরকার। দুই বছর আগে তাঁকে একটি নতুন কাঠের বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোভিয়েত যুগে তৈরি তাঁর পারিবারিক বাড়ির ঠিক পাশেই। তাঁর নতুন বাড়িতে বিদ্যুতের জন্য একটি সোলার প্যানেল এবং জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করার জন্য একটি স্যাটেলাইট ফোন রয়েছে। তবে, প্রথমে তিনি কোনও কিছুই গ্রহণ করতে চাননি। তবে, প্রত্যন্ত তাইগায় তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করায় আধুনিক প্রযুক্তির কিছুটা সাহায্য নিতে রাজি হন আগাফ্যা।

এহেন আগাফ্যার জমিতেই এসে পড়েছে অত্যাধুনিক রুশ রকেটের একটা অংশ। আরেকটু হলেই বেঘোরে প্রাণটা চলে যেত তাঁর। অবশ্য গত সপ্তাহের শুরুতেই তাঁকে সতর্ক করতে হেলিকপ্টারে করে উড়ে এসেছিলেন খাকাস্কি নেচার রিজার্ভ ফরেস্টের আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির উপর দিয়েই উড়ে যাবে পোর্টন-এম রকেট। উৎক্ষেপণ হবে তাঁর বাড়ির খুব কাছের এক জায়গা থেকেই। তাই, সাময়িকভাবে যদি তিনি দূরবর্তী একটি বাড়িতে উঠে যান। কিন্তু, সটান অস্বীকার করেছিলেন আগাফ্যা লাইকোভা। এরপরই, তাঁর তুষারাবৃত জমিতে রকেটের একটা ধ্বংসাবশেষ এসে পড়ে। রুশ সংবাদমাধ্য়মগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাকাশযানের ওই অংশটি রুশ মহাকাশ বিভাগের কর্তাদের তত্বাবধানে টুকরো টুকরো করে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।