
নয়া দিল্লি: বাংলাদেশ আবার অশান্ত। ফের আগুন জ্বলছে, বিক্ষোভ-আন্দোলন হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি(Osman Hadi)-র মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। আক্রমণ করলেন মহম্মদ ইউনূসের (Muhammad Yunus) অন্তর্বর্তী সরকারকে। হাসিনা বলেন যে ইউনূস হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের (Bangladesh) বিদেশনীতি সম্পূর্ণভাবে মৌলবাদীদের হাতে চলে গিয়েছে। কট্টরপন্থীদের হাতে চলে গিয়েছে বাংলাদেশ, তাই ইউনূস সরকার ভারত বিরোধী বিবৃতি দিচ্ছে।
সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া ইমেইল সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষে বসে থাকা মহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব অভিযোগ এনেছেন। ভারত বিরোধী নেতা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্য়া এবং তারপর বাংলাদেশ জুড়ে যে নৌরাজ্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার প্রমাণ। হাসিনা লিখেছেন যে তিনি দেশ ছাড়ার পরই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, ক্রমাগত অশান্তিতে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠছে। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। ইউনূস সরকারকে নখ-দন্তহীন সরকার বলেই উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
হাসিনা লেখেন, “এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আইন-শৃঙ্খলাহীনতার প্রতিফলন, যার ফলে আমার সরকার উৎখাত হয়েছিল। ইউনূসের অধীনে এই পরিস্থিতি বহুগুণে বেড়েছে। হিংসা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর অন্তর্বর্তী সরকার হয় তা অস্বীকার করছে, নয়তো তা ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই ধরনের ঘটনাগুলি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করছে না, বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ককে বিপন্ন করছে, যারা ন্যায়সঙ্গতভাবেই উদ্বেগের সঙ্গে সবকিছু লক্ষ্য করছে। ভারত এই বিশৃঙ্খলা, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন এবং আমরা একসঙ্গে যা কিছু গড়ে তুলেছিলাম, তার ক্ষয় দেখতে পাচ্ছে। যখন আপনি নিজের সীমান্তের ভেতর ন্যূনতম শৃঙ্খলাও বজায় রাখতে পারেন না, তখন আন্তর্জাতিক আঙিনায় আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা ভেঙে পড়ে। এটাই ইউনুসের বাংলাদেশের বাস্তবতা“।
ইউনূস সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, “ইউনূস তাঁর মন্ত্রিসভায় চরমপন্থী-মৌলবাদীদের স্থান দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলিকে জনজীবনে ভূমিকা নিতে অধিকার দিয়েছেন”। তিনি আরও বলেন যে একটি জটিল দেশ শাসন করার মতো অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে ইউনূসের।
তিনি বলেন, চরমপন্থী শক্তিগুলি ইউনূসকে ব্যবহার করে বিদেশে নিজেদের একটি সংযত ভাবমূর্তি তুলে ধরছে, আর দেশের ভেতরে কঠোর ও কট্টর এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হাসিনা বলেন যে এই কার্যকলাপ শুধু ভারতের জন্যই উদ্বেগের নয়, বরং সমস্ত দেশ যারা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নতির জন্য বিনিয়োগ করেছে, তাদের সকলের হওয়া উচিত। ধর্মনিরপেক্ষতাই বাংলাদেশের সবথেকে বড় শক্তি ছিল।
বাংলাদেশে হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে হত্যার ঘটনাতেও ইউনূস সরকারকেই দায়ী করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এই সরকার।
চট্টগ্রামে ভারত ভিসা পরিষেবা আপাতত বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গেও এ দেশের পাশেই দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন যে ভারতের এই উদ্বেগ একদম যুক্তিযুক্ত। একটি দায়িত্বশীল সরকার তাদের কূটনৈতিক মিশন রক্ষা করবে এবং যারা হুমকি দেয়, তাদের শাস্তি দেয়। আর সেখানেই ইউনূস সরকার হুলিগানদের সুরক্ষা দিয়ে তাদের যোদ্ধা বলছে।