কিয়েভ: রুশ সেনা ইউক্রেনের একের পর এক শহর ছাড়তে যতটা খুশি হয়েছিল ইউক্রেনীয় সেনা (Ukrainian Army), তা কিয়েভ বা বুচায় প্রবেশ করতেই এক নিমেষে দুঃখে পরিণত হয়েছে। কারণ শহরের যেদিকেই নজর যাচ্ছে, সেখানেই সারি সারি মৃতদেহ নজরে পড়ছে। কারোর হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা, কারোর আবার পিঠে পোড়া স্বস্তিক চিহ্ন। অনেকের আবার সরাসরি মাথায় গুলি করা হয়েছে। রুশ বর্বরতা থেকে মুক্তি পাননি মহিলারাও, সন্তানদের সামনেই তাদের ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে ইউক্রেনের প্রশাসনের তরফে। বুধবার সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) দাবি করেন, রাশিয়া বন্দর শহর মারিউপোলে (Maruipol) প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, কারণ তারা সেখানে যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন, তার প্রমাণ লুকোতে চায়।
তুরস্কের হাবেরটর্ক টিভিতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারেই জ়েলেনস্কি বলেন, “আমরা মারিউপোলে সাহায্যকারী কার্গো নিয়ে প্রবেশ করতে পারছি না, তার আসল কারণ হল ওরা (রাশিয়ার সেনাবাহিনী) আতঙ্কিত…ওদের ভয় যে গোটা বিশ্ব দেখতে পেয়ে যাবে কী চলছে ওখানে”। ভারী হয়ে আসা গলাতেই তিনি আরও যোগ করে বলেন, “আমার মনে হয় ওখানে ভয়ানক অবস্থা, বিপর্যয় নেমে এসেছে। হয়তো নরকের মতো অবস্থা। ১০ জন নয়, বরং হাজার হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।”
তবে রাশিয়া এই সমস্ত প্রমাণ লুকাতেও পারবে না বলেও জানান জ়েলেনস্কি। তিনি বলেন, “ওরা এই সমস্ত কিছু এত সহজে মাটি চাপা দিতে পারবে না। যে হাজার হাজার ইউক্রেনীয়রা মারা গিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তা লুকানো সম্ভব নয়”। জ়েলেনস্কি জানান, বুচা ছাড়ার আগেই রুশ বাহিনী প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল। কিয়েভের আশেপাশের অঞ্চলেও একই চেষ্টা করেছে তারা।
প্রায় কান্নাভেজা গলায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, “ওরা গোটা পরিবারকে পুঁতে দিয়েছে। আস্ত একটা পরিবার, কল্পনা করতে পারছেন? গতকালই আমরা জানতে পেরেছি। মা, বাবা, দুই সন্তান… ছোট্ট ছোট্ট দুটি বাচ্চা, তাদের ছোট্ট হাত… এই কারণে আমি ওদের নাজ়ি বলি।”
যুদ্ধ থামানো নিয়ে ফের রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবে নাকি ইউক্রেন, সেই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জ়েলেনস্কি বলেন, “শান্তি আলোচনা করতেই হবে। এটা ছাড়া যুদ্ধ থামানো কঠিন বলেই মনে হয় আমার।”
উল্লেখ্য, হিটলারের শাসনকালেও জেনোসাইড বা গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল, যা হলোকাস্ট নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল অবধি প্রায় ৬০ লক্ষ জুইশ ধর্মাবলম্বীদের খুন করা হয় গ্যাস চেম্বারে আটক করে। বিশ্বের অন্যতম নৃশংস গণহত্যাকাণ্ড বলা হয় এটিকে। কিয়েভ বা বুচায় যে গণহত্যার ঘটনা সামনে এসেছে, তার সঙ্গে হিটলারের হত্যালীলার তুলনা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Conflict: ‘ইউক্রেন জিততেই পারে…’ পেন্টাগনের বয়ানে কি লুকিয়ে যুদ্ধ বাড়ার ইঙ্গিত?
আরও পড়ুন: Sri Lanka Crisis: নেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি, অমিল ওষুধও! অনাহার এড়াতে লঙ্কার ভরসা ভারতই