ওয়াশিংটন: যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। তা সত্ত্বেও এখনও হাজার হাজার মানুষ দুঃস্বপ্নের রাত কাটাচ্ছেন আফগানিস্তানের (Afghanistan) মাটিতে। চারপাশে সশস্ত্র তালিবানিদের (Taliban) নজরদারির মাঝে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না অনেকের ক্ষেত্রেই। অনেকেরই পরিবার পরিজন রয়েছে দেশে, ফেরার আশায় দিন গুনছেন তাঁরা এমনই অবস্থায় এক মার্কিন মহিলা ঝুঁকি নিয়েই একটি অডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন আমেরিকায়। তিনি চোখের সামনে দেখেছেন বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার সময় এমন ব্যক্তিকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের সামনে মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আপাতত আফগানদের সঙ্গে মিশে লুকিয়ে আছেন তিনি। তবে ভুগছেন আতঙ্কে। তাই দ্রুত তঁকে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার এক জন প্রতিনিধি ক্যারল মিলার সেই অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ করেছেন। যদিও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ওই মহিলার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে প্রবল কান্নায় গলা বুজে আসছে তাঁর।
We just received this audio from an incredibly brave American in Kabul. She was attacked each time she tried to reach the airport. Despite the danger to herself, she wants us to share this. We must guarantee the safety of Americans and our allies before it is too late. pic.twitter.com/Oq6R7YuWuJ
— Rep. Carol Miller (@RepCarolMiller) August 21, 2021
ওই মহিলা জানিয়েছেন তিনি বর্তমানে যে জায়গায় রয়েছেন সেখান থেকে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে যেতে হলে মোট ২০ টি চেকপয়েন্ট পার করতে হবে, যে চেকপয়েন্টগুলিতে রয়েছে তালিবান। ওই মহিলা একাধিবার বিমানবন্দরে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। একবার তাঁর চোখের সামনে এক ব্যক্তির মৃত্যও দেখেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি আফগান পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছেন, কিন্তু সেটাও কতদিন সম্ভব হবে, তা বুঝতে পারছেন না। তাঁর দাবি, দরজায় দরজায় ঘুরে তালিবরা দেখছে ন্যাটো বাহিনীকে কারা সাহায্য করেছে। তাই কতদিন লুকিয়ে থাকা সম্ভব হবে, তা বুঝতে পারছেন না তিনি।
অডিও ক্লিপে ওই মহিলা বলেছেন, ‘যখনই বাইরে গাড়ির শব্দ পাচ্ছি, মনে হচ্ছে ওরা এসে আমাদের মেরে ফেলবে। আমি জানি না আর কোনোদিন আমার সন্তানকে দেখতে পাব কি না।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন যাতে তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর কথায়, তালিবানের হাতে প্রাণ দেওয়ার থেকে নিজেকে শেষ করে দেওয়াও ভালো।
ওই মহিলার স্বামী বর্তমানে তাঁর সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন আমেরিকায়। তিনি আতঙ্কে আছেন, তালিবান হয়ত নেট যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে, আর হয়ত যোগাযোগ করাও সম্ভাব হবে না স্ত্রী’র সঙ্গে। ওই মহিলার ভাই একসময় আফগানিস্তানে মিলিটারি ট্রান্সলেটরের কাজ করতেন। তিনি বর্তমানে ইউকে-তে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর দুই প্রাক্তন সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাই আতঙ্কে আছেন তাঁরা।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্বস্ত করেছেন যে প্রত্যেক আমেরিকানকে উদ্ধার না করা অবধি আফগানিস্তানে থাকবে মার্কিন সেনা, তবুও বিমানবন্দরে যাওয়াটাই কঠিক হয়ে উঠেছে আটকে থাকা মানুষজনের পক্ষে। তাই মার্কিন দূতাবাসের তরফে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমেরিকার কোনও সরকারি প্রতিনিধির থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কেউ যেন কাবুল বিমানবন্দরের দিকে না যায়। আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১৫০০০ আমেরিকান রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আরও পড়ুন: মা’কে হারিয়ে কান্না থামে না কিছুতেই, ২ মাসের শিশুকে তবু কিছুটা উষ্ণতা দিল তুর্কি সেনা