পঞ্জশীর: গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুইজন। হাতে মোটা টাকার বান্ডিল। পরপর লাইন গিয়ে আসছেন একেকজন, তাদের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে টাকা। এমনই চিত্র দেখা গেল পঞ্জশীরে। প্রতিরোধ বাহিনীর যে সমস্ত সদস্যই আত্মসমর্পণ করেছেন তালিবান বাহিনীর কাছে, তাদেরই টাকা দিচ্ছে তালিবানরা। এমনই একটি ভিডিয়ো ভাইলরাল হয়েছে।
গত ১৫ অগস্ট কাবুল দখল নিতেই গোটা আফগানিস্তানই তালিবানের দখলে চলে যায়। তবে মাথা নোয়ায়নি পঞ্জশীরের প্রতিরোধ বাহিনী। গোটা বিশ্বেরই নজর ছিল পঞ্জশীরের দিকে। আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ বাহিনী কতদিন তালিবানকে রুখতে পারে এবং আফগানিস্তানকে তালিবানমুক্ত করতে পারে কিনা, তা জানতেই আগ্রহী ছিলেন গোটা বিশ্ববাসী। তবে গতকালই থেমে যায় সেই প্রতিরোধ। তালিবান দখল করে নেয় পঞ্জশীর।
তালিবানের তরফে বিগত কয়েকদিন ধরেই একাধিকবার দাবি করা হয়েছিল যে, তারা পঞ্জশীরের দখল নিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই প্রতিরোধ বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল যে, আত্মসমর্পণের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রয়েছে। সোমবার তালিব বাহিনী পঞ্জশীরের রাজধানীতে প্রবেশ করে এবং গভর্নর হাউসে তালিবানি পতাকা উত্তোলন করে নিজেদের জয় ঘোষণা করে। জানানো হয়, প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা আহমেদ মাসুদ ও প্রক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহকে আটক করা হয়েছে। যদিও মাসুদের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তিনি সুরক্ষিতই রয়েছেন। অন্যদিকে, আমিরুল্লাহ সালেহের কোনও খোঁজ মিলছে না।
এই পরিস্থিতিতেই দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্য। তালিবানের হাত থেকে বেশ কয়েকজনকে টাকা নিতে দেখা যায়। তালিবান সূত্রে দাবি, তারা প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্য। তালিব বাহিনীর কাছে তারা নতিস্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছে। সেই কারণেই প্রতিদান হিসাবে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রতিরোধ বাহিনীর তরফে এই বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
VIDEO showing TB militants distributing money among Panjshiri militiamen who surrendered. #Afghanistan #Panjshir pic.twitter.com/0r8zxhhfbL
— FJ (@Natsecjeff) September 6, 2021
একদিকে, তালিবানের তরফে যেমন গতকাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছিল, পঞ্জশীর দেখে যেন শিক্ষা নেওয়া হয়। উল্টোদিকেই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, হার মানতে নারাজ প্রতিরোধ বাহিনী। তারা আপাতত পঞ্জশীরের পার্বত্য উপত্যকাগুলিতে লুকিয়ে রয়েছে, সময় বুঝেই তারা ফের তালিবানের উপরে হামলা চালিয়ে পঞ্জশীরকে মুক্ত করবে।
সোমবার কাবুলে সাংবাদিক বৈঠক করে তালিবান মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “অবশেষে যুদ্ধ শেষ হল। আশা করছি এ বার শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান গঠন করতে পারব আমরা। যারা হাতে অস্ত্র তুলে নেবে, তারা সাধারণ মানুষ ও দেশের শত্রু বলেই বিবেচিত হবে।”
তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করলে তার ফল যে ভাল হবে না, তা স্পষ্টভাবে বোঝাতে জাবিদুল্লাহ বলেন, “যারা কাবুল ছেড়ে পালিয়েছিল, তারা ভেবেছিল তালিবানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে। আশা করছি এ বার শান্তি বজায় থাকবে। যারাই সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করে, তাদের একইভাবে সামলানো হবে, যেভাবে পঞ্জশীরকে সামলানো হল।”
যারা প্রতিরোধ বাহিনীর হয়ে লড়াই চালাচ্ছিল এতদিন, তাদের খোঁজ করছে তালিবান, এমনটাই জানান তালিব মুখপাত্র। তিনি বলেন, “দেশের পলাতক শত্রুদের শেষ লুকনোর জায়গাও বর্তমানে আমাদের দখলে। যারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল, তাদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এখনও আমরা ক্ষমা করে দিতে পারি।” আরও পড়ুন: প্রথমদিনেই ফাঁকা ক্লাসরুম, হিজাব-নিকাবের আড়ালে ছাত্রীরা, তালিবানি ফতেয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম বিশ্ববিদ্যালয়!