কোপেনহেগেন: দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করার পর ২০২১ সালের শেষভাগেই আশা করা হয়েছিল করোনা (COVID-19) থেকে মুক্তির। কিন্তু নভেম্বর মাসেই নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের (Omicron) দাপটে, সেই আশা ভেস্তে যায়। তবে নিরাশা নয়, উর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও আশার আলোই দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)। হু-র মতে, ওমিক্রন ভ্যা ৃরিয়েন্ট এসে করোনা মহামারিকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এবং ইউরোপে এর উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ “শেষের শুরু”র ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ ও তা ঘিরে তৈরি বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপের ডিরেক্টর রবিবার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলাকে ভাল ইঙ্গিত বলেই দাবি করলেন। সংবাদসংস্থা এএফপি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে হ্যান্স ক্লুগ বলেন, “এটা সত্যিই সম্ভব যে ইউরোপ হয়তো মহামারির শেষের শুরুর একটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।”
ক্লুগের দাবি, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ওমিক্রন ইউরোপের ৬০ শতাংশ জনগণকেই সংক্রমিত করবে। বর্তমান ওমিক্রন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাস বিশ্বজুড়ে সমস্ত মানুষেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে। সে টিকাকরণের কারণেই হোক বা করোনা সংক্রমিত হওয়ার কারণে। এছাড়াও সংক্রমণের গতি কিছুটা ধীর হওয়ায় স্বস্তি মিলতে পারে। হয়তো বছরের শেষভাগে ফের করোনা সংক্রমণ ফিরে আসতে পারে, তবে এর অর্থ এই নয় যে মহামারিও ফিরে আসবে।”
আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফস্যিও রবিবার একই মত পেশ করেন। তিনি এবিসি নিউজ টক শো-এ জানান, আমেরিকার বেশ কিছু অংশে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি ভাল রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এখনই করোনাকে যাতে হালকাভাবে না নেওয়া হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “যেভাবে আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে সংক্রমণ কমছে, আশা করা যায় শীঘ্রই গোটা দেশেই একই চিত্র দেখা যাবে। তবে এখনই অসতর্ক হলে চলবে না। আপাতত সাবধানতা অবলম্বন করেই চলতে হবে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার ডিরেক্টরও জানান, ওমিক্রনের দাপটে সংক্রমণের যে চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, তা সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছনোর পর, গত সপ্তাহ থেকে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। শুধু সংক্রমণই নয়, মৃত্যু হারও কমছে একইসঙ্গে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার থেকে অধিক সংক্রামক হলেও, তা গুরুতর আকার ধারণ করছে না টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে করোনা থেকে মুক্তির যে আশা করা হচ্ছিল, তা অবশেষে পূরণ হতে পারে এবং করোনা সাধারণ ফ্লুতে পরিণত হতে পারে বলেই জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানী-গবেষকরা। তবে ইউরোপের ডিরেক্টর ক্লুগ এখনই এই পর্যায়কে করোনার শেষের শুরু মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “এটি এন্ডেমিক বা সংক্রমণের শেষের শুরু কিনা, তা নিয়ে এখনও অনেক আলোচনা বাকি। তবে আগামিদিনে এটি হতেই পারে। এই ভাইরাস যতটা আশা করা হয়েছিল, তার থেকেও বেশি আশ্চর্য করেছে আমাদের, তাই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতেই হবে।”