রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সিবিআইয়ের তদন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী: সুপ্রিম কোর্ট

TV9 বাংলা ডিজিটাল: রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (Central Beuro of Investigation) -এর ‘অবাধ বিচরণ’ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পক্ষে যে শুভ নয়, আরও একবার মনে করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এই সুপ্রিম কোর্টই সিবিআইকে ‘তোতাপাখি’ বলে বুঝিয়ে দিয়েছিল, কেন্দ্রের শাসক দলের শিখলে কতটা পরাধীন তদন্তকারী দল। এদিন দিল্লি স্পেশাল পুলিস এস্টাব্লিশমেন্ট সংক্রান্ত একটি […]

রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সিবিআইয়ের তদন্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী: সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 7:32 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (Central Beuro of Investigation) -এর ‘অবাধ বিচরণ’ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পক্ষে যে শুভ নয়, আরও একবার মনে করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এই সুপ্রিম কোর্টই সিবিআইকে ‘তোতাপাখি’ বলে বুঝিয়ে দিয়েছিল, কেন্দ্রের শাসক দলের শিখলে কতটা পরাধীন তদন্তকারী দল। এদিন দিল্লি স্পেশাল পুলিস এস্টাব্লিশমেন্ট সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সরকারের (State Government) অনুমতি না নিয়ে সিবিআই তার এক্তিয়ারের সীমা লঙ্ঘন করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় তা পরিপন্থী।

ইতিমধ্যেই দেশের আটটি রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তের সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, কেরল, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব ও মিজোরাম। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সবকটি অবিজেপি রাজ্য। দিল্লি স্পেশাল পুলিস এস্টাব্লিশমেন্ট (DSPE)-এর নিয়ম উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এএম খানউইলকর এবং বিআর গাভাই জানান, ‘আইন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া কেন্দ্র কোনও ভাবেই সিবিআই-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি করতে পারবে না। এই আইনটি সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’ আদালতের তরফে আরও বলা হয়, ‘যদিও ডিএসপিই-র ৫ নম্বর ধারা কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষমতা দেয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্যে অধিকার বিস্তার করার। কিন্তু একই নিয়মের ৬ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া সেটা কোনও ভাবেই অনুমোদিত নয়। স্পষ্টতই, নিয়মগুলি সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়েছে।’

২০১১ সালে উত্তর প্রদেশ সরকারের দুই অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সিবিআই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু দুই অভিযুক্ত রামজি সিং ও যোগেন্দ্র নাথ পান্ডের দাবি ছিল, DSPE-র ৬ নং ধারার নিয়ম মেনে রাজ্য সরকারের কাছে থেকে সম্মতি নেয়নি সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে তারা এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। কেননা সেই সময় তদন্তের প্রয়োজনে রাজ্যের থেকে সাধারণ সম্মতি নেওয়া ছিল আদালতের। প্রাথমিকভাবে এফআইআরে ওই দুই অফিসারের নাম না থাকলেও চার্জশিটে ছিল। মাঝে তদন্ত স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৮ সালে ওই দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ‘খোলা হাতে’ তদন্ত করার জন্য DSPE-র ৬ নং ধারার নিয়ম মেনে অনুমতি বের করে নেয় সিবিআই।

২০১৯ সালে দুর্নীতি মামলার তদন্তে সিবিআই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন ওই দুই আধিকারিক। সেই মামলার শুনানিতে এদিন আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে জানায়, দুই অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য রাজ্যের পর্যাপ্ত সম্মতি ছিল সিবিআইয়ের কাছে। রাজ্য সরকার সিবিআই-কে যে সাধারণ সম্মতি দিয়ে রেখেছিল, সেটাই যথেষ্ট৷ তদন্ত চলতে পারে। তবে এই শুনানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে যাতে এই সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে ‘প্রতিহিংসার’ প্রশ্ন বিরোধীরা না তুলতে পারে, সেই বন্দোবস্তও করে দিল আদালত।

আরও পড়ুন: কুণাল কামরার টুইট মোছা হল না কেন? ফের সংসদীয় কমিটির তোপের মুখে টুইটার কর্তৃপক্ষ

আসলে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই বিরোধী রাজ্যগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করছে তারা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসভবনে আচমকা সিবিআই হানা, ও তারপর মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়াই চ্যানেলে ধর্নার স্মৃতি এখনও টাটকা রাজ্যবাসীর মনে। সেই থেকেই সিবিআই বনাম রাজ্যের বিরোধ তুঙ্গে। বাকি বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলিও তারপর থেকেই আরও বেশি করে মুখ খুলতে শুরু করে সিবিআই-ইডি’র মত সংস্থার আচমকা হানা ও কাজ করার পদ্ধতির বিরুদ্ধে। সিবিআই-এর ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’-এর মত হানা কেন্দ্রের ‘রাজনৈতিক ঈর্ষা’র নমুনা বলেই দাবি করতেন বিরোধীরা।

এই অবস্থায় আদালতের আজকের পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলির জন্য বড় ইঙ্গিতবহ বার্তা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিবিআই-এর মত সংস্থার ক্ষমতার যাতে ‘অপব্যবহার’ না করা হয়, পরোক্ষে সেই বার্তা যেমন দিল্লিকে দেওয়া গিয়েছে। তেমনই বিরোধীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রের তদন্ত অনুমতিসাপেক্ষ হলেও দুর্নীতির ঘটনা যে বরদাস্ত করা হবে না।