Explained on Middle Class & Income Tax: নির্মলার বাজেট বদলে দিল সংজ্ঞা! মধ্যবিত্তকে কীভাবে মাপছে সরকার?
Union Budget 2025 Announcement: ২০২২ সালে PRICE -র সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্য়ার ৩১ শতাংশই মধ্যবিত্ত। অর্থাৎ প্রায় ৪৩.২ কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের গণ্ডিতে পড়েন। ২০৪৬-৪৭ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১০০ কোটি পেরিয়ে যেতে পারে। তখন দেশের ৬১ শতাংশ জনগণই মধ্যবিত্তের গণ্ডিতে পড়বেন।

আজ পেশ হল কেন্দ্রীয় বাজেট। তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট বলা চলে এটিকে, কারণ ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন থাকায় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়েছিল। বাজেট ঘোষণার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে এটি সাধারণ মানুষের বাজেট। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য একাধিক ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। আয়করের স্ল্যাবে বিরাট পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। এই ঘোষণায় মধ্যবিত্ত স্বস্তি পেয়েছেন বলেই দাবি অর্থনীতিবিদদের। তবে এই মধ্যবিত্ত কারা? এই উত্তরেরই খোঁজ রইল প্রতিবেদনে।
মধ্যবিত্ত কারা, কত টাকা আয় হলে কোনও ব্যক্তিকে মধ্যবিত্ত বলে গণ্য করা হয়, এর কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় বদলেছে। সেই সঙ্গে বদলেছে মধ্যবিত্তের পরিচয়ও। এবারের বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ ফোকাসে রেখেছে মধ্যবিত্তদের। অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গরিব ও মধ্যবিত্তদের মঙ্গলকামনায় মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মধ্যবিত্তের উচ্চাকাক্ষ্মার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
মধ্যবিত্তের জন্য বাজেট ঘোষণা-
এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না বলে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নতুন আয়কর কাঠামোয় ০ থেকে ৪ লক্ষ টাকায় কোনও কর দিতে হবে না। ৪ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। সেখানেই ২৪ লক্ষ টাকার উপরে যাদের আয়, তাদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে।

আয়করের হিসাব
এবার প্রশ্ন হল, কারা এই মধ্যবিত্ত?
মধ্যবিত্তের বৈশ্বিক যে সংজ্ঞা, তার সঙ্গে ভারতীয় সংজ্ঞা মেলে না। একদিকে যেমন আয়ের ভিত্তিতে মধ্যবিত্ত নির্ধারণ করা হয়, তেমনই আবার ব্যয়ের ক্ষমতার উপরেও নির্ভর করে। আবার শিক্ষা বা পেশার ভিত্তিতে কিংবা আয়করদাতার সংখ্যার ভিত্তিতে মধ্যবিত্ত কারা, তা নির্ধারণ করা হয়।
২০২২ সালে পিপলস রিসার্চ অন ইন্ডিয়া’স কনজিউমার ইকোনমির সমীক্ষা অনুযায়ী, মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যের বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষের মধ্যে হয়। যাদের আয় ১.০৯ লক্ষ টাকা থেকে ৬.৪৬ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাকে মধ্যবিত্ত বলে গণ্য করা হয়।
আবার ন্যাশনাল কাউন্সিল অব অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিক রিসার্চের সমীক্ষা অনুযায়ী যে পরিবারের আয় ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা, তারা মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে পড়েন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্টার ডাফলো ২০০৮ সালে বলেছিলেন, যাদের পার ক্যাপিটা আয় ২ ডলার (১৬০ টাকা) থেকে ১০ ডলারের (৮০০ টাকা) মধ্যে, তারা মধ্যবিত্ত।
এদিকে আবার সরকারের পরিসংখ্যান বলে যে পরিবারের আয় বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকার কম, তারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি।
ভারতের মধ্যবিত্তের সংখ্যা কত?
২০২২ সালে PRICE -র সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্য়ার ৩১ শতাংশই মধ্যবিত্ত। অর্থাৎ প্রায় ৪৩.২ কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের গণ্ডিতে পড়েন। ২০৪৬-৪৭ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১০০ কোটি পেরিয়ে যেতে পারে। তখন দেশের ৬১ শতাংশ জনগণই মধ্যবিত্তের গণ্ডিতে পড়বেন।
আবার মার্কিন একটি সংস্থার সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, কোভিডকালের আগে যেখানে দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৯.৯ কোটি ছিল, তা কোভিড পরবর্তী সময়ে কমে ৬.৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী দেশের মাত্র ৪.৭৮ শতাংশ জনগণই মধ্যবিত্তের শ্রেণিতে পড়ে। বাকিরা অধিকাংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত, যাদের আয় ১৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।
অর্থনীতির কী হবে?
এবারের বাজেটে সমস্ত নজর কেড়েছে মধ্যবিত্তরাই। তবে প্রশ্ন একটা রয়েই যাচ্ছে, শুধু মধ্যবিত্তকে কর ছাড় দিয়ে কী অর্থনীতির উন্নতি হবে? বাজেটে বলা হয়েছে সরকারের আয়ের ঘাটতি কমানো হবে। এবার যেখানে রাজস্বে ঘাটতি রয়েছে ৪.৮ শতাংশ, তা ২০২৬ সালে কমে ৪.৪ শতাংশ করা হবে।
সরকারের ঘাড়ে যদি ঋণের বোঝা কমে, তবে বিনিয়োগ বাড়বে। এটাই সহজ হিসাব বলে। তবে সম্প্রতি ভারতীয় অর্থনীতির গতি কিছুটা হলেও ধীর হয়েছে, যা বাণিজ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে ২০২৬ সালের মার্চে যে অর্থবর্ষ শেষ হবে, তাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬.৩ শতাংশ থেকে ৬.৮ শতাংশ হতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এই পূর্বাভাস দিয়েছিল।
এবার বাজেটের পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের মনিটারি পলিসিতে কোনও পরিবর্তন আনে কি না, তার দিকে বিশেষ নজর থাকবে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই আরবিআই রেপো রেট ৬.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক বৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে।





