Mukeh Ambani ও তাঁর Reliance Jio কীভাবে এক ধাক্কায় এগিয়ে দিল ভারতের Telecom Sector-কে?
Mukesh Ambani, Reliance Jio: শুরুর দিকে প্রায় ৮ মাস ফ্রিতে ইন্টারনেট ও কল সার্ভিস দিয়ে বাজার দখল করে মুকেশ অম্বানির সংস্থা। এ ছাড়াও ভারতীয়দের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাসও বদলে দেয় জিও।

গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নতির গল্প বলতে গেলে সেখানে অবশ্যই আসবে জিওর কথা। কিন্তু কেন? কারণ, ভারতের মতো দেশে যেখানে এক সময় ল্যান্ডফোন নিতে লেগে যেত বছরের পর বছরে সেখানে বর্তমানে সবচেয়ে সস্তায় ইন্টারনেট ও মোবাইলের বাজারে পরিণত হয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র। মাত্র ১৫ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে দেশের টেলিকম সেক্টরে বিরাট এক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকে আমাদের দেশ। আর এই পরিবর্তনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন মুকেশ অম্বানি ও তাঁর টেলিকম সংস্থা জিও।
স্বাধীনতা উত্তর ভারতে টেলিকম সেক্টরে মনোপলি চলত সরকারের। আর সেই কারণেই ল্যান্ডলাইন পাওয়ার ছিল বেশ সময় সাপেক্ষ একটা ব্যাপার। বছরের পর বছর অপেক্ষার পর অবশেষে পাওয়া যেত ল্যান্ডলাইনের কানেকশন। এই অবস্থা চলেছিল প্রায় ২০০০ সাল পর্যন্ত। যদিও, গ্রামীণ ভারত ল্যান্ডফোন পেনিট্রেশন সেভাবে প্রত্যক্ষ করেনি। যতটা করেছে ভারতের শহরাঞ্চল ও শহরতলি। ১৯৯৪ সালের ন্যাশনাল টেলিকম পলিসি আসার পর কিছুটা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়। তখন ভারতের বাজারে একাধিক প্রাইভেট মোবাইল অপারেটর প্রবেশ করার পথ প্রশস্ত করে ভারত সরকার।
১৯৯৫ সালের ৩১ জুলাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী সুখ রাম প্রথমবারের জন্য মোবাইল ব্যবহার করে ফোন করেন। তিনি দিল্লি থেকে ফোন করেন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে। যদিও সেই সময়ের মোবাইল হ্যান্ডসেট ছিল অনেক ভারী। এ ছাড়াও প্রতি মিনিট ফোন করার খরচও ছিল সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। মিনিটে ১৬ টাকা খরচ হত সেই সময় এক মিনিট ফোন করার জন্য। এই পরিমাণ টাকা ঠিক কতটা আজকের দিনে, সেটা একটা তুলনা টানলেই বোঝা যাবে। ১৯৯৫ সালে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৪ হাজার ৬০০ টাকার আশেপাশে। আর বর্তমানে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার টাকা।
১৯৯৯ সালে নতুন টেলিকম পলিসি আসার পর থেকে বাড়তে থাকে ভারতের টেলিকম সেক্টরে প্রতিযোগিতা। কমতে থাকে কল চার্জ। মোবাইল ফোন বিলাসবহুল পণ্য থেকে প্রয়োজনীয়তায় পরিণত হয়। এর পর মোবাইল হ্যান্ড সেটের উন্নতি দেখে গোটা পৃথিবী। ১৯৯৭ সালে প্রথম রঙিন স্ক্রিনযুক্ত ফোন আসে বাজারে। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্ব বাজারে আসতে থাকে বিভিন্ন স্মার্টফোন। যেখানে ইমেল, মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মতো একাধিক ফিচার থাকত। এরপর ২০০৭ সালে আসে প্রথম আইফোন। ২০০৮ সালে Sony Ericsson সংস্থা তাচ স্মার্টফোন নিয়ে আসে যা Xperia X1 নামে পরিচিত হয়। আর এই ঢেউয়ের ধাক্কা এসে লাগে ভারতের বাজারেও।
২০১৬ সালে এর পরবর্তী ধাক্কা খায় ভারতের টেলিকম মার্কেট। ধাক্কা আসে মুকেশ অম্বানির জিওর তরফ থেকে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশজুড়ে ৪জি পরিষেবা চালু করে। দ্রুত পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জিও রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাউন্ড ও রুফটপ টাওয়ার ব্যবহার করে। আর এর জন্য আরকমের সঙ্গে জিওর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার একটি চুক্তি হয়। এ ছাড়াও আরকমের অপটিক্যাল ফাইবার পরিকাঠামোও ব্যবহার করে জিও।
শুরুর দিকে প্রায় ৮ মাস ফ্রিতে ইন্টারনেট ও কল সার্ভিস দিয়ে বাজার দখল করে মুকেশ অম্বানির সংস্থা। এ ছাড়াও ভারতীয়দের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাসও বদলে দেয় জিও। কারণ, এর আগে ভোডাফোনের মাসিক ৩ জিবি ডেটা প্যাকের দাম ছিল প্রায় ৬৫০ টাকা। এয়ারটেল, আইডিয়া, এয়ারসেল সব সংস্থার ৩জি ইন্টারনেট প্যাকের দাম ছিল এর আশেপাশে। যদিও ২জি ইন্টারনেট পরিষেবার খরচ ছিল তুলনায় কম। ফলে মানুষ খুব দ্রুত তাদের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর বদলে করে জিওতে চলে আসে। পরবর্তীতে জিওর কারণেই সমস্ত সার্ভিস প্রোভাইডর তাদের ইন্টারনেটের খরচ কমিয়ে দেয় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত।
এই জিও এফেক্ট আজকের ভারতের একদম কোণায় কোণায় যে ঢুকে গিয়েছে তা বলাই যায়। জিওর কারণে যে ইন্টারনেট বিপ্লব এসেছিল, তা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ই-কমার্স, ফিনটেক, ওটিটি থেকে অনলাইন এডুকেশনকেও। ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট বলছে ভারতের ইন্টারনেটের খরচ কমে যাওয়ায় বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাঁচিয়ে ফেলছেন দেশের মানুষ।
