Indian Ocean: ভারত মহাসাগরে ‘কোবাল্ট যুদ্ধ’! চিন সমর্থিত শ্রীলঙ্কাকে চ্যালেঞ্জ ভারতের
Cobalt Mining In Indian Ocean: ভারত মহাসাগরে ক্রমে মাথাচাড়া দিচ্ছে আরও এক যুদ্ধ। যার কেন্দ্রে আছে এক মহামূল্যবান ধাতু, কোবাল্ট। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কোবাল্ট। ভারতের জন্য তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কলম্বো: ভারত মহাসাগরে ক্রমে মাথাচাড়া দিচ্ছে আরও এক যুদ্ধ। যার কেন্দ্রে আছে এক মহামূল্যবান ধাতু, কোবাল্ট। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কোবাল্ট। ভারতের জন্য তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ শূন্য করার লক্ষ্য নিয়েছে নয়া দিল্লি। ভারত মহাসাগরের নীচে কোবাল্টের অভাব নেই। কিন্তু, এখানে ক্রমে আনাগোনা বাড়ছে চিনের। এই অবস্থায়, ভারত মহাসাগরে কোবাল্টের খোঁজ করার অনুমতি চেয়েছে ভারত। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কাও ভারত মহাসাগরে তাদের কন্টিনেন্টাল শেলফের সম্প্রসারণ চেয়েছে। তাদেরও লক্ষ্য কোবাল্ট পর্বতের অধিকার পাওয়া। মনে করা হচ্ছে তাদের এই পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে চিন। এর ফলে, শিগগিরই ভারত মহাসাগর জুড়ে কোবাল্ট যুদ্ধ দেখা দিতে পারে।
বস্তুত, কোবাল্ট সাপ্লাই চেইনে এখন আধিপত্য রয়েছে চিনেরই। গত কয়েক বছর ধরে, ভারত মহাসাগরে ক্রমে বাড়ছে চিনা সমীক্ষা জাহাজগুলির আনাগোনা। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও, ইন্দোনেশিয়ার জলসীমা অতিক্রম করে ভারত মহাসাগর প্রবেশ করেছে চিনা সমীক্ষা জাহাজ, ইউয়ান ওয়াং। এই অবস্থায়, গত জানুয়ারি মাসেই জামাইকা ভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি’র কাছে, মধ্য ভারত মহাসাগরের ‘আফানাসি নিকিটিন সিমাউন্টে’ কোবল্ট-সমৃদ্ধ ‘ফেরোম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট’ সন্ধানের অনুমোদন চেয়েছে ভারত। এই সমুদ্র পাহাড়টি ভারতীয় উপকূল থেকে প্রায় ১,৩৫০ মাইল দূরে, মলদ্বীপের পূর্বে অবস্থিত।
ভারত বলেছে, এই অঞ্চলে একটি বিস্তৃত ভূ-ভৌতিক, ভূতাত্ত্বিক, জৈবিক, সমুদ্রবিজ্ঞানগত এবং পরিবেশগত অধ্যয়ন করে ফেরোম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট খুঁজতে চায়। ১৫ বছরের এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি বা আইএসএ’কে। তিনটি ধাপে এই অনুসন্ধান সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে, ভারতের আবেদন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি আইএসএ। তারা জানিয়েছে, আফানাসি নিকিতিন সিমাউন্টটি এমন এক এলাকায় অবস্থিত, যে জয়গাটি নিয়ে অন্য দেশেরও দাবি রয়েছে। আইএসএ কোনও দেশের নাম করেনি। তবে, বিশ্লেষকদের মতে, সেই দেশটি হল শ্রীলঙ্কা।
কারণ, একই সংস্থার কাছে শ্রীলঙ্কা তার মহাদেশীয় শেলফের সীমা ২০০ নটিক্যাল মাইলের থেকে বাড়ানোর আবেদন করেছে। সমুদ্রের তলদেশে কোনও দেশের স্থলভাগের শেষ প্রান্তটিকে বলা হয়, সেই দেশের মহাদেশীয় শেলফ। রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন অনুসারে, উপকূল থেকে সমুদ্রে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকাকে ওই দেশের একচেটিয়া অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক নৌচলাচলকে বাধা না দিয়ে ওই এলাকাটিকে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারে সেই দেশ। তবে, কন্টিনেন্টাল শেল্ফের সীমা ২০০ নটিক্যাল মাইলের বেশি করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিশন অন দ্য লিমিটস অফ দ্য কন্টিনেন্টাল শেল্ফ-এর কাছে আবেদন করতে পারে।
২০১০ সালে, যখন শ্রীলঙ্কা এই দাবির জানিয়েছিল, ভারত কোনও আপত্তি করেনি। কিন্তু, ২০২২ সালে ভারত জানায়, শ্রীলঙ্কার দাবিতে কন্টিনেন্টাল শেলফের অংশগুলির উপর ভারতের অধিকার খর্ব হবে। শ্রীলঙ্কার দাবিকে বিবেচনা না করার অনুরোধ করেছিল নয়া দিল্লি। আসলে, শ্রীলঙ্কার এই দাবির পিছনে চিন আছে বলে মনে করা হচ্ছে। হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা নেওয়ার পর থেকেই শ্রীলঙ্কাকে চাপে রেখেছে বেজিং। চিনের সেই চাপকে শ্রীলঙ্কা কতটা প্রতিহত করতে পারবে, সেই বিষয়ে সন্দিহান নয়া দিল্লি।