
মনে করা হয় এসআইপি বা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান হল বিনিয়োগের সেরা পদ্ধতি। কোনও মিউচুয়াল ফান্ড সবসময় এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ বাজারের ওঠাপড়ার মধ্যেও সুরক্ষিত থাকে।
বাজার সবসময় ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যায়। ফলে বাজারকে টাইম করতে যাওয়া এক কথায় ‘বোকামি ও নির্বুদ্ধিতা’ বলেছেন স্বয়ং ওয়ারেন বাফেট। কিন্তু এসআইপি এই ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কেট টাইম করার বদলে এসআইপিতে কম্পাউন্ডিংয়ের একটা বিরাট সুবিধা পাওয়া যায়। আর সেই কারণেই বলা হয়ে থাকে এসআইপি হল বিনিয়োগের সর্বোত্তম পদ্ধতি। “বাজারকে টাইমিং করার বদলে বাজারে সময় দেওয়া সব সময় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি রিটার্ন নিয়ে আসে”, মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েক বছরে ঘরোয়া বিনিয়োগের কারণে ভারতের শেয়ার বাজার একটা দারুণ র্যালি দেখিয়েছে। এ ছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ডে খুচরো বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত বিনিয়োগ এই বিষয়ে একটা অনুঘটকের কাজ করেছে। কিন্তু নভেম্বর পরবর্তী সময়ে শেষ ১০ দিনে ঘরোয়া ও বৈশ্বিক কারণে ভারতের বাজার একটানা পতন দেখেছে।
আর ক্রমাগত ডলারের তুলনায় টাকার দরের পতন হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে তাদের একের পর এক বিনিয়োগ বিক্রি করে দিয়েছে। আর এই সব কারণেই ধীরে ধীরে একের পর এক এসআইপিতে রিটার্ন ক্রমশ কমছে। অনেক ক্ষেত্রে তা নেগেটিভ রিটার্নে পরিণত হয়েছে। আর তার ফলেও আতঙ্ক বাড়ছে খুচরো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কারণ, ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগের সবচেয়ে সহজ, কার্যকরী ও নিরাপদ মাধ্যম এসআইপিও নেগেটিভে রিটার্ন দিচ্ছে।
কিন্তু এমন অবস্থা আসলে কী সংকেত দিচ্ছে? বিনিয়োগকারীদের কি এসআইপি বন্ধ করে দিয়ে সব টাকা তুলে নেওয়া উচিৎ? নাকি বিনিয়োগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ?
নিজের বিনিয়োগে নেগেটিভ রিটার্ন দেখতে কখনোই ভাল লাগে না বিনিয়োগকারীদের। ফলে এখন বাজারের এই অবস্থাতেও খুব একটা আনন্দে নেই তারা। কিন্তু যে সব বিনিয়োগকারীরা অনেক দিন ধরেই বিনিয়োগ করছেন তাঁদের কাছে বাজারের এই উত্থান বা পতন খুবই গা সওয়া একটা বিষয়। কিন্তু যাঁরা করোনার পর বাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন তাঁরা এতদিন তাঁদের বিনিয়োগে একটা বিরাট রিটার্ন দেখেছেন। এমন অবস্থা আগে তাঁরা কখনও দেখেননি ফলে এই অবস্থায় কী করণীয় তাঁরা তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেক ক্ষেত্রে।
মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা বা এএমসি এডলোয়েসিসের একটা রিপোর্ট বলছে, “বর্তমানে গত একবছর ধরে করা সব এসআইপিতেই রিটার্ন যখন নেগেটিভ তখন যে সব এসআইপি অনেক বেশি সময় ধরে রয়েছে, সেগুলোয় রিটার্ন এখনও পজিটিভ রয়েছে”।
এটিকা ওয়েলথ অ্যাডভাইসরের ডিরেক্টর নিখিল কোঠারি বলেন, “এটাই এসআইপি চালিয়ে যাওয়ার সেরা সময়। বাজার আরও পড়লে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ”।
প্ল্যানরুপি ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা অমল জোশি বলছেন, “গত ৬ মাসের রিটার্ন নেগেটিভ হয়ে গেলেও সামগ্রিক চিত্রটা অন্যরকম। দ্রুত সম্পত্তি তৈরি করার জন্য এসআইপিকে ব্যবহার না করে লম্বা সময় ধরে বিনিয়োগের জন্যই এসআইপিকে ব্যবহার করা উচিৎ”।
কোনও বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও অ্যানালিসিস করুন। এই লেখা শুধুমাত্র শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।