পানাজি: দুই মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্কের কথা জাতীয় রাজনীতিতে সুবিদিত। একজন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আরেকজন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সেই সম্পর্কেই কি এবার ফাটল ধরেছে? গোয়াতে কেজরীবালের মন্তব্য নতুন করে জল্পনার জন্ম দিল। বুধবার, গোয়াতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আম আদমি পার্টি সর্বোচ্চ নেতা কেজরীবাল। সেখানেই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রতিযোগিতাতেই নেই। মমতা-কেজরীবাল সম্পর্কে দূরত্বের জল্পনা মমতার সাম্প্রতিক দিল্লি সফর থেকেই দানা বেঁধেছিল। দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করলেও কেজরীবালের সঙ্গে দেখা করেননি মমতা। আজ, কেজরীবালের এই মন্তব্য নতুন করে জল্পনা তৈরি করল বলেই মনে করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কেজরীবাল বলেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কাছে গোয়ার এক শতাংশও ভোট নেই। সবে তিনমাস আগে গোয়াতে পা রেখেছে তৃণমূল। গণতন্ত্র এই ভাবে চলে না। গণতন্ত্রে মানুষের জন্য কাজ করতে হয় পরিশ্রম করতে হয়। এমনি এমনি কোনও কিছু হয় না। আপনাদের চোখে তৃণমূল অনেক ওপরে থাকতে পারে কিন্তু আমি মনে করি, গোয়াতে তৃণমূল প্রতিযোগিতাতেও নেই।” এই মন্তব্যের পাশাপাশি গোয়াবাসীর মন জয়ে কর্মসংস্থান, বেকার ভাতা, জল, বিদ্যুত পরিষেবা দেওয়ার সঙ্গে দুর্নীতি মুক্ত সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন কেজরি। তিনি বলেন, “কংগ্রেস বিজেপি সব দল মিলে গোয়াকে লুঠ করেছে। গোয়ার বার্ষিক বাজেট ২২ হাজার কোটি টাকা, সেই সব টাকা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের পকেটে গিয়েছে। আম আদমি পার্টি যদি সরকারে আসে আপনারা দেখবেন একমাসের মধ্যে পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করেছে।”
গোয়াকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই দু’বার গোয়া ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়াতে এই বড়দিন-নতুন বছরের মরশুমে সব থেকে বেশি পর্যটন থাকে, এবং এখানে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বড়দিন পালিত হয়। সূত্রের খবর, ২৬ থেকে ২৮ ডিসেম্বর গোয়াতে থাকবেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়ার বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন মানুষ এই সময়ে গোয়াতে আসেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, গোয়ার সবথেকে বড় উৎসবে সংগঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি জনসংযোগও সেরে ফেলতে চাইছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে গোয়া নিয়ে অভিষেকের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছিল। তিনি বলছিলেন, “তৃণমূল এখন শুধু আর বাংলার রাজনৈতিক দল নয়। তৃণমূল ত্রিপুরাতে ঢুকেছে, গোয়াতে ঢুকেছে, মেঘালয়তে ঢুকেছে। এটা ডিসেম্বর মাস। ফেব্রুয়ারিতে গোয়া বিধানসভা নির্বাচন। এখানে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাক্ষী রেখে বলে যাচ্ছি, গোয়া নির্বাচনে হয় তৃণমূল কংগ্রসে জিতবে, নইলে প্রধান প্রতিপক্ষ হবে, এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।” অভিষেকের এই প্রত্যয়ী মনোভাবের পর কেজরীবালের এই দাবি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গোয়ার রাজনীতি মমতার তৃণমূল ও কেজরীবালের আম আদমি পার্টি নতুন করে অংশগ্রহণ করেছে। গোয়াতে গিয়ে মমতা অভিযোগের সুরে জানিয়েছিলেন, সেখানে তৃণমূলের পোস্টার ছেঁড়া হলেও অন্য একটি নতুন দলের পোস্টার ছেঁড়া হয় না। তৃণমূলের গোয়া শাখাও বিভিন্ন ইস্যুতে কেজরীবালকে কটাক্ষ করেছে। এদনি তার উত্তর তিনি দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে গোয়াকে কেন্দ্র করে মমতা-অরবিন্দ সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবন আরও তীব্র হচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
আরও পড়ুন Parliament Update: বিরোধীদের বিক্ষোভের জের, একদিন আগেই শেষ হতে পারে শীতকালীন অধিবেশন