KMC Election Result 2021: পূর্বাভাস মতোই সবুজ ঝড় শহরে, ভোট শতাংশে পদ্মকে পিছনে ফেলে চমক বামেদের
KMC Election Result 2021: ল্যান্ডস্লাইড জয়। ঝড় বয়ে গিয়েছে আজ কলকাতার উপর দিয়ে। না, আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে কোনও পূর্বাভাস ছিল না। তবে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে বহুদিন আগে থেকেই এই সবুজ ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া ছিল।
কলকাতা: ভোটের প্রচারে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, অন্তত ১৩৫ টি আসনে জিতবে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার কলকাতার পুরভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার পর সেই পূর্বাভাস অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। ১৩৪ টি আসনে ফুটেছে জোড়াফুল। তিন নির্দল প্রার্থী বলছেন, তাঁরাও তৃণমূলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তাহলে, তৃণমূলের মোট শক্তি হবে, ১৩৭। ফের এক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের বোর্ড গঠন করার পথে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবারই ঠিক হয়ে যাবে, কলকাতার মেয়র কে হতে চলেছেন।
অব্যাহত মমতা ম্যাজিক
বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা এসেছে তৃণমূল। সেই সময় অবশ্য মমতাকে নন্দীগ্রামে হারিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরই প্রাক্তন সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তাতে মমতার ক্যারিশ্মায় কোনও নড়চড় হয়নি। বিধানসভা উপনির্বাচনে রেকর্ড জয়। তারপর এবারের পুর লড়াই। কলকাতা বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতা। মঙ্গলবার আবারও তা প্রমাণ হয়ে গেল – অটুট থাকল জোড়াফুলের দাপট। তৃণমূল একাই ১৩৪। সবুজ ঝড়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। বিরোধীদের কেউই সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি রাজনীতিতে। সর্বসাকুল্যে বিজেপি তিনটি আসন। আর বাম, কংগ্রেস দুটি করে আসন।
মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব উত্থান বঙ্গ বিজেপি। সেই থেকেই বঙ্গজয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু দিলীপ ঘোষদের। নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পদ্ম শিবির। কাটায় কাটায় টক্করও দিয়েছিল। শেষ বিধানসভা নির্বাচনে নীলবাড়ির দখল নেওয়ার ভীষণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল বিজেপি। তবে রাজ্য প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছিল গেরুয়া শিবির। তিন জন বিধায়ক থেকে এক লাফে ৭০-এর বেশি বিধায়ক। কিন্তু পুরভোটে সেই জায়গা ধরে রাখতে পারল না বঙ্গ বিজেপি। ১৪৪ টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই অঙ্কের ঘরও স্পর্শ করতে পারল না বিজেপি। মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে তারা। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বহু ওয়ার্ডে। ভোট শতাংশের নিরিখেও বিজেপিকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা।
আগামী পুরভোটের জন্য সতর্ক হবে বিজেপি
আজ বিকেলে বঙ্গ বিজেপির তরফ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে এই পরাজয়ের সাফাই দেওয়া হয়। বলা হয়, কলকাতার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পদ্ম অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই কারণেই কলকাতার ভোটে সেভাবে দাগ কাটা যায়নি বলে মনে করছে বঙ্গ বিজেপি। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কলকাতা ও হাওড়ায় তৃণমূল বেশি শক্তিশালী। আমরা গ্রামাঞ্চলে অনেক বেশি শক্তিশালী কলকাতার থেকে। আপনারা জেলার দিকে গেলে দেখবেন, অনেক জায়গায় আমরা শক্তিশালী। শিলিগুড়ি বা আসানসোল বোর্ড আমরা দখল করব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও একটি বড় অংশ মনে করেন, সাংগঠনিক দিক থেকে কলকাতার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বিজেপির শক্তি অনেকটা বেশি। উত্তরবঙ্গেও পদ্ম অনেকটা শক্তিশালী। কিছুদিন পরেই আবার বাকি পুরভোটগুলি রয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আসানসোল বা শিলিগুড়ির ভোটের জন্য কলকাতার ভোটটা পদ্মশিবিরের জন্য একটি অ্যাসিড টেস্টের মতো ছিল। এই নির্বাচনের ভুলগুলির বিশ্লেষণ করে, তা যাতে আগামী পুরভোটগুলিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার একটা সুযোগ পাচ্ছে বিজেপি শিবির।
বাকি পুরভোটগুলিতে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকছে তৃণমূল
ল্যান্ডস্লাইড জয়। ঝড় বয়ে গিয়েছে আজ কলকাতার উপর দিয়ে। না, আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকে কোনও পূর্বাভাস ছিল না। তবে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে বহুদিন আগে থেকেই এই সবুজ ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া ছিল। ফল ঘোষণার দিন হলও তাই। শুরু থেকেই ঝোড়ো ব্যাটিং তৃণমূলের। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ফের একবার কলকাতা পুরনিগমের বোর্ড গড়তে চলেছে। আর এই জয় নিঃসন্দেহে তৃণমূলকে আগামী দিনে বাকি পুরভোটগুলিতে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। মানসিকভাবেও অনেকটা এগিয়ে থাকবে তৃণমূল। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।
বামেদের ভোট শতাংশ এবং রেড ভলান্টিয়ার
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। চারিদিকে তখন প্রাণবায়ুর হাহাকার। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কালোবাজারি। আর সেই সময়েই ‘দেবদূতে’র মতো শহরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রেড ভলান্টিয়াররা। রাত-বিরেতে করোনায় আক্রান্ত মানুষটার বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হোক, কিংবা কাউকে হাসপাতালে ভরতি করানোর দরকার হোক… প্রতি মুহূর্তে শহরবাসী পাশে পেয়েছে বামেদের স্থানীয় তরুণ মুখগুলোকে। কোনও কট্টর বাম বিরোধীও হয়ত সেই সময় রেড ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সঙ্কোচ বোধ করবেন। আর এবারের পুরভোটে সেই প্রতিফলনও স্পষ্ট। ১১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছে বামেরা। বিগত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেকটাই বেশি।