শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র

শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। চাঁপদানী, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, চন্ডীতলা, জাঙ্গীপাড়া, ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর। সাতটি বিধানসভাই বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। একুশের বিধানসভা ভোটে সবুজ আবির উড়েছে সাত বিধানসভা কেন্দ্রেই। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলেছেন এই লোকসভায়। লোকসভা কেন্দ্রকে তৃণমূল যে একপ্রকার নিজেদের শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে, তা বলায় বাহুল্য। তবে বর্তমানে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনতা-জনার্দনের রায় কোন দিকে যায়, সেদিকেই নজর থাকছে সকলের।

বাম জমানাতেও এই শ্রীরামপুর কেন্দ্রে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খন্দকার।১৯৯৮-৯৯ সালে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন। যদিও ২০০৪ সালের নির্বাচনে সেই লোকসভা বামেরা আবার পুনরুদ্ধার করে। তবে কোনও সময়ই এই কেন্দ্র কারোর একাধিপত্ত ছিল না।

২০০৯ সালের লোকসভা ভোট

২০০৯ সালের লোকসভায় সিপিআইএম এখান থেকে প্রার্থী করেছিল শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে। রাজনীতিতে তথা সমাজে স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল ভোটে দাঁড় করিয়েছিল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লড়াই মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু শান্তশ্রী বাবুকে প্রায় ১,৩৭,০০০ হারিয়ে সাংসদ হন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭২৫ ভোট। শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের ঝুলিতে যায় ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৩৫ ভোট। বিশাল ব্যবধানে সিপিআইএম প্রার্থীকে হারিয়ে সাংসদ হন কল্যাণ। লড়াই ছিল মূলত দ্বিমুখীই। বিজেপি তখন হিসেবেই ছিল না। বিজেপি প্রার্থী দেবব্রত চৌধুরী পেয়েছিলেন ৩৮ হাজারের কিছু বেশি ভোট।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোট

এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কল্যাণকে। ২০১৪ সালে আরও বড় ব্যবধানে জয়। বিরোধীরা কোনও খামতি রাখেনি চেষ্টায়। হেভিওয়েট মুখকে প্রার্থী করা হয়েছিল। বিজেপি প্রার্থী করেছিল সঙ্গীত শিল্পী বাপ্পি লাহিরি। সিপিআইএম প্রার্থী ছিলেন শ্রমিক নেতা তীর্থঙ্কর রায়। কংগ্রেস থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল আব্দুল মান্নান। প্রত্যেকেই অতি পরিচিত মুখ।

কিন্তু এর মধ্যেও ব্যাপক ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে নেন কল্যাণ। ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৩টি ভোট পান তিনি। ১ লক্ষ ৫২ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোট। তারকা প্রার্থীকে নিয়ে এসেও বিশেষ ফায়দা করতে পারেনি বিজেপি। বাপ্পি লাহিরি পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ভোট। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল ৮৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোট

দিল্লিতে ততক্ষণে মোদী ম্যাজিক দেখতে শুরু করে দিয়েছে বঙ্গবাসী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তার অনেকটা প্রভাব পড়েছিল শ্রীরামপুরেও। ভোটে জিতলেও, ব্যবধান অনেকটা কমে আসে কল্যাণের।শ্রীরামপুরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭০৭ ভোট। আগের বারের তুলনায় জয়ের ব্যবধান কমে হয় ৯৮ হাজার ৫৩৬। বিজেপির দেবজিৎ সরকার পান ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৭১ ভোট। সিপিআইএম এর তীর্থঙ্কর রায় পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৫২ হাজার ২৮১ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী দেবব্রত বিশ্বাস পেয়েছিলেন সাড়ে ৩২ হাজার ভোট।

এবার সামনে আরও একটি লোকসভা নির্বাচন। বিরোধীদের হাতে গুচ্ছগুচ্ছ ইস্যু। শাসক শিবির অবশ্য নিজেদের দুর্ভেদ্য দুর্গের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এবারের ভোটের লড়াই মূলত দ্বিমুখী। তৃণমূল ও বিজেপি। এখন দেখার আগামী লোকসভা ভোটে মানুষের রায়ে কোন ফুল ফোটে শ্রীরামপুরে। নাকি দুই ফুল সাফ করে আবার আগের জায়গায় ফিরবে কাস্তে হাতুড়ি তারা।