ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে বদলাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। গতকাল যোগী সরকারের ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শ্রম মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য। গতকাল ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বামী প্রসাদ। বিজেপি ছাড়ার ঘোষণা করতেই বুধবার প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জারি করা হল গ্রেফতারি পরোয়ানা। ৭ বছরের পুরোনো একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে স্বামী প্রসাদের নামে। ২০১৪ সালে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জেরে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা। মৌর্যকে সুলতানপুরের একটি এমপি-এমএলএ আদালতে ২৪ জানুয়ারির আগে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
এই মামলার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালে মৌর্য কোনও এক হিন্দু দেবতার বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। এক সভায় তিনি বলেছিলেন, “দেবী গৌরী এবং দেবতা গণেশের পুজো কোনও বৈবাহিক অনুষ্ঠানের সময় করা উচিত নয়। দলিত এবং অনগ্রসর জাতিদের বিভ্রান্ত এবং দাবিয়ে রাখার জন্য় এটি উচ্চ জাতের মানুষ কতৃক নির্মিত এক ষড়যন্ত্র ।” তাঁর এই বক্তব্যের প্রক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছিল। ২০১৬ সালে এলাহাবাদ কোর্টের নির্দেশে তাঁকে রক্ষাকবচ প্রদান করা হয়। তারপর থেকে এই মামলায় বেশ কয়েকটি শুনানি হয়ে গিয়েছে। ৬ জানুয়ারি সুলতানপুর কোর্টে তাঁকে আজ হাজিরা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তা অগ্রাহ্য করায় পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁর নামে।
গতকাল যোগী আদিত্যনাথের ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফা দেন। তারপরই রাজনৈতিক মহলে শোনা যাচ্ছে, তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গতকাল সর্বসমক্ষে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এই কথা ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী নিজেই। তিনি ১৪ জানুয়ারি ‘সাইকেলবাহিনী’তে যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন। এর মধ্যে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎও করেন। তিনি এও জানিয়েছেন, তিনি কোনও দিন আর গেরুয়া শিবিরে ফিরবেন না।
এককালে বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য। বিএসপি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এইবার নির্বাচনের প্রাক্কালে দল বদল করে সমাজবাজী পার্টিতে নাম লেখানোর পথে মৌর্য। স্বামী প্রসাদ হলেন মৌর্য কুশওয়াহা জাতির জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। উত্তর প্রদেশে মোট পাঁচবার বিধায়ক পদে ছিলেন তিনি। এই মৌর্য কুশওয়াহা সমাজের পূর্ব উত্তর প্রদেশের ভোটবাক্সে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। গোটা উত্তর প্রদেশে এদের ভোট শতাংশ ৫। উত্তর প্রদেশের মোট ৪০৩ টি আসনের মধ্যে ৪০-৫০ টি আসনে এদের প্রভাব রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে অনেকেই মনে করেছিলেন তৎকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি কেশবপ্রসাদ মৌর্যকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের পরে কেশবপ্রসাদ উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দিল্লি থেকে এনে মসনদে বসানো হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথকে। এতে দলিত এবং নিচু বংশের অনেকেই আশাহত হয়েছিল। সেই হতাশাকেই কাজে লাগিয়ে বিজেপির গড় হিসেবে পরিচিত পূর্ব উত্তর প্রদেশে নিজেদের হুল ফোটাতে সচেষ্ট হয়েছে অখিলেশ যাদব। সেই ছকেই স্বামী প্রসাদকে নিজের দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন অখিলেশ। মৌর্য সমাজ নিয়ে অখিলেশের এই অঙ্ক মেলে কিনা তা যানা যাবে ১০ মার্চ।
আরও পড়ুন : UP Assembly Election 2022: ‘এখনও বিজেপি ছাড়িনি’, শুক্রবার পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য