লখনউ : উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে প্রথম থেকেই বিরোধীদের অস্ত্র ছিল উন্নাও, হাথরস এবং লখিমপুর খেরি। উন্নাও ও হাথরাসে যেখানে ধর্ষণ কাণ্ডে শাসকদল বিজেপির উপর চাপ বাড়িয়েছে বিরোধীরা। উন্নাও কাণ্ডে নির্যাতিতার মাকে ভোটের টিকিট পর্যন্ত দিয়েছিল কংগ্রেস। তবে তাতেও বিজেপির জয়রথ থামানো যায়নি এই জেলায়। অপরদিকে লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সংসদ উত্তাল করে তুলেছিল বিরোধীরা। লখিমপুর কাণ্ডে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্র জেলেও ছিলেন দীর্ঘদিন। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেদিকে কর্ণপাত করেননি। মনে করা হচ্ছিল, সার্বিকভাবে এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে কৃষক অধ্যুষিত পশ্চিম উত্তর প্রদেশে। তবে ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল যে লখিমপুর খেরিতে শেষ হাসি হাসল গেরুয়া শিবিরই।
লখনউ এবং কানপুরের মাঝে অবস্থিত উন্নাও জেলায় মোট ছয়টি বিধানসভা আসন রয়েছে। বাঙ্গরমউ, পূরবা, উন্নাও সদর, ভগবন্তনগর, সফিপুর, মোহন। এই ছ’টি আসনেই বিজেপি অনেক ব্যবধানে জিতেছে। বাঙ্গরমউতে বিজেপি প্রার্থী শ্রীকান্ত কাটিয়ার ৪৪.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছেন। সেখানে পূরবা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অনিল কুমার সিং পেয়েছেন ৫২.৭৭ শতাংশ ভোট। উন্নাও সদরে কংগ্রেস প্রার্থী তথা উন্নাও কাণ্ডের নির্যাতিতার মা আশা সিং মাত্র ১৫৪৪ ভোট পেয়েছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পঙ্কজ গুপ্তা ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। ভগবন্তনগরেও বিজেপি প্রার্থী আশুতোষ শুক্লা ৫১ শতাংশের বেশি পেয়েছেন। অপরদিকে সফিপুরে বাম্মা লাল (৫২ শতাংশের বেশি ভোট) এবং মোহন কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ব্রজেশ কুমার ৫৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে হাথরস কাণ্ডে ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে সপার অখিলেশ যাদবকে। তবে ভোট বাক্সে বিরোধীদের এই তৎপরতা প্রতিফলিত হয়নি। হাথরসের তিনটি কেন্দ্র – হাথরস, সদাবাদ, সিকন্দরা রাও কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে বিজেপি। হাথরস কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী অঞ্জুলা সিং মাহুর ৫৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জিতেছেন। অপরদিকে সদাবাদ থেকে বিজপি প্রার্থী রজনী তিওয়ারি জিতেছেন ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে। সিকন্দরা রাও কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত এই কেন্দ্রেও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী বিজেপি প্রার্থী বীরেন্দ্র সিং রানা।
এদিকে দেশবাসীর স্মৃতিতে এখনও টাটকা লখিমপুর খেরি কাণ্ড। কয়েকদিন আগেই এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত মন্ত্রী পুত্র আশিস মিশ্র জেল থেকে ছাড়া পেয়েছন। তবে সেই মর্মান্তিক ঘটনাও বিজেপির জয়যাত্রা রুখতে পারেনি এই জেলায়। এই জেলায় আটটি আসন – পালিয়া, নিঘাসন, গোলা গোকারনাথ, শ্রী নগর, ধৌরহারা, লখিমপুর, কাস্তা এবং মোহাম্মদীর সবকটিতে জিতেছে বিজেপি। পালিয়া কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট জিতেছেন বিজেপির হরবিন্দর কুমার সাহনি ওরফে রোমি সাহনি। নিঘাসনে বিজেপি প্রার্থী শশাঙ্ক ভর্মা জয়ী হয়েছেন ৫৩.৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে। গোলা গোকারনাথ কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী অরবিন্দ গিরি জয়ী হয়েছেন ৪৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে। অপরদিকে শ্রী নগরে বিজেপি প্রার্থী মঞ্জু ত্যাগী জয়ী ৪৭ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে। ধৌরহারা কেন্দ্রেও জয়ী বিজেপি। এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী বিনোদ শঙ্কর জিতেছেন ৪৯.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে। তাছাড়া কাস্তা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সৌরভ সিং (৪৭.৯৩ শতাংশ), মোহাম্মদী কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী লোকেন্দ্র প্রতাপ সিং (৪২.৭৫) জয়ী হয়েছেন। লখিমপুর কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছে ৪৭.৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে। এখানে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন যোগেশ ভর্মা।