নয়া দিল্লি: নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে দলবদলের খেলা। প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। এরই মধ্যে পর পর দুটি বড় ধাক্কা খেল উত্তর প্রদেশ(Uttar Pradesh)র বিজেপি (BJP) সংগঠন। মঙ্গলবার শ্রমমন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্যের ইস্তফার পর এবার আরও এক শীর্ষ নেতা, দারা সিং চৌহান(Dara Singh Chouhan)-ও দল ছাড়লেন। এই নিয়ে দুদিনেই পরপর দু’জন ওবিসি জনজাতির নেতা বিজেপি ছাড়লেন।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন (Uttar Pradesh Assembly Election 2022) শুরু। ৪০৩ কেন্দ্রের এই নির্বাচনে জনজাতি/উপজাতিদের ভোট বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ রাজ্যের একটি বড় অংশ যেমন ব্রাহ্মণ, তেমনই অপর একটি বড় অংশের মানুষই বিভিন্ন জনজাতির। তাই নির্বাচনে জেতার জন্য দুই পক্ষের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে জয়ের রণকৌশল তৈরি করতে দিল্লিতেই যখন সমস্ত শীর্ষনেতারা ব্যস্ত, সেই সময়ই মঙ্গলবার বিজেপি ছাড়ার ঘোষণা করেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য্য। তিনি জানান, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে যোগদান করবেন, তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। এরইমাঝে আরও প্রকট হল বিজেপির অন্দরের ফাটল। গতকালই দল থেকে ইস্তফা দেন দারা সিং চৌহান। এছাড়া বিজেপি বিধায়ক অবতার সিং ভাদানাও বিজেপি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় লোক দলে যোগদান করার কথা জানান। স্বামী প্রসাদ মৌর্য্যকে সমর্থন দেখিয়ে আরও তিন বিধায়কও দল ছেড়েছেন, তারাও সমাজবাদী পার্টিতেই যোগদান করতে পারেন। বিজেপিকে আবার ধাক্কা দিয়ে আজ সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন ধর্ম সিংহ সাইনি। তিনিও বিজেপি সরকারের মন্ত্রী।
অন্যদিকে, শুধু ভাঙনই নয়, নতুন সদস্যও পেয়েছে বিজেপি। বুধবার কংগ্রেসের বিধায়ক নরেশ সাইনি ও সমাজবাদী পার্টির হরিওম যাদবও বিজেপিতে যোগ দেন।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ অবধি ধাপে ধাপে নির্বাচন রয়েছে উত্তর প্রদেশে। ফল ঘোষণা ১০ মার্চ। এরই আগে একের পর এক নেতা, বিশেষ করে জনজাতি গোষ্ঠীর নেতাদের দলত্যাগে কিছুটা চাপেই রয়েছে শাসক দল বিজেপি। সদ্য ইস্তফা দেওয়া মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ হলেন মৌর্য্য কুশওয়াহা জাতির জনপ্রতিনিধি। মোট পাঁচবার বিধায়ক পদে ছিলেন তিনি। এই মৌর্য্য কুশওয়াহা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে পূর্ব উত্তর প্রদেশের ভোটবাক্সে। গোটা উত্তর প্রদেশে এদের ভোটের হার ৫ শতাংশ। উত্তর প্রদেশের মোট ৪০৩ টি আসনের মধ্যে ৪০-৫০ টি আসনেই এদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
এমনিতেই কৃষি আইন ও কৃষক আন্দোলনের জেরে কিছুটা ভোটবাক্সে প্রভাব পড়েছে। আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই তাই বিজেপি নেতা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা জানাচ্ছেন এবং ডবল ইঞ্জিন সরকারের উপকারিতা বোঝাচ্ছেন। তবে উত্তর প্রদেশে রাজনৈতিক চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিভিন্ন জনজাতি। বিশাল রাজ্যে বিভিন্ন জনজাতি ববাস করায়, তাদের সকলের চাহিদাও ভিন্ন। এদের গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিভিন্ন নেতারাও রয়েছেন। অতীতেও দেখা গিয়েছে, নেতাদের দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভোটও পরিবর্তিত হয়েছে অন্যদিকে। তাই এবারও একই ঘটনা ঘটবে কিনা, তাই-ই এখন দেখার।