AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বেচারা ‘প্রমিস’ আজ যেন বলছে, ‘কেউ কথা রাখেনি… কেউ কথা রাখে না’

আজ ‘প্রমিস ডে’। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার, প্রতিশ্রুতি পালনের দিন। প্রমিস করা এবং সেটা ভাঙাই কি এখন ট্রেন্ড?

বেচারা ‘প্রমিস’ আজ যেন বলছে, ‘কেউ কথা রাখেনি... কেউ কথা রাখে না’
| Edited By: | Updated on: Feb 11, 2021 | 2:47 PM
Share

‘ওয়াদা রহা সনম, হোঙ্গে জুদা না হম’ কিংবা ‘যো ওয়াদা কিয়া ওহ নিভানা পড়েগা’

আজ সকালে আপনমনে হয়তো এইসব গান গুনগুনিয়েছেন অনেকে। হবে নাই-ই বা কেন। আজ যে ‘প্রমিস ডে’। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার, প্রতিশ্রুতি পালনের দিন। কিন্তু ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে সত্যিই কি ‘প্রমিস’-এর এতটা গুরুত্ব রয়েছে? নাকি অহরহ প্রমিস করা এবং সেটা ভাঙাই এখন ট্রেন্ড?

চোখ বুজে দু’সেকেন্ড ভাবলেই মনে পড়ে যায় রোজ ঠিক কী-কী প্রমিস আমরা করি এবং পরমুহূর্তেই ভেঙে ফেলি। আমাদের রোজনামচায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে প্রমিস। সিগারেট ছেড়ে দেওয়া, ডায়েট-চার্ট মেনে রোগা হওয়া, মর্নিং ওয়াক বা জিমে যাওয়া, সময়ে কোথাও পৌঁছনো… প্রায় প্রতিদিন এই প্রমিসগুলো আমরা করেই থাকি। আবার এই আমরাই এই প্রমিসগুলোই ভেঙে ফেলি খুব তাড়াতাড়ি।

অনেকে আবার ‘এসকেপ রুট’ হিসেবেও প্রমিসের হাত ধরেই হাঁটা শুরু করেন। আসলে একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে প্রমিস ভাঙাগড়ার খেলাটা শুরু হয় শৈশবেই। সেই হোমওয়ার্ক না করে স্কুলে যাওয়া এবং শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে একটা অজুহাত দেওয়া। আর অতি অবশ্যই প্রমিস করে শিক্ষকদের এটা বোঝানো যে, কাল থেকে আর এমনটা হবে না। যথারীতি হয়তো পরের দিন এমন ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়।

অফিসের লেট এন্ট্রি হোক, হেলমেট ছাড়া ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে ধরা পড়া হোক অথবা গদগদ রোম্যান্টিক প্রবাদ ‘তোমায় ছেড়ে যাব না’, ‘তোমায় ছাড়া বাঁচব না’… প্রমিস করা আর ভাঙার খেলা রয়েছে সর্বত্রই।

প্রেম আর রোম্যান্স নিয়ে অসংখ্য গান লিখেছেন এবং গেয়েছেন অনুপম রায়। প্রেমের সম্পর্কেই তো বোধহয় সবচেয়ে বেশি প্রমিস করা হয়। ‘প্রমিস’ নিয়ে অনুপম ঠিক কী ভাবেন, তা জানতে চাইল TV9 বাংলা।

promise_day_txt_card_anupam

প্রমিস কী এখন আসলে ভাঙারই জিনিস?

অনুপম- এটা একেবারেই ব্যক্তিভিত্তিক বিষয়। কে কেমন ভাবে ব্যাপারটা দেখেন, তার ওপর নির্ভর করে। রোজের জীবনের পাঁচটা প্রমিস যেটা আপনি করেন এবং ভাঙেন?

অনুপম- এই রে! কঠিন প্রশ্ন। আসলে আমি নিজের জন্য় বিশেষ প্রমিস করি না। ব্যাপারটা এ রকম যে আমি যদি নিজেকে কোনও প্রমিস করি, তাহলে সেটা রাখব। যেমন যদি আমি বলি এক ঘণ্টা গান বা গিটার প্র্যাকটিস করব, তাহলে আমি সেটা করব। আমি চেষ্টা করি প্রমিস রাখার।

তবে হ্যাঁ একটা প্রমিস আমি করেও এখনও পর্যন্ত রাখতে পারিনি। বোধহয় নিজের ভিতর থেকে সেভাবে চাইনি, তাই-ই পারিনি। আমি ভেবেছিলাম একদিন ঠিকঠাক গাড়ি চালাব। অনেকবার ‘নিউ ইয়ার রেজ়োলিউশনস’-এও রেখেছিলাম। কিন্তু আজ অবধি পারিনি।

প্রমিস কি আসলে এসকেপ রুট বা পালানোর জায়গা? মানে ধরুন রাস্তায় হেলমেট ছাড়া একজন বাইকচালক ধরা পড়লে প্রথমেই বলে থাকেন, “স্যার ছেড়ে দিন, কাল থেকে আর হবে না, প্রমিস…”

promise_day_txt_card_3

অনুপম- (সামান্য হেসে) ঠিকই বলেছেন। আসলে ওই হোমওয়ার্ক করার সময় থেকেই বোধহয় এর শুরু। স্যারকে বলা হতো, “আজ ছেড়ে দিন, কাল থেকে ঠিক করে আনব, প্রমিস।”

সিগারেট ছেড়ে দেওয়া… জনপ্রিয় প্রমিস এবং ভাঙেও সহজে, এ নিয়ে কী বলবেন?

অনুপম- আমি আসলে বেশি সিগারেট খাই না। তাই ওই ধরা-ছাড়ার ব্যাপারটাই নেই। হ্যাঁ, তা বলে কী কখনওই খাই না? কালেভদ্রে খাই। তাই ওটা ছাড়ার তেমন ব্যাপার নেই।

এই প্রমিস ডে-তে আপনার প্রমিস কী?

অনুপম- যেহেতু গান গাওয়াই আমার পেশা, তাই আরও ভাল গান শোনাতে চাই। মন থেকেই এটা চাই যে, যা এতদিন শুনিয়েছি, তার চেয়ে ভাল কিছু শোনাব। এই ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আমার শ্রোতাদের নতুন একটা গান শোনাতে চাই। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এই গান শোনাতে চাই একটাই কারণে, যাতে মানুষ আরও বেশি করে ভালবাসতে পারেন।

promise_day_txt_card_shilajeet

প্রমিস করে তা না-রাখার অভিযোগ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ করে ‘ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’ গেয়ে একসময় বিতর্কিত আখ্য়া পেয়েছিলেন গায়ক শিলাজিৎ। ‘প্রমিস ডে’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। বরাবরের স্পষ্টবাদী শিলাজিতের সাফ জবাব, “আমি এসবে বিশ্বাস করি না। আমার কাছে এই দিবসগুলোর কোনও অর্থ নেই। নিজের বিবাহবার্ষিকীই মনে রাখতে পারি না, আবার প্রমিস! কবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি মনে নেই। আর এই দিনগুলোর কোনওরকম প্রচার বা অপপ্রচারেও আমার সামান্যতম ইচ্ছে নেই। কোনও টিপ্পনি বা ফক্কুড়িও আমার বাজে খরচা মনে হয়।”

তবে এই সব কিছুর বাইরে আর একটা প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। ঘনঘন প্রমিস করা। এটা কি তাহলে কোনও মানসিক সমস্যা? কেন এমনটা হয়? এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অ্য়াসোসিয়েট প্রফেসর সুজিত সরখেলের সঙ্গে।

এই যে প্রতি মুহূর্তে প্রমিস করা আর ভাঙা, এ নিয়ে কী বলবেন? এটাই এখন ট্রেন্ড?

সুজিত- হ্যাঁ খানিকটা তো বটেই। ‘প্রমিস’ শব্দের ওজনটা অনেক কমে গিয়েছে। আগে যেমন ছিল যে, কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারলে, তার সামনে নিজের ইমেজটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। এখন বোধহয় এভাবে কেউ ভাবেন না। বিষয়টা এখন অনেকটা এরকম যে, “ও ঠিক আছে, বলেছি, বলেছি…” চারপাশের লোকেদের প্রতিদিন যেসব প্রমিস ভাঙতে দেখেন…

promise_day_txt_card_sujit

সুজিত- ১। যাঁরা কোনও বিশেষ অভ্যাস, নেশাগত বা অন্য কোনও আসক্তিতে জড়িত, তাঁরা অহরহ ঝোঁকের বশে প্রমিস করে ফেলেন ঠিকই। কিন্তু সেই প্রমিস রাখা হয় না।

২। সময়ের সঙ্গে জড়িত যে কোনও প্রমিস, তা সে সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো হোক বা সময়ে অফিস যাওয়া, কাজ শেষ করা অর্থাৎ ডেডলাইন, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা, যে কোনও মিটিং… এ সব ক্ষেত্রে বড্ড হালকা চালে কথা দেওয়া হয়ে যায়। পরে সেই কথা আর রাখা হয় না। তবে সবার ক্ষেত্রে এমনটা নয়।

৩। ডায়েট করে রোগা হবই… এটা খাব না… ওটা করব… এই উদ্যমের মেয়াদ অনেকের ক্ষেত্রেই দু’-তিন সপ্তাহের বেশি নয়। তারপরই নানা অছিলায় প্রমিস ভেঙে সেই আগের জাগাতেই ফিরে আসেন তাঁরা।

প্রমিস না রাখার এমন প্রবণতা কেন দেখা যায়?

সুজিত- এটা ঠিক ভাঙব বলে ভাঙা নয়। আসলে যিনি প্রমিস করছেন, তিনি হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কারও মন রাখার জন্য কথাটা বলেছেন। বা একটা শাস্তি এড়াতে সাময়িকভাবে হুট করে প্রমিস করে দিয়েছেন। কিন্তু আদৌ তাঁর কাছে ওই কথার গুরুত্ব নেই। তাই তিনি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেনই না। কথা দিয়ে যে কথাটা রাখা হল না, বিষয়টার তেমন গুরুত্বই নেই। এটাই তাঁর অভ্যাস, সহজাত স্বভাব।

promise_day_txt_card_1

প্রেমিক-প্রেমিকারা তো হামেশাই একে অন্যকে প্রমিস করেন। কোথাও কথা রাখা হয়, কোথাও বা ভাঙে। এই ঘনঘন প্রমিস করার ব্যাপারটা কেন আসে?

সুজিত- এটা ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সহজাত স্বভাব। নির্দিষ্ট একটা মুহূর্তে হয়তো প্রমিস করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে একজনের মন রাখা হল। কিন্তু যিনি প্রমিস করলেন, তাঁর কাছে এই প্রতিজ্ঞার কোনও দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্ব নেই। প্রমিস করে সেটা না-রাখতে পারলে কী হবে, এই ব্যাপারটা নিয়ে আদৌ তিনি ভাবেনই না।

প্রমিস করে কথা না রাখতে পারা, কারও ক্ষেত্রে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে?

সুজিত- যাঁরা এই কথা দিয়ে কথা রাখার ব্যাপারে খুব নিশ্চিত, তাঁরা প্রমিস ভেঙে ফেললে, সেটা যে কারণেই হোক, একটা মানসিক সমস্যা বা মেন্টাল ট্রমা হতে পারে। খুব সাংঘাতিক কিছু না হলেও, সাময়িক ভাবে একটা সমস্যা তো হয়েই থাকে। অপরাধবোধ এসে যায়। সংখ্যাটা নেহাতই হাতেগোনা হলেও এমন মানুষ যে নেই, সেটা বলা যায় না।

promise_day_txt_card_2

বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, হয়তো বাড়ির লোককে সে কিছু প্রমিস করেছিল, কিন্তু কথা রাখতে পারেনি। এর ফলে বাড়ির লোকেরা হয়তো কিছু বলছে না। কিন্তু বাচ্চাটির নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ হচ্ছে এবং সে ক্রমাগত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেনি। অন্যান্য কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে। মারাত্মক কিছু হয় না ঠিকই। তবে সাময়িক প্রভাব তো পড়েই।

‘প্রমিস ডে’-র বয়স ‘তেত্রিশ বছর’ পেরিয়ে গিয়েছে কি না, সেই বহুদূরের তর্ক আপাতত তোলা থাক। এই ‘প্রমিস ডে’তে বেচারা ‘প্রমিস’কে যেন বলে উঠতে না-হয়, ‘কেউ কথা রাখেনি… কেউ কথা রাখে না!’

আরও পড়ুন, টেডি ডে: টেডি বিয়ার যখন ভয়ের ‘এগ্রিজ়ুফোবিয়া’, আদরের নয়

গ্রাফিক্স এবং অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ