AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

টেডি ডে: টেডি বিয়ার যখন ভয়ের ‘এগ্রিজ়ুফোবিয়া’, আদরের নয়

বছরের পর বছর চেনা শহরের মতো টেডি বিয়ার জেনেছে আপনার-আমার প্রেমের ‘প্রথম সব কিছু’। কিন্তু এ হেন মিষ্টি টেডি যদি আদর নয়, আপনার মনে তৈরি করে ভয়? যদি টেডির লাল নাক, আর গহন মণির ভিতরে কেউ খুঁজে পায় আতঙ্ক? তবে?

টেডি ডে: টেডি বিয়ার যখন ভয়ের ‘এগ্রিজ়ুফোবিয়া’, আদরের নয়
টেডি যখন ফোবিয়া। অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।
| Edited By: | Updated on: Feb 10, 2021 | 9:16 PM
Share

নরম তুলতুলে চেহারা, কালো গভীর চোখ, ফোলা ফোলা গাল—নাম তার টেডি বিয়ার। আট থেকে আশির বড় আদরের সে। প্রেমিকার রাগ ভাঙানো হোক অথবা টিনএজ প্রেমের শুভ আরম্ভ—বছরের পর বছর চেনা শহরের মতো টেডি বিয়ার জেনেছে আপনার-আমার প্রেমের ‘প্রথম সব কিছু’। কিন্তু এ হেন মিষ্টি টেডি যদি আদর নয়, আপনার মনে তৈরি করে ভয়? যদি টেডির লাল নাক, আর গহন মণির ভিতরে কেউ খুঁজে পায় আতঙ্ক? তবে?

আরও পড়ুন ভালবাসার মানুষের সঙ্গে থাকলে প্রতিদিনই ভ্যালেন্টাইস ডে: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা

আগরপাড়ার বাসিন্দা ছয় বছরের আয়ুষ সেনগুপ্ত (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর পাঁচ বছরের জন্মদিনে উপহার পেয়েছিল মানুষ সমান এক টেডি বিয়ার। আতঙ্কে শিউরে উঠেছিল ছোট্ট আয়ুষ। ঘুমোতে পারেনি পরপর টানা দুই রাত। তার মনে হত রাত নামলেই সেই টেডি বিয়ার নাকি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঠায় তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

অথবা ধরা যাক, ২০১৬ সালের জনপ্রিয় হলিউড শর্টফিল্ম ‘টেডি বিয়ার আর ফর লাভারস’। সেই ছবিতে প্রোটাগনিস্ট ছেলেটির সব সময় মনে হত প্রাক্তন প্রেমিকাদের উপহার দেওয়া টেডি বিয়ারগুলো ভুতুড়ে। তাঁর ক্ষতি করতে চাইছে।

বিজ্ঞান একে নাম দিয়েছে ‘এগ্রিজ়ুফোবিয়া’। কেন হয় এমন? কেনই বা আপাদমস্তক নিরীহ চেহারার ওই সফট-টয় আতঙ্কের সৃষ্টি করে মনে? কী বলছেন মনোবিদ-চিকিৎসকেরা? টেডি দিবসে আপানাদের জন্য TV9 বাংলা খুঁজে দেখার চেষ্টা করল অন্য টেডির গল্প।

মনোবিদ সুদর্শনা দাশগুপ্ত বললেন, “সাইকোলজিতে খুব বিখ্যাত এক কেস স্টাডি রয়েছে। যেখানে বাচ্চাটিকে সাদা টেডি দেখিয়ে জোরে আওয়াজ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই সাদা টেডি দেখলেই আতঙ্কে শিউরে উঠত সে।”

অনেকটা সুদর্শনার কথার সূত্র ধরেই নিজের বক্তব্য় জানালেন ন্যাশানাল ইন্সটিউট অব বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের মনোরোগ চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “এগুলো নির্দিষ্ট ফোবিয়া। শুধু বাচ্চা নয়, যে কোনও বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হতে পারে। আমার কাছে একটি বাচ্চা এসেছিল—টেডি নয়, লম্বা-লম্বা চুলওয়ালা ‘বার্বি ডল’কে সে ভয় পায়। সেই বিশেষ খেলনাটি তার মনে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।”

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক-চিকিৎসক রাজর্ষি নিয়োগী আবার টেডি বিয়ারকে ভয় পাওয়ার আগে ভালবাসার কারণ কী, তা বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর কথায়, “টেডি বিয়ার দেখে সাধারণত আনন্দ পাওয়ার কারণ হল আমাদের ছোটবেলা থেকে তা শেখানো হয়। ঠিক যেমন ছোট থেকেই আমাদের লিঙ্গবিশেষে রঙের ব্যাপারে একটা বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। এর দু’টো দিক রয়েছে। এক বায়োলজিকাল অ্যাঙ্গেল এবং অন্যটি বিজ্ঞাপন-নির্ভর জগৎ।” আর ভয়? “কোথাও গিয়ে এই অ্যাসোশিয়নই ‘ফিয়ার অবজেক্ট’ হয়ে যায়। যে বাচ্চা টেডিকে ভয় পাচ্ছে, হতে পারে ছোটবেলায় সে মায়ের কাছে বকা-মার খেয়েছিল। টেডির মধ্যে দিয়ে সেই ভয় তার মনস্তত্ত্বে প্রভাব বিস্তার করছে।”

এই ভয়ের পিছনে আরও বেশ কিছু কারণ জুড়েছেন সুদর্শনা। তাঁর কথায়, “হতে পারে বাচ্চাটি যখন টেডিটি ধরেছিল তখন সে খুব বকা খেয়েছে। হতে পারে সত্যিকারের ভাল্লুকের সঙ্গে বাচ্চাটি টেডিকে অ্যাসোসিয়েট করছে… সে কারণেও ভয় পাচ্ছে।”

হলিউডের ছবি ‘অ্যানাবেল’-এ অ্যানাবেল ‘ভুতুড়ে’ ছিল। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পল্টারগেইস্ট’এর সেই ক্লাউনের কথা নিশ্চয়ই আপনি ভোলেননি? প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছিল এক শর্টফিল্মের ‘ভুতুড়ে টেডি’র কথা। অর্থাৎ যা প্রিয়, যা ভাললাগার, হরর মুভিতে তাকেই ভয়ের-আতঙ্কের হিসেবে প্রতিষ্ঠার কারণও কি টেডি ভীতির অন্যতম কারণ হতে পারে?

বাংলায় হরর ওয়েব সিরিজ ‘কার্টুন’-এর নির্মাতা সৌরভ চক্রবর্তী বলছেন, “ভয় তো বিভিন্ন রকমের হয়। তবে পুতুল জাতীয় জিনিস, যেগুলো আদপে মানুষেরই তৈরি, সেগুলো যখন ঘরের এক কোণায় পড়ে থাকে তখন তাকে নিয়ে ভয় পাওয়া খুব জাস্টিফায়েড। আমার সিরিজেও টেডি অবজেক্ট হতেই পারে। যে জিনিস আদপে মিষ্টি, সেই জিনিসই যদি অন্যরকমভাবে লোকের সামনে পরিবেশন করা হয়, সেক্ষেত্রে ফিয়ার ফ্যাক্টর আরও বেশিই কাজ করবে বলে মনে হয়।”

ভয়ের কারণ সম্পর্কে তো জানা গেল। মুক্তির কি কোনও উপায় নেই? টেডি দিবস কি তবে সেই ব্যক্তির কাছে ‘হ্যালোউইন’ হয়েই থাকবে?

“না, তা কেন? এর খুব ভাল চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই ফোবিয়া সহজেই কাটানো সম্ভব”, বললেন চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে সুদর্শনার কথায়, “নানা রকম বিহেভিয়ার মডিফিকেশান থেরাপি বা বিভিন্ন সাইকো অ্যানালিসিসের মাধ্যমে এই ভয় দূর করা সহজেই সম্ভব।”

আপনার কাছে টেডি কী রকম? আদরের নাকি ‘নয়’?

তথ্য সহায়তা: সোহিনী চক্রবর্তী ও উৎসা হাজরা