স্নেহা সেনগুপ্ত
‘নিজের জীবনের গল্প’ বই আকারে (Guns & Thighs: The Story of My Life) লেখার সময় সেই বই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ‘ম্যাড’ ম্যাগাজ়িন, আয়ান ব়্যান্ড, উর্মিলা মাতোণ্ডকর, ব্রুস লি, অমিতাভ বচ্চন, পর্ন স্টার টোরি ব্ল্যাক এবং কয়েকজন গ্যাংস্টারকে। সেই পরিচালকের নাম রামগোপাল ভর্মা। তাঁরই ছবি ‘ডেঞ্জারাস খত্রা’। ভারতের ‘প্রথম’ লেসবিয়ান ক্রাইম ড্রামা। এই ছবিতে সাহসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাঙালি অভিনেত্রী নয়না গঙ্গোপাধ্যায়। ‘চরিত্রহীন’ ওয়েব সিরিজ়ে তিনিই ছিলেন কিরণময়ী। হায়দরাবাদে বসে পর্দায় তাঁর লেসবিয়ান রোল নিয়ে অফুরান কথা বললেন নয়না। একান্ত সেই আলাপচারিতায় তাঁর সঙ্গী ছিল কেবল TV9 বাংলা।
গেহরাইয়াঁ দেখেছেন?
কেবল গানগুলোই দেখেছি। আর কিছুই দেখা হয়নি আমার।
‘গেহরাইয়াঁ’তে একজন ইন্টিমেসি ডিরেক্টর ছিলেন। আপনার অভিনীত ‘ডেঞ্জারাস খত্রা’তে কি সেরকম কেউ ছিলেন?
আমাদের ছবিতে কিন্তু সেরকম কোনও বিশেষজ্ঞ পরিচালক ছিলেন না। সেটে কেবল রামগোপাল ভর্মাই ছিলেন। ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো উনিই পরিচালনা করেছিলেন। আলাদা করে কোনও ইন্টিমেসি পরিচালককে রাখা হয়নি।
জনপ্রিয় বাংলা ওয়েব সিরিজ় ‘চরিত্রহীন’-এ কিরণময়ীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বোল্ড সিনে আগেও অভিনয় করেছেন। কিন্তু সমকামী মহিলার চরিত্রে এটাই আপনার প্রথম কাজ…
একদমই তাই। বলতে পারি একেবারে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে আমার ক্ষেত্রে। আমি কিন্তু নিজে মানুষটা সমকামী নই। এতদিন স্ক্রিনে হিরোর সঙ্গেই রোম্যান্স করেছি। নিজে মহিলা হয়ে অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে আজ পর্যন্ত রোম্যান্স করিনি। স্ক্রিনে না, বাস্তব জীবনেও না। একেবারে নতুন কাজ, নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে।
তা হলে তো প্রথম-প্রথম সিনগুলো করতে অসুবিধেই হয়েছে আপনার?
একেবারেই। শুরুর দিকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অনেক সাক্ষাৎকার পড়েছি ও গবেষণা করেছি।
তাই?
একদমই। না হলে বিষয়টা অনুভব করতে পারতাম না। অনেক ছবিই তো তৈরি হয়েছে সমকামিতা নিয়ে…
কী-কী গবেষণা করেছেন?
আমি জানি আয়ুষ্মান খুরানা, রাধিকা আপ্তের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেরিয়ারের কোনও না-কোনও সময়ে সমকামী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ওঁদের সাক্ষাৎকার পড়েছি। ওঁদের কাজ দেখেছি। এটাও জেনেছি দর্শক ওঁদের সাপোর্ট করেননি অনেক সময়। সেই ফ্রিনেস পেতে একটু সময় লেগেছে আমারও।
সম্প্রতি কীর্তি কুলহারি ‘হিউম্যান’ ওয়েব সিরিজ়ে তাঁর ও শেফালি শাহের চুম্বন প্রসঙ্গে নিজের শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি নাকি ভেবেছিলেন, চুম্বন দৃশ্যে যদি তিনি শেফালির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন, তা হলে নিজের ওরিয়েন্টেশন নিয়েই প্রশ্ন জেগে যেতে পারে তাঁর… এই প্রশ্ন যদি আপনাকেও করা হয়, কী বলবেন?
একটা বিষয় আমি জানি। আমি নিজে একজন অভিনেতা। অভিনয় করাই আমার কাজ। আমি অভিনয় করছি। অভিনয় করতে গিয়ে অনেক ধরনের চরিত্রই করতে হয়। বাস্তব জীবনের সঙ্গে তার কোনওটাই ম্যাচ করে না। আমি পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হই। মহিলাদের প্রতি একেবারেই হই না। আগেও পর্দায় চুম্বন করেছি, বিছানায় অন্তরঙ্গতা দেখিয়েছি… সবটাই করেছি চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব থেকে। এই ছবির ক্ষেত্রেও সেটাই করেছি। কোনও সময় মনে হয়নি আমি নিজে লেসবিয়ান কিংবা বাই সেক্সচুয়াল। অভিনয় করার সময় আমি ব্ল্যাঙ্ক মানুষ। আমার চিত্রনাট্য যা চাইবে, আমি তাই-ই করব।
অভিনেত্রীকে চুম্বনের সময় অস্বস্তি হয়েছিল?
কোনও ছবিতে যখন কাজ করি, আমি নিজেই সময় বের করে অনেক রিসার্চ করি। সময় বের করে নিই। ‘চরিত্রহীন’-এর সময় রিসার্চ করেছি, ‘বিউটিফুল’-এর সময় করেছি, ‘ডেঞ্জারেস খত্রা’র সময়ও করেছি। নিজের মতো গবেষণা করেছি। ‘ডেঞ্জারেস খত্রা’র সময় নিজেকে প্রথমে প্রস্তুত করেছিলাম। মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি। পুরুষের সঙ্গে রোম্যান্স করে-করে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। কিন্তু মহিলার সঙ্গে তো তা নয়। তবে কাউকে ক্যামেরার সামনে চুম্বন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই ছবিতে আমরা দু’জনেই মহিলা। সেই চরিত্রকে অনুভব করে অভিনয় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাকে নিজেকে আগে স্বচ্ছন্দ্য হতে হয়েছে সবার আগে।
প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা কীরকম ছিল?
খুব হাসি পেয়েছিল জানেন। কমেডি টাইপের কাণ্ডকারখানা হয়েছে সেটে। কিন্তু যেহেতু কাজটা সিরিয়াস, হাসাহাসির পর সিরিয়াস হয়ে যাই। অনেকেই তো থাকেন সেটে…
অন্তরঙ্গ সিন শুটের সময় অনেকে সেটে উপস্থিত ছিলেন?
সত্যি কথা বলতে, সংলাপ বলার সিনগুলোয় সেটে ইউনিটের অনেকেই ছিলেন। কিন্তু অন্তরঙ্গ দৃশ্য শুটিংয়ের সময় রামগোপাল স্যার ও আমাদের ডিওপি-ই কেবল ছিলেন। হেয়ার স্টাইলিস্টরাও সেখানেই থাকতেন। অন্যদের বের করে দেওয়া হত লোকেশন থেকে।
ছবিটা তো দেশের প্রথম লেসবিয়ান ক্রাইম ড্রামা…
সবসময় তো স্ক্রিনে চুম্বনের দৃশ্য রাখলে হবে না। সঙ্গে একটা গল্পও থাকতে হবে। ছবিতে রাজপাল যাদব স্যার অভিনয় করেছেন।
আপনার চরিত্রটির নাম নলিনী। নলিনী একজন সমকামী মহিলা। ওর মহিলাদেরই ভাল লেগেছে। এই ছবি করতে করতে সমকামীদের প্রেম, ওঁদের ক্রাইসিসকে ফিল করতে পেরেছিলেন?
আমি ‘হটকে’ প্রজেক্টে অভিনয় করতেই পছন্দ করি। আপনাকে আগেও আমি গল্প করতে-করতে বলেছি, আমার ছবিতে টুইস্ট থাকে। ফলে লেসবিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অনেক ভিডিয়ো দেখেছি ইউটিউবে। হলিউডের ভিডিয়ো দেখেছি প্রচুর। গে মানুষ তো আমার ইন্ডাস্ট্রিতেই অনেকে আছেন। কিন্তু লেসবিয়ানদের কম দেখেছিলাম। এই ছবি করতে গিয়ে তাঁদেরকেও কাছ থেকে দেখেছি। তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অন্যরকম হয়। লেসবিয়ান কাপলদের মধ্যে ‘পুরুষ’ পার্টটা প্লে করেছি আমি। এটুকু বলতে পারি লেসবিয়ান মেয়েরা অনেক নরম ধাঁচের মানুষ হন। লেসবিয়ান কাপলরা একে-অপরকে অনেকবেশি টেক কেয়ার করেন।
রামগোপাল ভর্মা আপনার এই পারফরম্যান্স দেখে কী বলেছেন?
সেটা যখন তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন, নিজেই বলে দেবেন।
ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলেননি?
সেটা তো বলেইছেন। বলেছেন, সুপার পারফরম্যান্স!
তা হলে তো আর কোনও কথাই নেই…
কিন্তু আমার কাছে অডিয়েন্স অনেক বড় ব্যাপার। ওদের ভাল লাগলেই আমার শান্তি। সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক পরিশ্রম করেছি।
নলিনীর সঙ্গে কিরণময়ীয়ের দেখা হলে কী হবে?
ও মাই গড! নলিনী কিরণময়ীকে সব দুঃখ থেকে বাঁচাবে।
আর যদি নয়নার সঙ্গে নলিনীর দেখা হয়?
কোনও দিনও হবে না। নয়না দেখা করবে না। নয়না পোঁ-পোঁ করে পালাবে… ওর তাকানো দেখলেই আমি দে ছুট! এই ছবিতে অভিনয় করার পর আমাকে অনেক লেসবিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ করে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি কিন্তু পালিয়েছি…
কলকাতায় আর কাজ করবেন না?
বাইরেই তো ভাল আছি। বাহুবলী, অর্কা মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করে নিয়েছি, জীবনে আর কী চাই।
গ্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ
আরও পড়ুন: Bidisha-Leena-Guddi: বিদীপ্তা-সুদীপ্তার মেজো বোন বিদিশা এখন লীনার লিগে!