Sexuality Academy: পাঁচ দিনের আবাসিক পাঠশালায় পাঠ লিঙ্গ-যৌনতাবোধের, উদ্যোগে পূর্ব ভারতের প্রথম রেজিস্টার্ড এলবিটিকিউ সংগঠন

Sexuality Academy: পূর্ব ভারতের প্রথম রেজিস্টার্ড এলবিটিকিউ (সমকামী-উভকামী ও রূপান্তরকামী নারী) অধিকার সংগঠন 'স্যাফো ফর ইক্য়ুয়ালিটি' (Sappho For Equality)-তে, যা গত বছর ২০২১-এ পা দিয়েছে ২২-এ। স্য়াফো-র উদ্যোগে আগামী ৯ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে 'যৌনতার পাঠশালা'

Sexuality Academy: পাঁচ দিনের আবাসিক পাঠশালায় পাঠ লিঙ্গ-যৌনতাবোধের, উদ্যোগে পূর্ব ভারতের প্রথম  রেজিস্টার্ড এলবিটিকিউ সংগঠন
Follow Us:
| Updated on: Feb 25, 2022 | 9:52 PM

অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

স্যাফো (Sappho): আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকের গ্রিক মহিলা কবি। গ্রিসের লেসবস দ্বীপের অধিবাসিনী স্যাফোর অনুগামিনীর সংখ্যা ছিল বহু। তাঁরা সবাই ছিলেন সমকামী নারী। ‘লেসবস’ থেকেই ‘লেসবিয়ান’ শব্দটির উৎপত্তি।

১৯৯৯-এ ছ’জন সমকামী নারী কলকাতায় নিজেদের জন্য তৈরি করেন সাপোর্ট গ্রুপ ‘স্যাফো’। ২০০৩-এ এই ‘স্যাফো’-ই পূর্ব ভারতের প্রথম রেজিস্টার্ড এলবিটিকিউ (সমকামী-উভকামী ও রূপান্তরকামী নারী) অধিকার সংগঠন হিসেবে পরিণত হয় ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’ (Sappho For Equality)-তে, যা গত বছর ২০২১-এ পা দিয়েছে ২২-এ। স্যাফো-র উদ্যোগে আগামী ৯ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ‘যৌনতার পাঠশালা’ (Sexuality Academy)। গত ৩০ জানুয়ারি স্যাফো-র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে যে ২টি পোস্ট হয়েছে, তার একটিতে এই ‘যৌনতার পাঠশালা’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে, যার দ্বিতীয় স্লাইডে লেখা: “… আমাদের দশম ‘যৌনতার পাঠশালা’ (Sexuality Academy) বসছে ০৯-১৩ মার্চ, ২০২২। এই পাঁচ দিনের আবাসিক পাঠশালায় লিঙ্গ-যৌনতা ও তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা সামাজিক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা হবে ও মূল বিষয়গুলিকে বোঝার চেষ্টা করা হবে। পাঁচ দিনের এই চর্চা চলবে মূলত বাংলা ভাষায়।” পূর্ব-ভারতের নারীর যৌনতার প্রথম অধিকার আন্দোলনের প্রথম কালেক্টিভ স্যাফো-র একজন প্রতিষ্ঠাতা মীনাক্ষী সান্যাল ওরফে মালবিকা ও স্যাফো-র সদস্য সুমিতা বীথি—যাঁদের সম্পাদনায় স্যাফো-র ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত বছর  সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই ‘মোনোলগ: দুই বাংলার লেসবিয়ান-কথন’, যাতে রয়েছে এ পার-ও পার বাংলা মিলিয়ে মোট ২২ জন লেসবিয়ানে জীবনের বয়ান—এ বারের ‘যৌনতার পাঠশালা’ নিয়ে কথা বললেন TV9 বাংলা-র সঙ্গে।

প্রশ্ন: ১৯৯৯-এর ২০ জুন তৈরি হয়েছিল স্যাফো—পূর্ব ভারতের প্রথম ও একমাত্র সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী নারীদের সহায়ক সংস্থা। স্যাফো-র প্রথম মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ২২ জন। সেখান থেকে ২০২২-এর দশম ‘যৌনতার পাঠশালা’… জার্নিটা সহজ ছিল না মোটেই। ফিরে তাকালে স্যাফো-র এই যাত্রাপথে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে বাধা কী ছিল বলে মনে হয়?

উত্তর: ১৯৯৯-এ—স্যাফো-র একেবারে শুরুর দিকে—রূপান্তরকামী বা ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা প্রচলিত শব্দ হিসেবে আমাদের ভোকাবুলারিতে সেভাবে আসেনি, সেভাবে ব্যবহৃত হত না। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ট্রান্স-ইস্যুটা সেভাবে বুঝতে পারিনি। তাই ১৯৯৯-এ সমকামী আর উভকামীদের ইমোশনাল সাপোর্ট গ্রুপ হিসেবে তৈরি হয় স্যাফো। পরবর্তীতে আমরা রূপান্তরকারী পুরুষদের নিয়ে আসি।

প্রথম বাধা: কমপ্লিট সাইলেন্স। একটা প্রচণ্ড নীরবতা ছিল সেক্সুয়ালিটি, যৌনতা অথবা যৌনতাবোধ নিয়ে। হোমোসেক্সুয়ালিটি অথবা সমকামিতা তো বাদই দিলাম, যৌনতা নিয়েই সেভাবে আলোচনা হত না। এটা নিয়ে এতটাই নীরবতা ছিল যে, সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল সে সময়।

দ্বিতীয় বাধা: কমিউনিটির মানুষের মধ্যেও এই অসম্ভব নীরবতাকে কেন্দ্র করে একটা পাপবোধ কাজ করছিল। কারণ সমকামিতাকে দেখা হত পাপ-পুণ্যের প্রিজ়ম দিয়ে। এবং যদি নারী সমকমী হন, তাহলে ‘এ বিয়ে করতে চায় না’, ‘এ বাচ্চা চায় না’ গোছের কথা বলা হত কারণ সন্তান উৎপাদন বা সন্তান ধারণটাই মুখ্য ছিল। কাজেই যা হওয়ার তাই-ই হয়েছিল… আমাদের কমিউনিটির মহিলাদের মধ্যেও একটা ভীষণ ইন্টার্নালাইজ়ড হোমোফোবিয়া কাজ করত সে সময়। তাঁরা নিজেদের এই যৌনতাবোধকে চাপা দিয়েই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে, কেউ-কেউ সন্তান লালন-পালন করেছেন। এক দিকে, কমিউনিটির ইন্টার্নালাইজ়ড হোমোফোবিয়া, অন্য় দিকে, বৃহত্তর সমাজের মানসিকতায় হোমোফোবিয়া—এই দু’টোর একসঙ্গে মোকাবিলা করাই ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং।

আর তৃতীয় তথা শেষ বাধা: ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নং ধারা, যা সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করত। ফলে কেউ জেনে গেলেই সে ক্রিমিনাল… তাই ভীষণ ভয়। এই ভয়ের রাজনীতি ভীষণভাবে কাজ করেছে। এটা ভীষণ বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এবং সেই কারণেই মীনাক্ষী সান্যালকে মালবিকা হতে হয়েছিল, কারণ তাকে তো কাজটাও করতে হবে। বিষয়টা নিয়ে কথা তো বলতেই হত, কিন্তু সে পাবলিক সেক্টরে চাকরি করত তখন… এই ধরনের অনেকে, যাঁরা আমার সাথী ছিলেন, তাঁদের কেউ-কেউ আবার সরকারি চাকরি করতেন। অথবা সরকারি চাকরি করতেন না যাঁরা, তাঁদের অনেকে ডুয়াল আইডেন্টিটি নিয়ে থাকতেন। তাঁদের অনেকের সিউডো নাম ছিল।

আর একটা সমস্যা ছিল: কমিউনিটির মানুষদের পরিবার থেকে অকথ্য অত্যাচার। এবং সে (কোনও সমকামী নারী) যদি একবারের জন্যও বলে ফেলত ‘আমি কোনও পুরুষকে বিয়ে করে তার বা আমার জীবন নষ্ট করব না’, তখন তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হত। যেন সমকামিতার দাওয়াই ছিল জোর করে বিয়ে দেওয়া। সেটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

প্রশ্ন: প্রথম যৌনতার পাঠশালা থেকে দশম যৌনতার পাঠশালা… উদ্যোক্তা হিসেবে এই ১০ বছরে পাঁচটা ‘টেক অ্যাওয়ে’ কী-কী?

উত্তর: প্রথমেই যেটা বলব, সেটা হল যৌনতাকে কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে না-দেখা। যৌনতার সঙ্গে যে জাত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, জীবিকা—এগুলোর গভীর সম্পর্ক রয়েছে, সেটা স্টুডেন্ট পপুলেশন, অন্যান্য বিভিন্ন পেশায় যুক্ত রয়েছেন যাঁরা এই যৌনতার পাঠশালায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে আসেন, তাঁদেরকে এটা বোঝানো বা বুঝতে সাহায্য করা যে, যৌনতা কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। যার ফলে তাঁরা ফিরে গিয়ে যৌনতাকে কোনও একক লেন্স দিয়ে আর না-দেখেন। আমার বিশ্বাস তাঁরা পরবর্তী সময় আর আগের মতো করে দেখেন না। বা দেখলেও অন্তত বিবেকের খোঁচাটা খান।

আরেকটা বিষয় হল, বিগত নয় বছরে অনেক অংশগ্রহণকারী তাঁদের ইন্টার্নালাইজ়ড হোমোফোবিয়াকে জয় করতে পেরেছেন। এই পাঠশালায় অংশগ্রহণের জন্য যখন কেউ আবেদন করেন, তখন তাঁরা গুগল ফর্ম-এ লেখেন অথবা তাঁরা যে ই-মেল পাঠান, সেখানে যে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়, তাতে কোথাও সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন লিখতে হয় না। ফলে কমিউনিটির মানুষ যেমন আবেদন করেন, তেমনই কমিউনিটির বাইরের মানুষও আবেদন করেন। সেক্ষেত্রে এখানে যে সেফ স্পেস তাঁরা পান, তার ফলে নিজের আইডেন্টিটি নিয়ে যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তাঁদের থাকে অথবা যে ইন্টার্নালাইজ়ড হোমোফোবিয়া থাকে, তা তাঁরা অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হন। এবং সেই হিসেবে বলতে পারি এটা অবশ্যই একটা টেক-অ্যাওয়ে যে, গত ৯টি ‘সেক্সুয়ালিটি অ্যাকাডেমি’তে ওই সেফ স্পেস-এ অনেকে কাম আউট করতে পেরেছেন।

আরেকটা বিষয় যেটা বলা যায়, তা হল: যত দিন এগিয়েছে, ততই দেখেছি অংশগ্রহণকারীদের প্রোফাইলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। অনেক আগে কী হত, আমাদের মতো যাঁরা সমাজকর্মী, তাঁদের ছাত্রছাত্রী—মানে যে ইয়ুথ পপুলেশন বা যুব সম্প্রদায়—তাঁদেরকে বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করতে হত। পরবর্তীতে তাঁদের অনেকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এখন যাঁরা আসেন, তাঁদের প্রোফাইলে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। ডান্সার আবেদন করেছেন। থিয়েটার প্র্যাকটিশনার আবেদন করেছেন। আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) প্রফেশনালও আবেদন করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের  অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আবেদন করেছেন, স্কুল টিচারও আবেদন করেছেন। এর থেকে বোঝা যায় বিষয়টা সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ বাড়ছে। লিঙ্গ এবং যৌনতাকে যে স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে বুঝতে হবে, সেটার আকাঙ্ক্ষাটা স্পষ্টভাবে তৈরি হচ্ছে। এটা অবশ্যই আমাদের কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি। আর এই ‘যৌনতার পাঠশালা’কে যে আমরা আবাসিক বা রেসিডেন্সিয়াল করেছি, সেটা ইচ্ছে করেই করেছি। এই যে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা-৯টা অব্দি থাকা হয়, চর্চা হয়, ফিল্ম দেখানো হয়, নিজের মধ্যে প্রচুর মজা হয়… একসঙ্গে এতগুলো ঘণ্টা কাটানোর ফলে একে-অপরের মধ্যে একটা বন্ড বা যোগসূত্র স্থাপিত হয়। হোমোসেক্সুয়াল-হেটেরোসেক্সুয়ালের বিভেদটা খুব অর্গ্যানিক্যালি ভেঙে যায়। এটা পরবর্তীকালে আমাদের আরও সহানুভূতিশীল সহ-নাগরিক করে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রশ্ন: এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়কে নিয়ে আলাপ-আলোচনা আগের চেয়ে সন্দেহাতীতভাবে বেশি হলেও এখনও তা অনেকাংশেই শহরকেন্দ্রিক, এলিটিস্ট—এহেন অভিমত বা অভিযোগ প্রসঙ্গে কী বলবেন?

উত্তর: এই ধারণাটা যে কতটা ভুল, সেটা গত ২৩ বছর ধরে নিজের লিভড এক্সপেরিয়েন্স থেকে বুঝেছি। আমি এটাকে ঠিক অভিযোগ বলব না, বরং না-জানার কুফল বলব। একটা সময় পর্যন্ত সমকামিতা নিয়ে, যৌনতা নিয়ে কোনও রকম আলাপ-আলোচনাই হত না। কমপ্লিটলি ডিনায়েল মোড। যেন বিষয়গুলো এগজ়িস্ট-ই করে না। এরপর রিলিজ় করল ‘ফায়ার’ (১৯৯৮), যা মেয়েদের সমকামিতা নিয়ে যে পর্দাটা ছিল, সেটাকে সরিয়ে দিল। সেটা নিয়ে চর্চা শুরু হল। আলোচনা, প্রতি-আলোচনা (কাউন্টার ডিসকাশন) শুরু হল। যারা সেই সময় একটু-একটু করে কথা বলছে… স্যাফো-র মতো সংস্থা অথবা যে সব সংস্থা স্যাফো-র আগে থেকে কাজ করছে… যারা পুরুষ সমকামিতার বিষয়ে কথা বলেছে… মানুষ যখন ধীরে-ধীরে কথাগুলো বলছে, শুনছে… বরং আমি বলব ‘ক্রিয়েটেড রিপলস’… মানে স্থির জলের মধ্যে কয়েকটা ঢিল আর ছোট-ছোট কয়েকটা ঢেউ তৈরি হওয়ার মতো ব্যাপার… এটা তো সত্যি যে বিষয়গুলো একটা সময় পর্যন্ত শহরকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু তারপর ধীরে-ধীরে যত সময় এগিয়েছে, অনন্তপক্ষে আমি স্যাফো-র কথা বলতে পারে… স্যাফো গত ৮-৯ বছর ধরে শহর থেকে শহরতলি, শহরতলি থেকে গ্রাম এই জায়গাগুলোতে একটু-একটু করে যাওয়া শুরু করেছে। এবং এখন যখন জেলা শহর থেকে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে আমরা যাচ্ছি, তখনও কি বিষয়টা শুধুমাত্র এলিটিস্টদের মধ্যে আবদ্ধ? এমনটা তো নয়। এবং যেখানে সমকামিতা একটা চিরসত্য, এবং গ্রাম-শহর, বড়লোক-গরিব, শিক্ষিত, পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত মানুষ, উচ্চবিত্ত, এলিটিস্ট, নিম্ন বর্ণের মানুষ, দলিত মানুষ এবং যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল… সমস্ত স্তরের সমস্ত মানুষের মধ্যে… জিও-লোকেশন ব্যতিরেকে… গ্রাম-তস্য গ্রাম থেকে শহর এবং মেগাসিটি সমস্ত জায়গাতেই রয়েছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে: আমরা তাঁদের কতটা কাছে যেতে পারছি? যেখানে পৌঁছতে পেরেছি, যতটুকু পৌঁছতে পেরেছি, বিষয়টা নিয়ে চর্চা হয়েছে। রেজ়িস্ট্যান্সও এসেছে। রেজ়িস্ট্যান্সটাকে কনফ্রন্ট করেছি। একটা সময় তাঁদের সঙ্গে এক ধরনের হৃদ্যতা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি সেই এলাকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলতে-বলতে। কিন্তু সবটা তো পেরে উঠিনি। আজকে এতগুলো বছরেও কি সবটা পেরে উঠেছি? পারিনি তো। তাই-ই এই অভিযোগটাকে আমি সর্বৈব মিথ্যে বলব আজকের দিনে দাঁড়িয়ে। এই অভিযোগটা যদি তুমি ১০ বছর আগে করতে, তাহলে আমি বলতাম হ্যাঁ। কারণ তখন যাঁরা সমকামিতাকে নিয়ে কথা বলতেন, আমরা সেই মানুষদের বলতাম, ‘সমকামিতা নিয়ে কথা বলতে হয়, নতুবা পিছিয়ে পড়তে হয়’। কারণ সেটা কোথাও একটা সাইন অফ প্রগ্রেসিভনেস। তুমি কি সেটাকে এলিটিজ়ম বলবে? আমি জানি না সেটা। কিন্তু প্রশ্নটা কী জানো। যখন কেউ অ্যালিগেট অথবা অভিযোগ করেন, তখন তো তার একজন অভিযোগকারী অথবা অভিযোগকারিণী থাকে, এক্ষেত্রে এই অভিযোগকারী কারা? সেটা আমার প্রথম প্রশ্ন। আসলে আমাদের এভাবে ভাবতে হবে যে চর্চাটা অত্যন্ত জরুরি। এবং সেই চর্চাটা যত বেশি হবে, মানুষের মধ্যে ততই এই ধারণাটা তৈরি হবে যে, ‘অপর’ করে তোলার যে রাজনীতি, অর্থাৎ এরা জানে আর অন্য় জনেরা জানে না… এবং কেউ বলবেন এটা শহরকেন্দ্রিক, কেউ আবার বলবেন এটা শহরতলিকেন্দ্রিক, কেউ বলবেন এটা কলকাতাকেন্দ্রিক, কেউ বলবেন ছোট-ছোট শহর তো আমাদের রাজ্যে অনেক আছে, সেখানে তো সেভাবে কথা হয় না এই বিষযগুলো নিয়ে… ফলে কেউ বলবেন মেগাসিটিকেন্দ্রিক… কিছু অভিযোগ তো সবসময়ই থাকে… কারণ কিছু মানুষ সবসময়ই অভিযোগ করেন… কিন্তু সেই অভিযোগ সর্বৈবভাবে সত্য়ি নয় মোটেই… এখন অনেক বেশি মানুষ ডাকছেন… এবং আগামিদিনে আমার বিশ্বাস এই বিষয়ে আরও-আরও কথা হবে… মানুষজন তো এই সেক্সুয়াল অ্যাকাডেমিতে আসছেন কাঁথি থেকে, নদীয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে, মুর্শিদাবাদ থেকে, উত্তরবঙ্গের জেলা শহর বা শহরতলি থকে… তাহলে আর এটাকে কি আমি এলিটিস্টি টপিক বলে অভিযোগ করতে পারি? মোটেও না।

প্রশ্ন: সেইজন্যই কী এবারের পাঠশালার আয়োজন শহরের বাইরে?

উত্তর: না তো। যৌনতার পাঠশালা প্রথম থেকেই শহরের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়। অনেকটা দূরে যেতে পারি না, ঠিকই। তবে সবসময়ই শহরের বাইরে করি। কখনওই কলকাতায় হয় না। বরং বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, মফস্বল থেকে—যেটা একটু আগে বলছিলাম—অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

প্রশ্ন: ‘মোনোলগ: দুই বাংলার লেসবিয়ান-কথন’ বইয়ের এ পার-ও পার বাংলা মিলিয়ে মোট ২২ জন লেসবিয়ানের কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কথাগুলো এখনও বলা হল না বলে মনে হয়?

উত্তর: কত কথাই তো বলা হয়নি… বরং বলব বলা হয়ে ওঠেনি। আসলে ‘মোনোলগ: দুই বাংলার লেসবিয়ান-কথন’ অতিমারির যে আবহে তৈরি হয়েছে—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে—আমরা ভেবেছিলাম গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে সাক্ষাৎকার নেব। যাদের কথা শুরু হয়েছে রাতে, কথা বলতে-বলতে ভোর হয়ে গিয়েছে কখন… তিনি নম্বর জোগাড় করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। এবং এরকম বহু-বহু মানুষ… কী যে অসাধারণ… কী যে জটিল, গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী আমি হয়েছি কী বলব… যদি পারতাম তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলতে যেতে—এমন নয় যে পরে আর যেতে পারব না… অতিমারির সময় গিয়ে উঠতে পারলাম না লকডাউনের জন্য… এটা আমাদের চরম আক্ষেপ যে আমরা পেরে উঠিনি। আর ২২টা ন্যারেটিভ তো কিছুই নয়… ২২২টা ন্যারেটিভ, কথন থাকলেও সব কথা শোনা বা বলা হয়ে উঠত না… সেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যতটা সত্য, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও ততটাই সত্য।

প্রশ্ন: Pink Line: Journeys Across The World’s Queer Frontiers বইয়ের Author’s Note-এর Slogans From Transgender Movement-এ উল্লিখিত একটা স্লোগান হল “My gender identity is who I go to bed as, my sexual orientation is who I go to bed with.” বিভিন্ন সময় লিঙ্গ আর যৌনতাকে অভিন্ন হিসেবে দেখার যে পরিচিত প্রবণতা রয়েছে সমাজে, সেটা কি নিছকই অজ্ঞতা থেকে নাকি এই ‘গুলিয়ে ফেলা’র পিছনে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে ‘গুলিয়ে দেওয়া’র সচেতন রাজনৈতিক প্রয়াস?    

উত্তর: লিঙ্গ-যৌনতাকে একসঙ্গে জুড়ে দেখার প্রয়াস ভুল কিছু নয়, আমরা স্যাফো-র কাজের মধ্যেও লিঙ্গ আর যৌনতাকে একসঙ্গে ধরে এগোনোর চেষ্টা করেছি, এখনও করি। অর্থাৎ যৌনতার বিষয়টাকে বাদ দিয়ে লিঙ্গকে শুধুমাত্র শরীরনির্ভর চিহ্ন বলে ধরে নেওয়ার যে প্রবণতা নারী আন্দোলনের ছিল, সেটাকে প্রশ্ন করার জন্য লিঙ্গ-যৌনতাকে একসঙ্গে ধরে বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমার লিঙ্গ-পরিচয় এবং আমার যৌন-পরিচয় পুরোপুরি একে-অপরের মধ্যে মিলেমিশে আছে। নারী আন্দোলন যেমন যৌনতাকে প্রায় বাদ দিয়ে (যৌন হিংসা ছাড়া) লিঙ্গভিত্তিক অবস্থানকে বুঝত, তেমনই আবার শুধু যৌন আচরণের ভিত্তিতে লিঙ্গ এবং যৌনতাভিত্তিক পরিচয়ের মতো জটিল জিনিসকে বোঝার চেষ্টা বিষয়টাকে লঘু করে দিতে পারে। লিঙ্গ এবং যৌনতার (‘সেক্সুয়ালিটি’র বাংলা পরিভাষা হিসাবে আমি ‘যৌনতাবোধ’ ব্যবহার করে থাকি) মধ্যে অবশ্যই খুব গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু কার সঙ্গে বিছানায় যাই, শুধু তার ওপরে আমার যৌনতাবোধ নির্ভর করে না এবং কী হিসাবে বিছানায় যাই শুধু তাই উপরেও আমার লিঙ্গভূমিকা নির্ভর করে না। আমি জন্মসূত্রে নারীচিহ্নিত শরীরের অধিকারী হয়ে আরেকজন জন্মসূত্রে নারীচিহ্নিত মানুষের সঙ্গে বিছানায় গিয়েও নিজেকে নারী ও লেসবিয়ান না-বলে নন-বাইনারি, প্যানসেক্সুয়াল, অ্যারোম্যান্টিক, অ্যাসেক্সুয়াল, ক্যুইয়ের বা এরকম নানা পরিচয়ে পরিচিত করতে পারি।

পরিচয়ের জটিলতা বা বহুমাত্রিকতাকে আপাতদৃষ্টিতে ‘সরল’ করে দেওয়ার মধ্যে একধরনের রাজনীতি তো আছেই। কাকে ‘খাঁটি ভারতীয়’ বলে সেই ‘সরল’ অঙ্ক যেমন বিশেষ রাজনীতির গন্ধ বহন করছে, তেমনই ‘খাঁটি ট্রান্স’, ‘খাঁটি গে’ ইত্যাদি তকমার ‘সরল’ অঙ্কের মধ্যেও মূলস্রোত বা সংখ্যাগুরুর রাজনীতি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন: যৌনতার পাঠশালা ২০২২-এ অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ধার্য করা হয়েছে ২০-৩৫। লিঙ্গ-যৌনতা সম্পর্কে স্পষ্ট, অকপট ধারণা তৈরি করার ক্ষেত্রে একেবারে স্কুলস্তর থেকে কী-কী উদ্যোগ নেওয়া যায় বা উচিত?

উত্তর: যৌনতার পাঠশালায় স্যাফো-র মূল লক্ষ্য থাকে তরুণসমাজের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। তাই-ই ২০-৩৫ এই বয়সসীমা ধার্য করা হয়। আমরা আলাদা করে স্কুলস্তরের ছাত্রী-ছাত্রদের মধ্যেও লিঙ্গভূমিকা-যৌনতাবোধ নিয়ে চর্চা করা শুরু করেছি, যেখানে ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ছাত্রী-ছাত্ররা অংশগ্রহণ করছে। অবশ্যই এর জন্য স্কুলের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে। এঁরা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) এটাকে মূলত জেন্ডার ট্রেনিং হিসাবেই ধরেছেন। এখন আমরা যে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছি, সেখানে ছাত্রী-ছাত্র ছাড়াও শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের সঙ্গেও ওয়ার্কশপ হওয়ার কথা। আশা করব তাতে স্কুলের আবহাওয়া আর একটু সহজ হবে, বিশেষত ট্রান্স-আইডেন্টিফাইং মানুষদের জন্য।

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় ছোটদের আমরা চির-ছোট করে রাখতে চাই এবং এই ইনফ্যান্টালাইজ়েশনের মধ্যে দিয়ে বড়রা তাঁদের চির-বড়ত্ব ধরে রাখতে চান। এর মধ্যে প্রবলভাবে অধিকারহননের রাজনীতি লুকিয়ে থাকে, যা আমরা দেখতেই চাই না। ছোটরা তাদের মানসিক অবস্থান অনুযায়ী প্রাপ্তমনস্ক, এইটুকু ধরে এগোলেই কিন্তু লিঙ্গভূমিকা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত যৌনতাবোধের চর্চা আদৌ নিষিদ্ধ না… সুড়সুড়ি দেওয়া গল্প হয়ে থাকে না। সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম ও রাষ্ট্র সবাই মিলে কীভাবে সেক্স-জেন্ডার-সেক্সুয়ালিটির একটাই ছক আমাদের মাথায় গেঁথে দিয়েছে, চাইলে যে আমরা সেই আবশ্যিক ছককে চ্যালেঞ্জ করতে পারি এবং আমি নিজে চ্যালেঞ্জ না করলেও যে করছে, তার পাশে দাঁড়াতে পারি–আমার তো মনে হয় স্কুলস্তরে এইটুকু ঘটাতে পারলে বাকিটা ওরা নিজেরাই বুঝে নেবে। আমার বিস্তর ভরসা আছে আজকের ছোটদের প্রতি।

প্রশ্ন: এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়কে নিয়ে আলাপ-আলোচনায় প্রতিটি গোষ্ঠী নিয়েই সমান আলোচনা হয় বৃহত্তর পরিসরে? নাকি এলজিবিটিকিউআইএ+-এর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠী নিয়েই চর্চা বেশি হতে দেখা যায়? কেন হয় এমনটা?

উত্তর: এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কে, কতটা এগিয়ে এসে নিজেকে দৃশ্যমান করতে পেরেছে, কার দুঃখের সঙ্গে আমজনতা কতটা একাত্মবোধ করছে, রাষ্ট্র কাকে কতটা তোল্লাই দিচ্ছে এবং কেন–এই সবই আছে। এবং এটা স্থান ও সংস্কৃতিনির্ভরও। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘হিজড়া’ পরিচয়ের অর্থ সম্পূর্ণ গুলিয়ে দিয়ে ট্রান্স এবং হিজড়াকে এক করে ফেলার চোটে একদিকে যেমন ট্রান্সকে আলাদা করে পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছে নিজেদের, তেমনই চেনা পরিচয়ের সঙ্গে যা হোক একটা যোগ থাকার জন্য ট্রান্সওম্যান পরিচয়কে মোটামুটি মেনে নেওয়া সহজ হয়েছে আমজনতার পক্ষে। ট্রান্সম্যান এই গ্রহণযোগ্যতা আদৌ পায়নি।

ট্রান্সনারী দৃশ্যমানতায় অনেক এগিয়ে আছেন, এঁরা বহুদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন, হিজড়া হিসাবে গুলিয়ে দিলেও এঁদের কথা আমজনতা জানে। এখন তো সরকারের কাছেও ট্রান্স বলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জনগোষ্ঠীর খবর আছে, তাদের হাতে তুলে দেবার মতো কিছু প্রকল্প-গাজরও আছে। সরকারের চোখে অবশ্য ট্রান্স মানে ট্রান্সনারী, অন্য কোনও হিসাব তাঁরা প্রায় বোঝেনই না।

লেসবিয়ানরাও অনেকদিন ধরে আন্দোলন করে চলেছে, সেই ‘ফায়ার’ ফিল্মের সঙ্গে জুড়ে তাঁদের আন্দোলন জনসমক্ষে এসেছিল। কিন্তু তাঁদের ‘এইডস হয় না’ বলে তাঁরা ফান্ডিং পায়নি, ফলে আলোকিত (এনলাইটেন্ড)-ও হয়নি। তাছাড়া তাঁরা নারীচিহ্নিত শরীরের অধিকারী হয়েও নিজেকের কামনার কথা নির্লজ্জভাবে বলে ও নারীর যে প্রধান কীর্তি, সন্তানধারণ তা করে না, তাই আমজনতা তাঁদের মোটেই ভালো চোখে দেখে না।

পুরুষ সমকামীরা এইডস-এর কল্যাণে একসময় কিছুটা লাইমলাইট পেয়েছিল, এখন সেই ফান্ডিং কমেছে। আর ৩৭৭ নামক আইনটারও ডানা ছাঁটা গেছে। ফলে গে সংক্রান্ত চর্চাও কম হচ্ছে।

সব মিলিয়ে এদেশের চর্চায় ট্রান্সনারী এগিয়ে, ট্রান্স পুরুষ আছে আবার নেই। কারণ ট্রান্স হওয়ার সূত্রে কিছুটা চর্চা হয়, কিন্তু তাঁরা নিজেরা আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠতে চায় কি না জানিনা। নারী সমকামীরা এক দিকে নারী আন্দোলন, অন্য দিকে লিঙ্গ-যৌনতার আন্দোলন, দু’জায়গাতেই প্রাণপণে যুদ্ধ করছে কারণ তাঁদের অবস্থানের মধ্যে একাধিক প্রান্তিকতা রয়েছে। সব থেকে কম চর্চিত সংখ্যালঘু ও জটিল পরিচয়গুলোর মধ্যে আছে– নন-বাইনারি, অ্যাসেক্সুয়াল, বাইসেক্সুয়াল, প্যানসেক্সুয়াল, জেন্ডার-ফ্লুইড ইত্যাদি… যাদের চট করে খোপে ভরে ফেলা যায় না।

প্রশ্ন: ‘মোনোলগ: দুই বাংলার লেসবিয়ান-কথন’ বইয়ের ভূমিকাতে লেখা হয়েছে: “…সমকামী মানুষদের পরিচিতির অনুসন্ধানে এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার লড়াইয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা”র কথা। সেই সঙ্গে এ-ও লেখা হয়েছে যে “এই সোশ্যাল মিডিয়ার ফলেই এই মানুষগুলো এখন অনেক বেশি দৃষ্টিগোচর, আক্রম্য, অরক্ষিত।” এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার এই ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইডের ভূমিকাটা কেমন?

উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর হিসাবে ছোটবেলায় লেখা একটা রচনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে–বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? মোটামুটি সবাই এই রচনা লিখেছি এক সময়, এখন লিখতে বসেছি সোশ্যাল মিডিয়া আশীর্বাদ না অভিশাপ তাই নিয়ে। বিশেষ করে যদি মোনোলগ-এর কথন ধরে বলি তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া এই মানুষগুলোকে সাহায্য করেছে। একলা বসে নিজেকে বিকৃত, অসুস্থ, পাপী বলে ভাবা একজন কমবয়সী মানুষ যদি তার মতো অন্য কারও দেখা পায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বা কোনও সাইট খুঁজে পায় যেখানে তাঁর প্রশ্নের উত্তর মিলছে, তাঁকে গ্রহণ করার মতো বন্ধু যদি খুঁজে পায় অন্তর্জালের মাধ্যমে, তাহলে তো আশীর্বাদই বলতে হবে বিষয়টাকে। আবার আরও হাজারটা বিষয়ের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এলজিবিটিকিউআইএ+ মানুষদের বিষয়টাকেও ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে, কখনো আর্মচেয়ার অ্যাক্টিভিজ়মের জন্য, কখনও ডাইনি-খেদা আয়োজনের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়া জিনিসটাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই… বিজ্ঞান যেমন, ওটাও তেমনই। কে, কীভাবে, কেন এবং কতটুকু ব্যবহার করবে, তার ওপর নির্ভর করে ডঃ জেকিল না মিঃ হাইড, কার পাল্লায় পড়ছি। এটা আমাদের নিজেদেরও ভাবার বিষয়, কাকে কতটা নম্বর দেব, নিজের প্রয়োজনে কতটুকু লাগাব, আর বাকিটা ছেড়ে বেরিয়ে যাব সুবিধামত।

যে টেক্সট ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য এইসব প্রশ্ন নিয়ে বসেছি সেই প্রয়াসকে তো ডঃ জেকিল বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে যদি সমুদ্র-মন্থন নামক কিছু হয়, সেখানে বিষ আর অমৃত দুই-ই উঠবে। এরপর দায়িত্ব আমার, কিছুটা ফেলে বাকিটা গ্রহণ করার।

প্রশ্ন: উদ্যোক্তা হিসেবে এবারের অর্থাৎ দশম যৌনতার পাঠশালা থেকে চাহিদাগুলো ঠিক কী-কী?

উত্তর: প্রত্যেকবার যা আশা করি, এবারের আশাও তাই। খোলাখুলি কথা হবে, লিঙ্গভূমিকা আর যৌনতাবোধের সঙ্গে যুক্ত আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। অংশগ্রহণকারীরা ফাটিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, বিনাযুদ্ধে কেউ কাউকে সুচ্যগ্র মেদিনি ছাড়ব না। আমাদের প্রত্যেকের ইন্টারসেকশনাল অবস্থান ধরে-ধরে নিজেদের জীবন ও স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করব এবং সেই সুত্রে আরও অনেক মানুষের সঙ্গে সম্পর্কসূত্র বুনে তুলব।

প্রশ্ন: পাঠশালাপর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর জীবন জুড়ে তার যে অনুরণন থেকে যায়, সেগুলোই পাথেয় হয়ে থাকে। উদ্যোক্তা হিসেবে এবারের অর্থাৎ দশম যৌনতার পাঠশালা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কতটা রেশ ফেলে যাবে মনে বিশ্বাস?

উত্তর: এর উত্তর তো দেবেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে গত ন’টি পাঠশালার মানুষজনের অনেকের সঙ্গেই যেটুকু যোগাযোগ আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই আবার আমাদের কাজের সঙ্গেও নানাস্তরে যুক্ত, তাতে মনে হয় রেশ ভালই থাকবে। দেখা যাক।

ঋণস্বীকার: 

যৌনতার অনুষঙ্গ/৫০ জন বিদেশি কবি, অনুবাদ: উজ্জ্বল সিংহ

মোনোলগ: দুই বাংলার লেসবিয়ান-কথন, মীনাক্ষী সান্যাল ওরফে মালবিকা ও সুমিতা বীথি সম্পাদিত 

গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস

আরও পড়ুন: অস্কার সম্প্রচারের সময় কমছে, অনুষ্ঠানের আগেই অফ এয়ারে ৮ পুরস্কারের উপস্থাপন