International Woman’s Day 2022: ‘পাত্র চাই’, ফেসবুক কমিউনিটিতে সিঙ্গল নারীদের বিবাহ অভিযান

Women's Day 2022: আমরা মনে করে থাকি ভালবাসার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করার দায় যেন পুরুষ মানুষের। মেয়েরা যদি বলে 'ভালবাসি', তাহলে যেন অনেকটা বেশি হ্যাংলামি হয়ে যাবে।

International Woman’s Day 2022: 'পাত্র চাই', ফেসবুক কমিউনিটিতে সিঙ্গল নারীদের বিবাহ অভিযান
সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযান
Follow Us:
| Updated on: Mar 08, 2022 | 3:05 PM
বছর ২৪-এর মহুয়া। বাড়ি নামখানায়। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। সরকারি চাকরি। লকডাউনে টানা বাড়িতে। জীবনটা কেমন ফাঁকা-ফাঁকা লাগছিল। কী উপায়? সোজা ফেসবুকে পোস্ট। মনের মানুষ চাই। শুনে একটাই প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে তো? একটি মেয়ে, তা-ও আবার শিক্ষিকা… সে কি না প্রেম-প্রস্তাব দিচ্ছে। ওপেন ফোরামে লিখছে আমার একজন মনের মানুষ চাই। তা-ও কি না আবার ফেসবুকে। যেখানে নতুন বন্ধু হলে কিছুদিন আগে পর্যন্ত মা-বাবারা বলতেন, দেখিস সাবধান বুঝে কিন্তু। আর সেই ফেসবুক আজ একপ্রকার মিলনক্ষেত্র। না, পুরো ক্রেডিট অবশ্য মার্ক জ়ুকারবার্গকে দিলে কিন্তু ঘোরতর পাপ করা হবে। কিছুটা ক্রেডিট অবশ্য তাদেরও প্রাপ্য যাঁরা তিন বছর আগে ভেবেছিলেন সিঙ্গলদের (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) জন্য এমন একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে: সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযান। যেখানে ১৮ বছর থেকে যে কোনও বয়সি নারী-পুরুষ নিজেদের ভালবাসার খোঁজ পেতে পারেন।
খুবই অদ্ভুদভাবে আমরা মনে করে থাকি ভালবাসার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করার দায় যেন পুরুষ মানুষের। মেয়েরা যদি বলে ‘ভালবাসি’, তাহলে যেন অনেকটা বেশি হ্যাংলামি হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণাগুলো যে ভীষণভাবে ভুল, তারই প্রমাণ হয়তো এই মহুয়ারা।
কথা হচ্ছিল তরুণিমার সঙ্গে। পেশায় তিনি প্রফেসার। আার সিঙ্গলদের হিল্লে হওয়ার মূল কাণ্ডারিও অবশ্য তিনিই। বলছিলেন এই গ্রুপ থেকে প্রায় ৬৪ জনের বিয়ে হয়েছে। গুছিয়ে সংসার করছেন তাঁরা। দশদিনে একলক্ষ সদস্য হয়েছিল তাঁদের, যা অবিশ্বাস্য। আমরা বলি ফেসবুক থেকে কী আর শেখা যায়। তবে এই গ্রুপ তাঁকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। নিজের বিধবা মায়ের মনের মানুষ খোঁজার পোস্ট দিয়েছিলেন তাঁরই মেয়ে। মেয়ের সেই পোস্ট দেখে তাঁরই প্রেমে পড়ে যায় একটি ছেলে। এমন অনেক মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা রয়েছে।
আর মহুয়া এখন দিব্যি ব্যারাকপুরে জমিয়ে সংসার করছেন। চক্রবর্তী থেকে চট্টোপাধ্যায় হয়েছেন তিনি। একমাসের সংসার সৌভিক এবং মহুয়ার। প্রশ্ন ছিল: অস্বস্তি করেনি? এইভাবে নিজের জন্য বিজ্ঞাপণ দিতে? তাঁর উত্তর, “না তো। আসলে ঐ গ্রুপের অনেকদিনের সদস্য আমি। অনেক সময়ই দেখতাম বহুজন বন্ধু খুঁজছে। ভালবাসার মানুষ খুঁজছে। একদিন মনে হল আমিও তো এমনটা করে দেখতে পারি। দেখতে পারি প্রপোজ় করে। লিখেছিলাম আগে ভাল বন্ধু হয়ে উঠলে তারপর যদি দেখি মনে হচ্ছে হ্যাঁ, সারাজীবন কাটানো যেতে পারে তবেই এগোবো। নয় তো না। সেইভাবেই আমি লিখেছিলাম।” একেই বলে হয় ়তো জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। ব্যারাকপুরের সৌভিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই এসেছিলেন নামখানার মহুয়া। মেয়েদের এইভাবে এগিয়ে আসা, প্রপোজ় করা কীভাবে দেখছেন সৌভিক?”ভাল তো, ওঁর এমন স্পষ্ট ইঙ্গিত আমার তো বেশ লেগেছিল। নিজের মনের কথা তো এই ভাবেই প্রকাশ করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়”, উত্তর সৌভিকের।
তবে মেয়েদের নিজেদের অনুভূতিকে প্রকাশ্যে আনা, তা-ও সোশ্যাল মিডিয়ায়, এ প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ববিদের কী মত? যোগাযোগ করা হয়েছিল অধ্যাপিকা তথা সমাজতত্ত্ববিদ শাশ্বতী ঘোষের সঙ্গে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়: পুরুষশাসিত সমাজের তথাকথিত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নারীরা—সিঙ্গল নারীরা—নিজেদের বিয়ের কথা নিজেরাই বলছেন সোশ্যাল মিডিয়ার কমিউনিটিতে সাবলীলভাবে। এটাকে একধরনের বাঁধনহীন মুক্তমনা চিন্তা হিসেবে তো দেখাই যায়। আপনার কী মত? তাঁর কথায়,”না, আমার মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে একধরণের ‘অ্যাননিমিটি’ দেয়। আপনি যে আপনি সত্যিই কি না, সেটা তো সামনাসামনি না দেখা হলে বলা কঠিন। ফলে আমার নিজের ধারণা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অপরিচিতির গণ্ডিটা লোককে স্বস্তি দেয় বলে লোকে অনেক বেশি সহজ হয়ে কথা বলতে পারে। তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো অনেক সহজে ব্যক্ত করতে পারে। যেটা বাস্তবে একটা মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের খুলতে বা কথা বলতে অনেক সময় লাগে।”

অভিনেত্রী তথা অধ্যাপিকা ঊষসী চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলা হলে পাওয়া গেল অন্য আরও এক ধারণা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সিঙ্গল নারীরা নিজেদের বিয়ের কথা নিজেরাই বলছেন সোশ্যাল মিডিয়ার কমিউনিটিতে—এর গভীরে কোথাও ‘পাত্র চাই’-এর কলামে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মতো পণ্য়ীকরণ (commodification)-এর প্রবণতা কাজ করে যাচ্ছে না তো? তাঁক স্পষ্ট জবাব, “না, তা কেন হবে? আমি আমার জীবনে কী চাই, কী চাই না। আমার কী ভাল লাগা , তার বহিঃপ্রকাশ করছি। তাতে কোনও বাধা থাকতে পারে না। কখনওই তা পণ্যীকরণ হতে পারে না।”
সমাজের এক পক্ষের কথা তো আমরা শুনলাম। কিন্তু আর এক পক্ষ তাঁরা কী বলছে,যাঁদের ব্যক্তিগত জীবন, প্রেম গড়া-ভাঙা প্রতিদিন হেডলাই ন তৈরি করে। সিঙ্গলদের বিবাহ অভিযানে মেয়েদের উপযাজক হয়ে নিজেদের মনের মানুষ জোগাড় করার যে তাগিদ, তা কীভাবে দেখছেন নায়িকারা? কথা হচ্ছিল সন্দীপ্তা সেনের সঙ্গে যিনি অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন সাইকোলজিস্টও বটে।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, বিবাহ অভিযান’—শব্দ দু’টো শুনলেই দূরদর্শনের একটা টেলি-সিরিয়ালের কথা মনে পড়ে যায়। সিঙ্গল নারীদের ‘বিবাহ অভিযান’ নিয়ে যদি সিরিয়াল তৈরি হয়, তাহলে সন্দীপ্তা সেন কোন চরিত্রে অভিনয় করতে চান? কেমন হবে সেই চরিত্র? প্রশ্ন শুনেই একগাল হেসে তাঁর উত্তর, “সিঙ্গল নারী হয়ে বিবাহ অভিযান, মানে হল পাত্র খুঁজতে হবে তাই তো?বেশ ইন্টারেস্টিং হতে পারে। এটা সত্যিই মেগা-সিরিয়ালের গল্প হতে পারে কিন্তু। সে ফেসবুক, টিন্ডার, ইনস্টাগ্রামে গিয়ে পাত্র খুঁজত। কোনওভাবেই লাজুক হত না। লজ্জা পাওয়ারই বা কী আছে? প্রেমে পড়লে, ভালবাসলে বুক চিতিয়ে বলো। ছেলে খুঁজতে হলে বুক চিতিয়ে খোঁজো ছেলে।হ্যাঁ, আমি ছেলে খুঁজছি। আমি প্রেম করতে চাই। বসে থাকব বাড়িতে। কবে বাবা কোনও এক ছেলে গোলাপ নিয়ে আসবে, তা করতে গেলে আমার সব চুল সাদা হয়ে যাবে। দেখো আমি যে কাজই করি না কেন, আমি সবসময় চেষ্টা করি সমাজের তথাকথিত প্রথা বা ধারণাগুলোকে ভাঙার।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই যেমন ‘তুমি আসবে বলে’ ধারাবাহিকে এক বিধবার চরিত্রে অভিনয় করি। মেয়েকে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করি। যা তখন খুব একটা ধারাবাহিকে দেখা যেত না। তাই আমি এমনই একটি চরিত্রে অভিনয় করতে চাইব, যারা বাড়িতে বসে বসে মন খারাপ করে যে আমার কোনও বিশেষ মানুষ নেই, তাঁদেরকে সেই চরিত্রের মাধ্যমে অনুপ্রেরণা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
গ্রাফিক্স ও অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস