Allu Arjun-Pushpa: সর্বভারতীয় মহাতারকার আসনে আল্লু অর্জুন, ‘পুষ্পা’-এ ‘রাইজ়’ অভিনেতার

৭২-এ আনন্দবাবুর যে 'পুষ্পা' ছিল কেবলই এক মাটির নারী, ২০২২-এ সেই কিনা আগুন। ফায়ার! 'পুষ্পা রাজ' করছে গোটা দেশে।

Allu Arjun-Pushpa: সর্বভারতীয় মহাতারকার আসনে আল্লু অর্জুন, 'পুষ্পা'-এ 'রাইজ়' অভিনেতার
'পুষ্পা: দ্যা রাইজ়' সর্বভারতীয় স্তরে আরও বিখ্যাত করে দিয়েছে আল্লু অর্জুনকে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 26, 2022 | 2:22 PM

১৯৭২ সালের ‘অমর প্রেম’-এর ‘পুষ্পা’ শর্মিলা ঠাকুর। রাজেশ খান্নার সেই বিখ্যাত সংলাপ, ‘পুষ্পা আই হেট টিয়ার্স’ (পুষ্পা আমি কান্নাকে ঘৃণা করি)। আজও মুখে মুখে ফেরে সংলাপটি, এতটাই মানুষের মন ছুঁয়েছে। কাট টু – ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দক্ষিণী ছবি ‘পুষ্পা: দ্যা রাইজ়’। ছবির হিরো পুষ্পা রাজ। থুতনির কাছে হাত নিয়ে রুষ্ট ভঙ্গিতে যে বলে, ‘ম্যায় ঝুকেগা নেহি…’। অভিনয়ে আল্লু অর্জুন। দুই যুগের দুটি সিনেমা। মাঝে ৫০ বছরের ব্যবধান। সিনেমা যেমন এগিয়েছে, তেমনই পালটেছে পুষ্পা। ছবি মুক্তির পরপরই গোটা দেশ আল্লুর পুষ্পা সোয়্যাগে ফিদা। ৭২-এ আনন্দবাবুর যে ‘পুষ্পা’ ছিল কেবলই এক মাটির নারী, ২০২২-এ এসে সেই কিনা আগুন। ফায়ার! ‘পুষ্পা রাজ’ করছে গোটা দেশ। আল্লু অর্জুনের অন্তরে প্রবেশ করেছে সে। এখন সারা ভারতে তাঁকে নিয়েই ধন্য ধন্য রব! এমন অভিনেতার অনস্ক্রিন কীর্তি দেখে নড়েচড়ে বসেছে গোটা বলিউডও।

চোরাচালান নিয়ে ছবি। সে ভাবে কোনও প্রোমোশন হয়নি বললেই তলে। ছবি মুক্তির আগে একটি সাক্ষাৎকারে আল্লু এগিয়ে দিয়েছিলেন সহ-অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্ডানাকে। বলেছিলেন, সহ-অভিনেতা রশ্মিকা মান্ডানা জাতীয় ক্রাশ! তারপর দেখা গেল, রশ্মিকা তো বটেই, জাতীয় স্তরে হিলিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লুই। যথার্থ অর্জুনের মতোই মাছের চোখে গেঁথে গিয়েছেন তীর। কোনও প্রোমোশন ছাড়া মানুষের মন ও মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছে পুষ্পা। কোন জাদুকাঠির বলে?

পুষ্পার হিন্দি ডিস্ট্রিবিউশনের রাইটস নিয়েছিলেন গোল্ডমাইনস ফিল্মসের মণীষ শাহ। তিনি জানতেন, কী ঘটতে চলেছে। তাদের টিভি চ্যানেল ডিংচ্যাক টিভি গত দু’বছর ধরে হিন্দি ও ভোজপুরি ভাষায় ডাব করা দক্ষিণ ভারতীয় ছবি সম্প্রচার করে চলেছে। মণীষ আগে থেকে বুঝেছিলেন পুষ্পার হাত ধরে আল্লুর জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁতে পারে। আগেও আল্লুর ছবির দর্শক ছিল। পুষ্পার পর তা নাকি আরও বেড়েছে। মণীষ বলেছেন, “আমাদের চ্যানেলে ১.২ বিলিয়ান ভিউ পেয়েছে আল্লুর ছবি। পুষ্পার প্রচার করেছিলাম আমরা। এখানে একটা কথা বলতেই হচ্ছে, মানুষ মনে করেন আল্লুর চেহারা একটু অন্য ধরনের। হয়তো তাঁকে দেখতেই পুষ্পা রিলিজ়ের প্রথম দিনেই সিনেমা হলে ছুটেছিলেন দর্শক।”

পুষ্পার ডাবিং ভার্শান থেকে প্রথম দিনে ৩ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ১৫০০টি স্ক্রিনে চলেছে ছবিটি। দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৪০০টি স্ক্রিনে দেখানো হয়েছে। ৩-৪ সপ্তাহে যখন সিনেমা হল থেকে ছবি বেরিয়ে যায়, তখনই আরও ২০০-৩০০টি হলে দেখানো শুরু হয়। কেবল হিন্দি ডাবিং থেকে ৯৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ‘পুষ্পা: দ্যা রাইজ়’।

পুষ্পাকে সমালোচনা থেকে মুক্ত করা যায়নি। ছবিতে কিছু ভুলও ধরা পড়েছে সমালোচকদের। কিন্তু একথা সকলেই স্বীকার করেছেন, প্রচারের ব্যাপারে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠে এসেছে এই ছবি। বিশেষ করে ডাব করে ছবিগুলির ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখিয়েছে। মণীষ বলেছেন, “এখন আমাদের স্মার্টফোন ও ল্যাপটপেই আছে সবকিছু। কে বড় বড় হোর্ডিং দেখেন বলুন? বিজ্ঞাপন মনে রাখার মতো বিষয়। তা যদি মানুষ মনেই রাখতে না পারেন, এভাবে প্রোমোট করে তো লাভও নেই।”

দক্ষিণের সুপারস্টার আল্লু অর্জুন। তিনি ছবিতে থাকলে দর্শক সেই ছবি দেখেন। কিন্তু ডাবিং ভার্শানেও যে তিনি সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন, আগে থেকে আন্দাজ করতে পারেননি অনেকেই। উত্তরের আগে কেরলে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিলেন আল্লু। ২০১৮ সালে সিলভার স্ক্রিন ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে অশ্বথি গোপিকৃষ্ণ বলেছিলেন, “আমি আল্লুর ভবিষ্যৎবাণী করতে পারব না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, ‘আরিয়া’ ছবিতে ওঁর আত্মবিশ্বাস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। দারুণ শক্তি ছিল আল্লুর। এরকম অভিনেতা খুব কমই পাওয়া যায়।” ঘটনাচক্রে আল্লুর ‘আরিয়া’ ছবিকে কেরলে এনেছিলেন অশ্বথিই।

ই৪ (E4) এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজক মুকেশ মেহতা পুষ্পার কেরলা রাইটস কিনেছেন। বলেছেন, “আল্লু অর্জুনের জনপ্রিয়তা সাহায্য করেছে। সঙ্গে দোসর হিসেবে হাজির হয়েছে তেলেগু ও মালায়ালাম ভাষায় ছবির মুক্তি।” ছবির গানগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কবে, কোন সময় গান মুক্তি পাবে তাই নিয়ে হোমওয়ার্ক করা হয়েছিল আগে থেকেই। মুকেশের বক্তব্য, “কোনও ছবিকে সর্বভারতীয় স্তরে জনপ্রিয় করতে হলে অন্যান্য ডাবিং ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।” উল্লেখযোগ্য বিষয়, ‘পুষ্পা: দ্যা রাইজ়’-এর হিন্দি ডাবিং করেছেন বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা শ্রেয়াস তালপডে।

ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ বলেছেন, “ছবিটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে অল্পদিনের মধ্যেই। জনপ্রিয়তার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে ছবির ইউটিউব ও স্যাটেলাইট প্রচার। আমজনতার মধ্যে ছবিটি জনপ্রিয় হয়েছে এইভাবেই।”

‘স্পাইডার ম্যান: নো ওয়ে হোম’ ও ‘৮৩’-র সঙ্গেই মুক্তি পেয়েছিল ‘পুষ্পা: দ্যা রাইজ়’। তেমনভাবে প্রচারই হয়নি ছবির। আদর্শের বক্তব্য অনুযায়ী, “অনেক স্ক্রিনে ছবি মুক্তি পায়নি। প্যান্ডেমিকের মধ্যে এই ধরনের সাফল্য আশাতীত। মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়েছে ছবিটি। দারুণ ডাবিংও হয়েছে। শ্রেয়াসের ডাবিং হিন্দি পুষ্পায় প্রাণ দিয়েছে।”

এমনকী, ইনস্টাগ্রামের রিলও ছবির প্রচারের হিতে গুরুদায়িত্ব পালন করেছে। ‘ও আন্তেভা’, ‘শ্রীভল্লি’, ‘আয়ে স্বামী’ গান নিয়ে নানাবিধ রিল তৈরি হয়েছে। সেলেব থেকে আম জনতা সকলেই তৈরি করেছেন রিল। খেলোয়াড় জগতের তারকারাও অংশ নিয়েছেন তাতে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট তারকা ডেভিড ওয়ার্নার যে কেবল শ্রীভল্লির রিল তৈরি করেছেন তা নয়, আল্লুর লুক ধারণ করে ভিডিয়োও পোস্ট করেছেন।

এসবের পর এটাই মনে করছে সর্বভারতের বিনোদন জগৎ – আল্লু অর্জুনের নতুন জন্ম হয়েছে ‘পুষ্পা: দ্যা রাইজ়’-এ। এভাবেই হয়তো স্টারের ‘রাইজ়’ হয়!

আরও পড়ুন: Rashmika Mandanna: করণ জোহরের অফিসে রশ্মিকা মান্ডানা, তিনিই কি তবে পরবর্তী ‘ধর্মা গার্ল’?