প্রিয় পোষ্যের বেবি-বাম্প শুট, আপনি ভাবছেন নাকি?
যদি সেলিব্রিটিদের বেবি-বাম্পের ছবি হু-হু করে ‘লাইকড’ হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাহলে পোষ্যদের ক্ষেত্রে বেবি-শাওয়ার অথবা বেবি-বাম্প শুট না-হওয়ার কি আছে?

মা হতে চলেছে স্টেফি। স্টেফির মা নটক্কি আশা একটি বেসরকারি বি.এড কলেজের প্রিন্সিপ্য়াল। বাবা নবকুমার চিকিৎসক। তেলেঙ্গানার বাসিন্দা ওই দম্পতি মেয়ে স্টেফির সাধ উদযাপন করেছেন ধুমধাম করে। হ্য়াঁ, ঠিকই শুনেছেন। দেড় বছরের স্টেফি। দেড় বছরের স্টেফি একটি ল্যাব্রাডর। সেই স্টেফি-ই মা হতে চলেছে। পোষ্য় স্টেফি ছাড়াও তেলেঙ্গানার ওই দম্পতির রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। পোষ্য স্টেফি, ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। সেই দেড় বছরের স্টেফির সাধ বা বেবি-শাওয়ার অনুষ্ঠানই সম্পন্ন হল তেলেগু মতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে।
এ তো গেল স্টেফির গল্প। কিছুদিন আগে নর্থ ক্যারোলিনার ক্যাটলিন স্নিমান তার পোষ্যর বেবিবাম্প শুট করিয়েছেন। গলায় গোলাপি রিবন পরে দাঁড়িয়ে হবু মা—সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের সঙ্গে সঙ্গে নজর কেড়েছে নেটিজ়েনদের।

সত্যিই তো, যদি ফোটোগ্রাফার-ভিডিয়োগ্রাফারদের সৌজন্য়ে মানুষের বেবি-বাম্প শুট হতে পারে, যদি সেলিব্রিটিদের বেবি-বাম্পের ছবি হু-হু করে ‘লাইকড’ হতে পারে সোশ্য়াল মিডিয়ায়, তাহলে পোষ্যদের ক্ষেত্রে বেবি-শাওয়ার অথবা বেবি-বাম্প শুট না-হওয়ার কি আছে? প্রিয় পোষ্যের বেবি-বাম্প শুট অথবা সাধের অনুষ্ঠান কি এক নতুন ‘ট্রেন্ড’? ‘পেট লাভার’দের মনে এই প্রশ্ন আসা নিতান্ত সঙ্গত।

TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল ‘পেট লাভার’ তথা পশুপ্রেমী সোহিনী সেনগুপ্ত-তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সোহিনী-তথাগতর পশুপ্রেম ইন্ডাস্ট্রির সকলেরই জানা। তথাগতর কথায়, “পশুপ্রেমী হিসেবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে আমার মনে হয়, নিজের ব্যক্তিগত ভালবাসা উদযাপন করার অধিকার সবার আছে। যদিও আমার মতে, যে টাকা দিয়ে পেট (পোষ্য়) বেবি-শাওয়ার হচ্ছে বা বেবি-বাম্প শুট করা হচ্ছে, সেই টাকা দিয়ে যদি কিছু পথ-কুকুরের চিকিৎসা করানো যায়, তাহলে খুব উপকার হয়।” সেই সঙ্গে তথাগতর সংযোজন, “তবে একজন তার পোষ্যকে নিয়ে কীভাবে কোনও অনুষ্ঠান সেলিব্রেট করবেন অথবা তাঁর ভালবাসা কীভাবে ব্য়ক্ত করবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত অধিকার। আমার কথা যদি বলা হয়, তাহলে বলব সেই পরিমাণ অর্থ যদি আমার কাছে থাকে, তাহলে সেই টাকায় আমি পথ-কুকুরদের চিকিৎসা করাব। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়, যার যেটা ভাল লাগে, সে সেটা করবে। ভালবাসাকে নিয়ে উদযাপনের সমর্থনে আমি সবসময়ই রয়েছি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি কি এই উদযাপন করব? তার উত্তর হল ‘না’।”

সোহিনীও তথাগতর সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন এ প্রসঙ্গে। কোনও একটা দিন আলাদা করে পালন করতে নারাজ সোহিনী। তিনি বললেন, “বাবা আমার জন্মদিনে আমাকে দিয়ে বাড়ির কাজ করাতেন। আলাদা করে আমার জন্মদিন পালন কোনওদিন হয়নি। তাই ছানাদের জন্মদিন বা সাধ অথবা এই হাল ফ্যাশনের বেবি-বাম্প শুট… এই কোনও কিছুই আমি সেলিব্রেট করি না, করবও না।” সোহিনীর মতে, তাঁর পোষ্যদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সর্বক্ষণের একজন চিকিৎসক আর অফুরন্ত ভালবাসা। সোহিনীর কথায়, “রাস্তাতেও আমার কিছু ছানা আছে, যারা শুধুমাত্র খাবারের জন্য নয়, একটু আদর, একটু ভালবাসার জন্য় আমার কাছে আসে। সেই রকম সুযোগ পেলে আমি পথ-কুকুরদের চিকিৎসা করাব। তবে এই বিষয়টা একান্তই আমার নিজস্ব।”

বেবি-বাম্প প্রসঙ্গে পেট ক্লিনিকের মালিক দেবাশিস সরকার বলেন, “পোষ্যর বেবি-শাওয়ার বা বেবি-বাম্প শুট পুরোদস্তুর ট্রেন্ডিং, আমার মনে সেটা বলাটা একটু অত্য়ুক্তি হয়ে যাবে। আমি আমার পোষ্যদের ছবি কখনওই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পছন্দ করি না। তবে আমার এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের কাউকেই বেবি-শাওয়ার বা বেবি-বাম্প শুট কিছু করতে দেখিনি।”

বেবি-শাওয়ার বা বেবি-বাম্প শুট সম্পর্কে কী বলছেন ব্রিডার সুরপ্রতীম বাসুলি। পোষ্যদের জন্ম, তারপর তাদের বড় করা এই ব্রিডিং ফার্মের মালিকের চোখের সামনে হয়। ইদানীং বেবি শাওয়ার বা বেবি বাম্প শুটে অনেকে মজলেও সুরপ্রতীমের মতে, “এটা একান্তই অনেকের ব্যক্তিগত ইচ্ছে। তবে কলকাতায় এখনও এই চল শুরু হয়নি। অনেকেই ভাবেন, এসব করলে নজর লেগে যেতে পারে।”
তবে আপনারা যাঁরা নিজেদের প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে কিছু সেলিব্রেট করতে চান, তাঁরা এই ট্রেন্ড ফলো করতেই পারেন। ভালবাসা সেলিব্রেট করতে কি কোনও কারণ লাগে?
গ্রাফিক্স ও অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
