Sandhya Mukhopadhay-Gouri Dey: আমার একটাই দুঃখ ওঁর পাদস্পর্শ পেলাম না: স্মৃতিচারণায় সন্ধ্যাকণ্ঠী গৌরী দে

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Feb 17, 2022 | 1:21 PM

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের স্মৃতিতে TV9 বাংলার জন্য কলম ধরলেন সন্ধ্যাকণ্ঠী গৌরী দে।

Sandhya Mukhopadhay-Gouri Dey: আমার একটাই দুঃখ ওঁর পাদস্পর্শ পেলাম না: স্মৃতিচারণায় সন্ধ্যাকণ্ঠী গৌরী দে
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি কণ্ঠী গৌরী দের।

Follow Us

“যখন তোমার ইচ্ছে হল জন্ম নিলাম মাটির কোলে/আবার যখন ইচ্ছে হবে মরণ ঘুমে পরব ঢোলে”, গীতিকার শ্রী শ্যামল গুপ্তর লেখা ও আমার গুরু শ্রী অনল চট্টোপাধ্যায়ের সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি আমার খুব প্রিয়। আমি ১৯৮২ সাল থেকে মঞ্চে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান গেয়ে পথচলা শুরু করি। আমার নামের আগে লেখা হত দেওয়ালে – ‘সন্ধ্যাকণ্ঠী গৌরী দে’। জীবনে সাড়ে পাঁচশো স্টেজ শো করেছি এবং ওঁর গান গেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি।

‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমার জীবনের অনেকটা জায়গা জুড়ে বিরাজমান। মনে হত, সরস্বতী স্বয়ং কৃপা করে সঙ্গীত শ্রেষ্ঠার গলাটা আমার গলায় বসিয়ে দিয়েছেন। যদি কেউ শুনত আমার কণ্ঠ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো, দেখতাম আমার সম্মান অনেক বেড়ে গেছে। সকলে বলত ওঁর গলা নকল করা খুব কঠিন।

‘পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম’, ‘বাঁধো ঝুলনা’, এই কঠিন গানগুলো কত সুন্দরভাবে গেয়েছেন। গানগুলো যাতে আমিও গাইতে পারি, সেইজন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাসিক্যালে এম মিউজ় করে ফেলি ২০০০ সালে। উনি ছিলেন আমার কাছে মা সরস্বতী ও প্রেরণা। ‘কণ্ঠী’ বলে আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করিনি। এর কারণ আমাকে বলা হয়েছিল কণ্ঠীদের সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পছন্দ করেন না। একবার সতীনাথ মুখোপাধ্যায়কে সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান করি বলেই দর্শক ও শ্রোতাবন্ধুরা আমার গলায় তাঁর গান শুনতেন।

একবার উত্তমমঞ্চে গান গাইতে উঠেছি। শুরু করেছি ‘নতুন সূর্য আলো দাও’ আর শেষ গান ‘তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান’। তরুণকুমার ও মনু মুখোপাধ্যায় বলে উঠলেন ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ ও ‘ওগো মোর গীতিময়’ – এই দুটি গান শোনাতেই হবে। এই অনুরোধগুলো ছিল দর্শকের সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের প্রতি ভালবাসার প্রতীক।

আর একটা অনুষ্ঠানে রাজেন্দ্র জৈনের গান গাওয়ার পরও শ্রোতা আমার গলায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান মন দিয়ে শুনেছেন। এবং উজ্জ্বল দেবরায়ের কণ্ঠে গজল শোনার পর রাত প্রায় ২টোয় গান গাইতে উঠে দেখি শ্রোতা আমার গান মন দিয়ে শুনেছেন। দেখেছি ঘুম থেকে উঠে এসে আমাকে একজন চিরকুট দিচ্ছেন, ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’। এতেই বোঝা যায়, তাঁর গান মানুষের হৃদয় কেড়ে তো নিয়েছেই, ঘুমও কেড়ে নিয়েছে। এতটাই মর্মস্পর্শী ও হৃদয়স্পর্শী উপস্থাপনা ছিল তাঁর গলা।

একবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা সানার মামাভাতে ডোনার মা স্বপ্নাদি বললেন, ‘সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘এ শুধু গানের দিন’ আর ‘মধুমালতী ডাকে আয়’ এই দুটি গান শোনাবি?’ এতে আমার মনে হত কণ্ঠী হয়ে ভালই হয়েছে। তাও আবার যে সে কণ্ঠ নয়, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠী।

আমার একটাই দুঃখ ওঁর পাদস্পর্শ পেলাম না। বিদায় বেলায় এই আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।

স্নেহা সেনগুপ্ত

(অনুলিখন ভিত্তিতে লিখিত)

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Death: গুরু ভাইবোন ছিলাম, বিরিয়ানি খেতে ভালবাসতেন সন্ধ্যাদি: স্মৃতিচারণায় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Death: শোয়ের আগে মৌনব্রত পালন করতেন দিদিভাই: স্মৃতিচারণায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত বাদক প্রতাপ রায়

Next Article