Sandhya Mukhopadhyay Death: শোয়ের আগে মৌনব্রত পালন করতেন দিদিভাই: স্মৃতিচারণায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত বাদক প্রতাপ রায়

জানেন, বললে বিশ্বাস করবেন না। শোয়ের আগে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে যেতেন। ওঁকে সাহস দিতাম আমরাই। আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকতেন। তখন দেখতাম হাত বরফের মতো ঠান্ডা।

Sandhya Mukhopadhyay Death: শোয়ের আগে মৌনব্রত পালন করতেন দিদিভাই: স্মৃতিচারণায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত বাদক প্রতাপ রায়
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও প্রতাপ রায়।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 15, 2022 | 11:04 PM

আমাদের জীবনে ইন্দ্রপতন ঘটল। আপামর বাঙালির হৃদয় খালি করে দিয়ে চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমি মিথ্যা ভাষণ দিতে পারি না। ওঁকে মাতৃ আসনে বসিয়ে রাখতাম। আমার মায়ের মতো ছিলেন। আমি ‘দিদিভাই’ বলে ডাকতাম। অন্তর থেকে মা মনে করতাম। আজ মার্তৃহারা হলাম আরও আবার।

‘দিদিভাই’ নেই… সমস্ত কথা, সমস্ত স্মৃতি মনের মধ্যে ভিড় করে আসছে। কতরকম স্মৃতি। আমার বার বার মনে পড়ে একটা ঘটনার কথা। আমাদের একটি অনুষ্ঠানে পৌঁছতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়েছিল। আমরা গাড়িতে ছিলাম তিনজন। রাত ১০টা পর্যন্ত বসেছিলেন দিদিভাই। ভেবেছিলাম অসম্ভব বকুনি খাব। ওখানে পৌঁছানোর পর প্রথম বলেছিলেন, ‘হাত মুখ আগে ধুয়ে নাও’। ওঁর ধারেকাছে কেউ ছিলেন না। দেখি দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন সকলে। ভয়ে। প্রথম কথা আমাকে বলেছিলেন, ‘প্রতাপ, ফ্রেশ হও, আমি তোমার জন্য চা আনিয়ে রেখে দিয়েছি।’ আমি হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। আমার চোখে জল চলে এসেছিল।

তাই তো বলছি। তিনি আমার মা ছিলেন। মা! ওঁর থেকে জীবনের দ্বিতীয় বার মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলাম। কেবল আমাকে নয়। আমরা মতো সবাইকেই আগলে রাখতেন। আমার পরিবারকেও খুব ভালবাসতেন। আমার মেয়েকে, স্ত্রীকে কত আদর দিয়েছেন। স্ত্রীকে বলতেন মেয়ে। বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলেই তিনি আসতেন। আমার মেয়ের নাম রেখেছিলেন মানি। সেগুলো বার বার মনে পড়ছে। বুকের মধ্যে যন্ত্রণা মোচড় দিয়ে উঠছে।

দিদিভাইয়ের শোয়ের আগে পরে ওঁর সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরতাম। আমার মনে পড়ছে রেকর্ডিয়ের আগে, শোয়ের আগে মৌনব্রত পালন করতেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একটাও কথা বলতেন না। এতবড় মাপের একজন শিল্পী, কোনও দিনও তাঁর মধ্যে সেই দাম্ভিকভাব লক্ষ্য করিনি। জানেন, বললে বিশ্বাস করবেন না। শোয়ের আগে অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে যেতেন। ওঁকে সাহস দিতাম আমরাই। আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকতেন। তখন দেখতাম হাত বরফের মতো ঠান্ডা। ওঁর হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতাম। মনের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করতাম। আর দিদিভাইও সস্নেহে আমার কথা শুনতেন। সে সব জায়গাগুলো তো আর ফেরত পাব না। আজ এই কথাগুলো লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। চোখ ঝাপসা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Death: চলে গেলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতজগৎ আজ ‘মাতৃহারা’

আরও পড়ুুন: Sandhya Mukhopadhyay Death: অপূরণীয় ক্ষতি, সন্ধ্যার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সঙ্গীত জগৎ

আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Death: ‘অপূরণীয় ক্ষতি, অগ্রজাকে হারালাম’, সন্ধ্যার প্রয়াণে শোকবিহ্বল মমতা