টাকা ধার করে তৈরি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উপর একমাত্র তথ্যচিত্র অবহেলিত

Buddhadev Dasgupta: কেবলমাত্র একবার ১৯৯৯ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে তথ্যচিত্র বিভাগ এই ছবি দেখেছে দেশ। কিন্তু কেন?

টাকা ধার করে তৈরি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উপর একমাত্র তথ্যচিত্র অবহেলিত
তথ্যচিত্র থেকে গৃহীত প্রয়াত পরিচালকের ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 26, 2021 | 6:14 AM

নন্দন পাল: বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক মানুষ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি হয় ১৯৯৯-এ। দাদা সাহেব পুরস্কারজয়ী শঙ্খ ঘোষ তৈরি করেন ‘পোর্ট্রেট’। কবি ও পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উপর নির্মিত একমাত্র তথ্যচিত্র। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কবিতা, তাঁর প্রবন্ধ আকর্ষণ করেছিল তরুণ শঙ্খকে। তারপর তাঁর ফিল্ম একটা অন্য পরা-বাস্তব অবকাশ তৈরি করেছিল শঙ্খর মননে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমা থেকেই তিনি সাহস পেয়েছিলেন ছবি তৈরির। যে সিনেমা কবিতার মত সুন্দর, সত্যের মতই অনমনীয় এবং ঋজু। কোথাও যেন দর্শককে টেনে নিয়ে যায় ছবি শেষ হবার পরেও অন্য এক স্বপ্নময় অথচ বাস্তব জগতে। তৈরি করে একটা ব্যঞ্জনা। সেই সময়ে কো-অপারেটিভ এবং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি করেন এই ছবি। শঙ্খ তখন ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের অনুচর। খাতায়-কলমে না হলেও শঙ্খ তখন সহ-পরিচালনায় হাত পাকাচ্ছেন বুদ্ধদেবের প্রোডাকশানে। নিয়মিত পরিচালকের বাড়িতে যাতায়াত। শঙ্খর কথায়, “একদিন বুদ্ধদা বললেন ওই ঘরটা থেকে ডিভিডি বের করে আনো। তারকভস্কির কি বিশাল কালেকশান! বললেন রোজ আসবে আর প্রতিদিন একটা করে ছবি দেখবে।” শঙ্খ বুঝলেন আলাদা একটা স্থান দিচ্ছেন তাঁকে জগতখ্যাত পরিচালক।

সেই প্রশ্রয় শঙ্খের মনে জাগাল একটা ভাবনা। কেমন হয় পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়েই একটা ছবি করলে? একদিন তাঁর প্রিয় ‘বুদ্ধদা’কে সুযোগ বুঝে সবিনয়ে বলেই ফেললেন শঙ্খ, “আপনার কিছু ছবি তুলব।” শুনে তিনি বললেন, “অনুমতি নেওয়ার কি আছে, তোলো।” শঙ্খ তাঁকে বললেন স্টিল নয়, চলচ্ছবি। বুদ্ধদেব তা শুনে বলেন, “পাগলামি করো না, অনেক খরচ। টাকা জোগাড় করবে কীভাবে?” শঙ্খের পাগলামির কাছে এই মৃদু আপত্তি ধোপে টেঁকেনি। স্ত্রী, ক্যামেরাম্যান আর এডিটরের সঙ্গে কথা বলে টাকা ধার করে তড়িঘড়ি শুট শুরু করলেন।

Sankha-Ghosh

পরিচালক: শঙ্খ ঘোষ। 

বুদ্ধদেব তখন ‘উত্তরা’র শুটিং করছেন পুরুলিয়ায় তাঁর জন্মস্থান আনারার কাছে। ১৬ মিমি ফিল্ম ক্যামেরায় ভরে শঙ্খ ছুটলেন পুরুলিয়া। এক অন্য ‘বুদ্ধদা’কে ধরতে শুরু করলেন শঙ্খ ঘোষ। সেই মানুষটির সঙ্গে কোনও মিল নেই কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। তিনি বজ্র কঠিন। ঠিক জানেন কখন কী চাই, কতটা চাই! আর তা আদায় করে নিতেও জানেন। ‘পোর্ট্রেট’ যত এগোতে থাকল, শঙ্খ ততই দেখলেন করতে লাগলেন কীভাবে শটের পরতে-পরতে সিনেমায় কবিতার ছোঁয়াচ এনে ফিল্মের এক অন্য ব্যঞ্জনা তৈরি করছেন বুদ্ধদেব। একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বোধ, অনমনীয় মনোভাব আর আপোষহীন লড়াইও উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে।

কেবলমাত্র একবার ১৯৯৯ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে তথ্যচিত্র বিভাগ এই ছবি দেখেছে দেশ। কিন্তু কেন? শঙ্খ বলছেন, “তারপর থেকে কেউ আগ্রহই দেখাননি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে নিয়ে। স্বভাবতই কেউ এই ছবির স্বত্ত কিনতেও এগিয়ে আসেনি। এমনকি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে তৈরি ছবি দেখতে আগ্রহী হয় নি দূরদর্শনও।” তারপর ২০২১ বাংলাদেশ এবং টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ প্রদর্শন হবে এই ছবির।