Pradeep Sarkar Death: প্রসেনজিতের মতো তারকা তাঁর বিজ্ঞাপনে থাকলেও ২-৩ কোটির ছবি তৈরির কথা তিনি ভাবতেন না: শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

Pradeep Sarkar Death: কী হবে নটী বিনোদিনীর ভবিষ্যৎ? TV9 বাংলাকে জানালেন শিবাশিস বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সেই সঙ্গে ব্যক্ত করলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক প্রসঙ্গে কিছু অজানা কথাও।

Pradeep Sarkar Death: প্রসেনজিতের মতো তারকা তাঁর বিজ্ঞাপনে থাকলেও ২-৩ কোটির ছবি তৈরির কথা তিনি ভাবতেন না: শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানে...
Follow Us:
| Updated on: Jul 08, 2023 | 7:15 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৭। এটা কি চলে যাওয়ার বয়স? অনেক অসমাপ্ত কাজ ফেলে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের বাঙালি পরিচালক প্রদীপ সরকার। শুক্রবার (২৪.০৩.২০২৩) মুম্বইয়ে প্রয়াণ ঘটেছে প্রদীপের। TV9 বাংলাকে কন্যা রায়া জানিয়েছেন, তাঁর বাবা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অসুস্থ হওয়ার আগে একটি বিজ্ঞাপনী ছবিতে কাজও করছিলেন প্রদীপ সরকার। এ দিকে, কয়েক মাস আগেও তাঁর আগামী ছবি ‘নটী বিনোদিনী’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। কারণ বাংলাতেও বিনোদিনীকে নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে। তৈরি করছেন রামকমল মুখোপাধ্য়ায়। তাতে বিনোদিনী রুক্মিণী মৈত্র। বাংলার কিংবদন্তী নটীকে নিয়ে হিন্দি ভাষায় ছবি তৈরি করছিলেন প্রদীপও। তাতে বিনোদিনীর চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল কঙ্গনা রানাওয়াতের। তার টিমের তরফে জানা যায়, পরিকল্পনা নাকি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালেই। অর্থাৎ প্যানডেমিকের আগে। সেই সময় কথা ছিল ঐশ্বর্য রাই বচ্চন চরিত্রটা করবেন। কিন্তু সময় এগোতেই নায়িকা বদল ঘটে। এ-ও জানা যায়, চিত্রনাট্য তৈরি পুরোপুরি। কঙ্গনা ডেট দিলেই শুটিং শুরু হয়ে যেত। এখন কী হবে নটী বিনোদিনীর ভবিষ্যৎ? খোঁজ নিল TV9 বাংলা।

প্রদীপ সরকারের ‘নটী বিনোদিনী’র জন্য কলকাতায় বসে গবেষণার যাবতীয় কাজ করেছিলেন শিবাশিস মুখোপাধ্যায় (যে শিবাশিস ‘করুণাময়ী রানি রাসমণি’, ‘নেতাজি’ ধারাবাহিকেরও গবেষক)। এই বায়োপিকের জন্য তাই তাঁকেই ভরসা করেছিলেন প্রদীপ। তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন মুম্বই। গবেষণা এবং গল্প নির্মাণের কাজটি করেছিলেন শিবাশিস। চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন প্রকাশ কাপাডিয়া। এখন কী হবে নটী বিনোদিনীর? TV9 বাংলাকে জানালেন শিবাশিস বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সেই সঙ্গে ব্যক্ত করলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক প্রসঙ্গে কিছু অজানা কথাও।

শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানে:

সকাল-সকাল একটি অত্যন্ত খারাপ খবর পেলাম। কিছুতেই ভাবতে পারছি না, এমনটা ঘটেছে। কিন্তু এটাও ঠিক, প্রদীপদার শরীর কিন্তু ভাল থাকত না। শেষ যেদিন আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, খুবই অসুস্থ লেগেছিল। সেটাও প্রায় ৯-১০ মাস আগে। প্রদীপদা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শরীরটা একদমই দিচ্ছিল না তাঁর।

‘নটী বিনোদিনী’র ভবিষ্যৎ:

‘নটী বিনোদিনী’ আর হবে না। তবে চিত্রনাট্য তৈরি। সেটা যদি অন্য কেউ নিতে চান, সেটা যদি প্রদীপ সরকারের কোম্পানি থেকে বৌদি (প্রদীপ সরকারের স্ত্রী পাঞ্চালি সরকার) কাউকে দিতে চান, তা হলে ছবিটা হলেও হতে পারে।

প্রদীপ সরকারের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা:

আমার সঙ্গে আচমকাই যোগাযোগ করেন প্রদীপদা। সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিল বুম্বার (অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) সেক্রেটারি মোহর। সেই সময় মোহর মুম্বইয়ে চাকরি করত। মোহর এবং পলা নামের আর একটি মেয়ে প্রদীপদার কাছে আমার নামে ভাল-ভাল কথা বলেছিল। সেই সূত্রেই প্রদীপদা আমার সঙ্গে ফোনে অনেকক্ষণ কথা বলেন। তারপর আমাকে ডেকে পাঠান। তিনি মুম্বইয়ে আমাকে নিয়ে যান। বহু চিত্রনাট্যকারের সঙ্গে আমার আলাপ হয় সেখানে। তাঁরা সকলেই খুব বিখ্যাত মানুষ। তারপর ‘পদ্মাবত’-এর চিত্রনাট্যকার প্রকাশ কাপাডিয়া কাজটি করেন।

নটী বিনোদিনী’র গুরুত্বপূর্ণ দিক:

এই ছবির ইন্টারেস্টিং দিক যেটা এখনও পর্যন্ত বিনোদিনীকে নিয়ে কোনও কাজেই উঠে আসেনি, তা হল, এই ছবির চরিত্র হিসেবে উঠে আসেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়। বিনোদিনী বললে কেবলই গিরিশ ঘোষ, রামকৃষ্ণের কথা লোকে ভাবে। শরৎচন্দ্রের আশ্চর্য ভূমিকা আছে বিনোদিনীর শেষজীবনে।

বিচিত্র মানুষ প্রদীপদা:

প্রদীপদা ভারী বিচিত্র মানুষ ছিলেন। তাঁর অফিসে খুব যত্ন সহকারে লাঞ্চ রান্না হত। তবে তিনি সেই লাঞ্চ খেতেন না। বউদির কড়া বিধিনিষেধে থাকত। এ দিকে, বিকেল নাগাদ যেই বৌদি বেরিয়ে যেতেন, প্রদীপদা বড়া পাও খেতেন, ঝুরিভাজা দিয়ে পাও খেতেন। এরকম সমস্ত অদ্ভুত কাণ্ড করতেন। খুবই ভোজনরসিক মানুষ ছিলেন।

অজানা প্রদীপ:

অসামান্য ছবি আঁকতেন প্রদীপদা। দুর্দান্ত স্কেচের হাত ছিল তাঁর। বিজ্ঞাপনের মানুষ তো আরও অনেকেই আছেন। কিন্তু প্রদীপদার মতো এত ভাল স্টোরি বোর্ড আঁকার হাত হয় না সচরাচর। মুম্বইয়ে অতদিন আগে তিনি শিফ্ট করে গিয়েছিলেন, কিন্তু এতটুকুও কলকাতা টাচ কিংবা বাঙালি টাচ কমেনি। তিনি আপাদমস্তক বাঙালি ছিলেন। খুবই ক্ষতি হল ইন্ডাস্ট্রির।

কেন বাংলায় ছবি তৈরি করলেন না প্রদীপ সরকার?

যে স্কেলে কাজ করার কথা প্রদীপ সরকার ভেবেছেন, তা তো বাংলায় সম্ভব নয়। তিনি কোনওদিনও ছোট স্কেলের কাজ ভাবতে পারেননি। ‘পরিণীতা’ কিংবা ‘লাগা চুনরি মে দাগ’ বা ‘মর্দানি’… এই ধরনের ছবি দেখলেই বোঝা যায় সেই স্কেল। তাঁর ছবির ফটোগ্রাফি ছিল কবিতার মতো। এবং তিনি বড় স্টারদের নিয়ে কাজ করায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাই ২-৩ কোটি টাকার ছবি তৈরি করার কথা তিনি ভাবতেই পারতেন না। প্রসেনজিতের মতো তারকারা তাঁর বিজ্ঞাপনে থাকতেন বটে। কিন্তু আঞ্চলিক ছবি তৈরি করার কথা তিনি ভাবতেই পারতেন না।