World Music Day 2023: গানের জানালা গোটা পৃথিবী… সুরের মূর্ছনা কীভাবে ভুলিয়ে দিতে পারে অন্তরের বিষাদ
Music Therapy: সপ্তাহান্তে পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। চলছে এঁটো-হাতে গল্প। সঙ্গে অনুরোধের আসরে, ‘চঞ্চল মন আনমনা হয়, যেই তার ছোঁয়া লাগে...’ বাইরে কাটফাটা রোদ্দুর থাকলেও, হেমন্ত-লতার অদ্বিতীয় ডুয়েটে ততক্ষণে মনজুড়ে বৃষ্টি।

নির্মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়
গীটারে লঘু সঙ্গীতের সুর বাজিয়ে শোনাচ্ছেন দিলীপ নাগ। কানে ভেসে আসছে, ‘সে দিনের সোনা ঝরা সন্ধ্যা’ অথবা ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’। পিন-ড্রপ সাইলেন্স। বাড়ির সবাই মন্ত্রমগ্ধ হয়ে শুনছে। রেডিয়ো সেটে একটু-আধটু কড়কড় শব্দ হলে প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে অপু। অথবা ধরুন রবিবারের দুপুর। সপ্তাহান্তে পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। চলছে এঁটো-হাতে গল্প। সঙ্গে অনুরোধের আসরে, ‘চঞ্চল মন আনমনা হয়, যেই তার ছোঁয়া লাগে…’ বাইরে কাটফাটা রোদ্দুর থাকলেও, হেমন্ত-লতার অদ্বিতীয় ডুয়েটে ততক্ষণে মনজুড়ে বৃষ্টি। নব্বইয়ের দশকেও গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বাঙালি ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়’ এমন দর্শনে জীবন কাটানোর কথা ভাবত। ঘরে-ঘরে তখন এতো স্ট্রেস, ডিপ্রেশনের বাড়বাড়ন্ত ছিল না। অভাব ছিল, ঝুরি-ঝুরি অভিযোগ ছিল না। জীবন ছিল, এত জটিলতা ছিল না। প্রতিযোগিতা ছিল, কিন্তু এতটা প্রকট ছিল না। যে, যার মতো ফর্মুলা প্রয়োগ করে জীবনের জটিল-কুটিল ফ্যাক্টর গুলো সামলে নিতেন, তা সেই খেলাধুলার চর্চা হোক বা গান শোনা।
ধান ভানতে শিবের গীতের কারণ, গান নিয়ে দু”চার কথা। হ্যাঁ, গান শুনুন। গান শুনলে মন ফুরফুরে থাকে। আজ একথা সর্বজনবিদিত। মালকোষ কিংবা পিলু বা ভৈরবী শুনতে হবে, এমন কেউ দিব্যি দেয়নি। আপনি অন্তর থেকে যে গান পছন্দ করেন, তাই-ই শুনুন। অন্যের কাছে সঙ্গীতের বড় সমজদার সাজার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতারে ভৈরবীর মূর্ছনা বা সন্ধেয় সিনাত্রা শুনতে হবে না, যেটা শুনলে মানসিক তৃপ্তি পান, সেটাই শুনুন। দেখবেন শিরায়-শিরায় বা শরীরে যে অশান্তি দানা বাঁধছিল, তা ধীরে-ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে। অজান্তেই গেয়ে উঠছেন প্রিয় গানের কলি ‘অজিব দাস্তা ইয়ে কাহা শুরু কাহা খতম…’ অথবা ‘গানের সুরে রেশারেশি, দেশাদেশি নেই, আমার গানের জানালা গোটা পৃথিবী।’
ডিস্টার্বিং এলিমেন্টগুলো সকাল-বিকেল মনের মধ্যে ঘুরপাক না খেয়ে ক্রমশ ফিকে হতে থাকবে। প্রশান্তি পাবেন। কাজে গতি আসবে। ফিরে পাবেন আত্মবিশ্বাস। বব মার্লে তাই একবার বলেছিলেন, ‘One good things about music when it hits you, you feel no pain।’
শুধু মন ভাল রাখার দাওয়াই নয়, মৃত্যুর হাত থেকেও বাঁচিয়ে আনতে পারে মিউজিক থেরাপি। বেশ কয়েক বছর আগে এ শহরের বুকে এমন নজির গড়েছিলেন এসএসকেএমের দুই চিকিৎসক, রজত কুমার চৌধুরী এবং সন্দীপ কুমার কর। ডাক্তারির পাশাপাশি বেহালাটাও ভালোই বাজান সন্দীপবাবু। তাই কোমায় আচ্ছান্ন নৈহাটির সঙ্গীতা দাসকে এ রাজামের বাজানো বেহালায় দরবারি কানাড়া শুনিয়ে সুস্থ করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। প্রথমে দিকে দিনে একবার শোনানো হত। ওষুধের ডোজ় বাড়ানোর মতো ধীরে-ধীরে দিনে তিনবার সঙ্গীতাকে শোনাতে থাকেন রাগ দরবারি কানাডা। ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের অনুরণনে অবশেষে কোমা থেকে বেরিয়ে আসেন সঙ্গীতা। নৈহাটির স্থানীয় ডাক্তাররা যখন একপ্রকার জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন, দিন গুনতে শুরু করে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা… সেই জায়গা থেকে টানা নিয়ম করে রাগ সঙ্গীত শুনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন সঙ্গীতা দাস। সঙ্গীতা কী আগে থেকেই জানতেন দরবারি কানাডা রাগের মাহাত্ম্য? একদমই না। সেই অর্থে সঙ্গীতের কোনও চর্চায় ছিল না ওঁর বেড়ে ওঠায়। কিন্তু মিউজ়িক থেরাপি রীতিমতো ম্যাজিক হয়ে কাজ করেছিল ওঁর জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে। তাই সুরে থাকুন বা থাকার চেষ্টা করুন। দেখবেন স্ট্রেস বা ডিপ্রেশন সৃষ্টিকারী অসুরগুলো খুব ধীর লয়ে হলেও জব্দ হয়ে যাচ্ছে। অবসাদ, মন খারাপ ঝেড়ে ফেলে একসময় আপনারই হয়তো গলা খুলে গাইতে ইচ্ছে করবে, ‘ঝড়কে আমি করবে মিতে, ডরব না তার ভ্রুকুটিতে বা সংসারে তুমি রাখিলে মোরে যে ঘরে/ সেই ঘরে রব সকল দুঃখ ভুলিয়া।’
