Exclusive: ‘শুভশ্রী দুই বাচ্চার মা’ বিতর্ক: দেব বললেন, ‘বেশি ভালবাসা থাকলে, অভিমানও বেশি হয়’
দেবের কথায়, "বললাম, আমি শেষটা খারাপভাবে করতে চাই না। এটা সতর্কভাবে বলা কিছু নয়। আমি খুঁজে পাচ্ছি না কথাটার মধ্যে খারাপ কী ছিল। তবু খারাপ লেগে থাকলে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটাও বলেছি, শনিবার একটা বিশেষ স্ক্রিনিং করছি।"

দেব-শুভশ্রী। সুদীর্ঘ আড়ি পর্যায়ের অবসান। এক মঞ্চে পাশাপাশি অবস্থান। আনব্লকিং, সেলফি, নাচ, মিঠে-কড়া শব্দ ও চাহনি বিনিময়। সৌজন্যে, ‘ধূমকেতু’। ফ্যান মহলে প্রবল হিন্দোল। তবে রীতি মেনে, সুখ সততই স্বল্পায়ু এখানেও। সিনেমা রিলিজ আবহে এক সাক্ষাৎকারে সুপারস্টারের ‘অসংবেদনশীল’ মন্তব্যেই নাকি আহত হয়েছেন লেডি সুপারস্টার। আর তিনি যে আহত তাও জানা গিয়েছে আরেকটি সাক্ষাৎকারে। কী বলেছেন দেব? কেনই বা বললেন এমন কথা? টিভি ৯ বাংলার সামনে ব্যখ্যা দিলেন বিশদে।
ফ্ল্যাশব্যাক
দেব-শুভশ্রী প্রেম করছেন চুটিয়ে। তারপর বিচ্ছেদ। তবু ২০১৫ সালে দেবের প্রযোজনা সংস্থার প্রথম ছবি ‘ধূমকেতু’-তে শুভশ্রী অভিনয় করেন। দেবের প্রমিস ছিল, প্রযোজনা সংস্থা তৈরি হলে, প্রথম ছবি করবেন শুভশ্রীই। নায়িকা এক সময়ে নায়ককে ভরসা দিয়েছিলেন যে, একদিন নায়কের নিজের প্রযোজনা সংস্থা হবে এবং প্রথম ছবিতে তাঁকেই নিতে হবে। আবেগপ্রবণ হয়ে বলেছিলেন হয়তো। তবে ছবি যখন তৈরি হয়, প্রযোজক রাণা সরকার আর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়েরও মনে হয়েছিল, দেব-শুভশ্রী জুটিকে বড়পর্দায় ফিরিয়ে আনা দরকার। ছবির শুটিংয়ের পরও বিচ্ছেদের সুর। ছবিও রইল ঝুলে।
৪ অগাস্ট, ২০২৫
নজরুল মঞ্চে বহু বছর পর মুখোমুখি দেব-শুভশ্রী। কালো পোশাকে একজন-অন্যজনকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করলেন। দেবকে ফোনের ব্লক খুলতে হলো। তা হলেই বুঝুন, দু’জনে কেমন ঝগড়া করেছিলেন। না হলে একজন-অন্যজনকে ফোনে ব্লক করবেন কেন? এমনি তো নয়! ব্লক খুলে যাওয়ার পর দেব-শুভশ্রীর নাচে সেদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় উঠল।
‘ধূমকেতু’ মুক্তির ঠিক আগে, বড়মায়ের মন্দিরে
নৈহাটিতে আশীর্বাদ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল দেবের। নায়িকা যাবেন কিনা, তা প্রথমে মিডিয়া জানতো না। তারপর দেখা গেল, নায়ক-নায়িকার পোশাকের রংমিলান্তি লালে। সেদিন এই জুটির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারেননি অনুরাগীরা। তাঁরা সোজা পৌঁছে গিয়েছেন সিনেমা হলে। ‘ধূমকেতু’ ব্লকবাস্টার হয়েছে।

২৩ অগাস্ট, ২০২৫
এই ছবির প্রিমিয়ার হয়নি। ২৩ তারিখ স্পেশাল স্ক্রিনিং হয়। সেখানে দেব এসেছিলেন রুক্মিণীকে (মৈত্র) নিয়ে। তবে শুভশ্রী আসার প্রত্যাশা থাকলেও, তিনি এলেন না। কেন ছন্দপতন? দেবের এক সাক্ষাত্কার এর কারণ। একটা সাক্ষাত্কারে দেবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এখন ‘ধূমকেতু’ করলে, তিনি কি শুভশ্রীকে কাস্ট করতেন? দেব ব্যাখ্যা করেন, ”এখন শুভশ্রী দু’টো বাচ্চার মা। সেই ইনোসেন্সটা নেই। আমি নিজেকেও কাস্ট করতাম না। তবে প্রমিস রাখার জন্য অন্য চরিত্র নিশ্চয়ই অফার করতাম। সেটা শুভশ্রী করত কিনা, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত।” ক’ দিন পর শুভশ্রীর সাক্ষাত্কার সামনে আসে। সেখানে শুভশ্রী ‘দু’টো বাচ্চার মা, ইনোসেন্স নেই’ শুধুমাত্র এই অংশটার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বলেন, দেবের মন্তব্য অসংবেদনশীল। টলিপাড়া জানে, এরপর থেকে নায়ক-নায়িকার মধ্যে আবার বিচ্ছেদ।

৩১ অগাস্ট, TV9 বাংলাকে দেব মনের কথা জানালেন
দেব-শুভশ্রীর কি আবার ঝগড়া হয়ে গেল? দেব নিজের অফিসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন? ”শুভশ্রী আমার কাছে সুপারস্টার ছিল, আছে, থাকবে। এরচেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না। বাকিটা তো সময় বলবে।” আপনার একটা মন্তব্যে শুভশ্রীর খারাপ লেগেছে। সে কথা তিনি জানিয়েছেন। তার থেকেই মনে হচ্ছে, আপনাদের মতবিরোধ শুরু হয়েছে আবার। কী বলবেন? দেব অনর্গল, ”আপনার কি মনে হয়েছে আমি শুভশ্রীকে অপমান করেছি? কারও মনে হয়নি। দেখুন, শুভশ্রীকে আমি প্রথমদিন থেকে সুপারস্টার হিসাবে ট্রিট করেছি। যেভাবে দেবকে দেখি, সেভাবে শুভশ্রীকেও দেখতে চাই। দেবের জন্য যদি একটা গান তৈরি করা হয়, শুভশ্রীর জন্যও একটা গান তৈরি করা দরকার, এটা আমি এই অফিসে বসে বলেছি। কারণ দু’ জনের সম্মান সমান। প্রথম সাক্ষাত্কার থেকে আজ অবধি, প্রতিবার বলেছি, ও যেভাবে সংসার, ছেলে-মেয়ে, কেরিয়ার সামলাচ্ছে, সেটাকে সাধুবাদ। এটা সহজ নয় একজন মেয়ের জন্য। আজ অবধি আমার তরফে এমন কিছু করিনি, যাতে মনে হবে ইচ্ছাকৃতভাবে আমি ওঁর ক্ষতি করছি। তবু আমার এই কথাটার পর সায়ন্তন আমাকে জানায় শুভশ্রীদির খারাপ লেগেছে। আমি তখন কথা বলতে চাই। ও মুম্বইয়ে শুটিং করছিল। আমি ফোনে কথা বলি। বলি যে, আমি অসম্মান করার কথা ভাবিনি। করবই বা কেন? আমার সঙ্গে ওঁর শত্রুতা নেই। আমি অত মেকিও নয়।”

দেবের কথায়, “বললাম, আমি শেষটা খারাপভাবে করতে চাই না। এটা সতর্কভাবে বলা কিছু নয়। আমি খুঁজে পাচ্ছি না কথাটার মধ্যে খারাপ কী ছিল। তবু খারাপ লেগে থাকলে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটাও বলেছি, শনিবার একটা বিশেষ স্ক্রিনিং করছি। কারণ দেব-শুভশ্রীকে আবার একসঙ্গে দেখলে, আলোচনা হবে। মিডিয়া থাকবে। মানুষ হয়তো পরের সপ্তাহে ছবিটা দেখতে চাইবেন। এটা স্ট্রাটেজি। যেরকম হয় আরকী। শুভশ্রী বলল, ”আমি দেখবো”। তারপর আমি রাজকেও (চক্রবর্তী) ফোন করি। বলি, ”আমরা ২৩ তারিখ বিশেষ স্ক্রিনিং প্ল্যান করছি। তুমি ফ্রি রেখো। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ।” আজকে আমি তো চেষ্টা করছি ওঁর বাড়িকে যাতে সম্মান দিতে পারি। এটা রাণাদা বা কৌশিকদা ফোন করলেও হয়ে যেত। তবে আমার মনে হয়েছে নিজে কথা বলা উচিত। এরপরে আপনি বলুন, আমি কোথায় ভুল?”
দেব যোগ করলেন, ”যেটা শুনে শুভশ্রী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেই লাইনটা হলো, ”বাচ্চা হলে মায়ের ইনোসেন্স চলে যায়”। আমি একটাও লাইন এরকম বলিনি। আপনারা সাক্ষাত্কারটা চালাতে চাইলে, আমি কপিরাইটের ব্যবস্থা করে দেবো। আমি বলেছি, শুভশ্রী গাঙ্গুলির বর্ধমান থেকে এসে যে জার্নি আছে, সেটা সাকসেস স্টোরি। ওঁর জেনারেশনে যাঁরা আছেন, তার মধ্যে অনেকটা এগিয়ে আছে। ও আর কোয়েল (মল্লিক), যেভাবে নিজেদের ধরে রেখেছে। শুভশ্রী গাঙ্গুলির লাইফ নিয়ে একটা ছবি হতে পারে, কারণ ওঁর সাকসেস স্টোরি আছে। আমি কোথায় অসম্মান করলাম? প্রশ্নটা কী ছিল? দশ বছর পর আমি যদি ‘ধূমকেতু’-র কাস্টিং করি, তা হলে কি আমি শুভশ্রীকে রিপিট করব? আমি বলেছিলাম দেবকেও রিপিট করব না। কারণ দেবের মধ্যে সেই ইনোসেন্সটা নেই। একটা লাভার বয় ইমেজ আছে, যেখানে বর সেজে ভানু আসে। সেই ইনোসেন্স দেবের মধ্যে নেই। আর যে বয়সটা আমরা খুঁজছি রূপার জন্য, সেই বয়সটা আমরা সবাই পেরিয়ে এসেছি। সেটা ওঁর মা হওয়ার জন্য নয়। আমি এখন যে কথাগুলো বলছি, সেটা বলার জন্যও আমাকে অনেক ভাবতে হচ্ছে, চাই না আমার জন্য ওঁর কোনও ক্ষতি হোক। এটুকু বলব, আমি চাই ও আরও বড় হোক। একটা উদাহরণ দিই। চার বছর আগে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-তে প্রিয়াঙ্কা সরকার ছিল। লুক সেট হয়েছিল। তারপর সৃজিত মুখার্জি, প্রযোজক সকলের মনে হয়েছে এই সময় দাঁড়িয়ে শুভশ্রী মোর ডিজার্ভিং। তাঁরা তাঁদের মতো কাস্টিং বদল করেছেন। সেখানে শুভশ্রী পার্ট করেছে। সে ঠিক, তা হলে আমি কী করে ভুল হলাম? রইল কথা মায়েদের সঙ্গে কাজ করার, ‘ধূমকেতু’-তে প্রথম নায়িকা হিসাবে শ্রাবন্তীর (চট্টোপাধ্যায়) কথা ভাবা হয়েছিল। তারপর প্রযোজক-পরিচালকের মনে হয় দেব-শুভশ্রী জুটি ফিরিয়ে আনলে ভাল হতে পারে। দু’ জনের কাছে প্রস্তাব গিয়েছে। আমরা না করিনি। তখন শ্রাবন্তী বিবাহিত, বাচ্চার মা কিন্তু। বিয়ে হয়ে গিয়েছে বা মা হয়েছে বলে ইনোসেন্স চলে গিয়েছে, এটা মনেই করি না। কোন সময়ে দাঁড়িয়ে কাকে কোন চরিত্রে দরকার, সেটা ব্যাপার। আমি সোহিনী সরকারকে বিয়ের পর কাস্ট করেছি। বরখা বিস্ত ‘খাদান’-এ নায়িকা। ওঁর মেয়ে যথেষ্ট বড়।”

দেব শেষে বললেন, ”আমার এটাই আশ্চর্য লাগছে, এই যে একটা ইন্টারভিউ হচ্ছে, যেখানে দেবকে নিয়ে অনেক কিছু বলা হচ্ছে, আমি সৃষ্টি করেছি, এরকম বলা হচ্ছে, তার জন্য বলি, আমিও কারও ছেলে। আমাকে বাবা-মা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসেনি। আমিও কারও সন্তান। এটা বলতে চাইনি, তবে মনে হচ্ছে, বেশি ভালবাসা হলে, বেশি অভিমান হয়ে থাকে। মনে হয়, এটা ভালবাসা থেকেই হচ্ছে। আমি চাই ওঁর ভাল হোক, ও সুস্থ থাকুক।”
