কলকাতা ডুবে গিয়েছে, সত্যজিৎকে ফোন করলেন ঋতুপর্ণ! সেই প্রথম, সেই শেষ, কী কথা হয়েছিল তাঁদের?
ফিল্মবোদ্ধারা মনে করতেন, সত্যজিতের পরে ঋতুপর্ণ ঘোষই ছিলেন বাংলার এমন পরিচালক যাঁর ছবি শৈল্পিক দিক থেকে যতটা উন্নত, ততটাই ছিল বাণিজ্যিক ভাবে সফল।

বরাবরই নানা সাক্ষাৎকারে, পত্র-পত্রিকার নানা লেখায় ঋতুপর্ণ ঘোষ দরাজ মনে স্বীকার করেছেন তিনি সত্যজিৎ রায়ের একেবারে অন্ধভক্ত। তপন সিনহা, অজয় করের ছবির ভক্ত হলেও, সত্যজিৎ তাঁর পছন্দের তালিকায় ছিলেন একেবারে প্রথমে। এমনকী, ঋতুপর্ণা ঘোষ কথায় কথায় এও বলতেন, তাঁর সিনেমা তৈরির প্রাথমিক শিক্ষকই ছিলেন সত্যজিৎ। শুধুই পরিচালক সত্যজিৎ নন, লেখক, চিত্রশিল্পী এবং সর্বোপরি সঙ্গীত পরিচালক সত্য়জিৎ রায়কেও সিনেমার তৈরির অ আ ক খ করে তুলেছিলেন ‘দহন’ পরিচালক। আর তাই তো সিনেপর্দায় ইমেজ তৈরির সময় ঋতুপর্ণর ফ্রেমে প্রচ্ছন্নভাবে ধরা পড়ত সত্যজিতের অনুপ্রেরণা। একসময় ফিল্মবোদ্ধারা মনে করতেন, সত্যজিতের পরে ঋতুপর্ণ ঘোষই ছিলেন বাংলার এমন পরিচালক যাঁর ছবি শৈল্পিক দিক থেকে যতটা উন্নত, ততটাই ছিল বাণিজ্যিক ভাবে সফল। তবে এই গল্প সত্যজিৎ ও ঋতুপর্ণর সিনেমার তুল্যমূল্য বিচার নয়, বরং সত্যজিতের সেই একনিষ্ঠ ভক্ত ঋতুপর্ণ এক বৃষ্টির দিনে এমন কাজ করে বসেন, যা হতবাক করেছিল খোদ সত্যজিৎকেও!
কাণ্ডটা একটু খোলসা করা যাক। বহু বছর আগে এক বেসরকারি টিভি চ্য়ানেলে কাহানি খ্য়াত পরিচালক সুজয় ঘোষের সঙ্গে আলাপচারিতায় ঋতুপর্ণই ফাঁস করেন সত্যজিৎ ও তাঁর এই কাণ্ডের কথা। ঋতুপর্ণর কথায়, তিনি যে এমনটি করতে পারেন, তা হতবাক করেছিল খোদ সত্যজিৎ রায়কেও। তখন অবশ্য ঋতুপর্ণর সিনেমাজগতে পা রাখা হয়নি। তবে সিনেচর্চায় তাঁর সদা উপস্থিতি ছিল।
সময়টা সাতের দশক। ঠিক পুজোর আগে মুক্তি পেল সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবি শতরঞ্জ কি খিলাড়ি। সেই সময় কলকাতা জুড়ে জোর বৃষ্টি। একটানা তিনদিনের বৃষ্টিতে কলকাতায় প্রতিটা রাস্তা একেবারে জলে থইথই। জলমগ্ন কলকাতার রাস্তাঘাট একেবারে অচল। ঠিক সেই সময়ই ঋতুপর্ণ ঘোষ ফোন করে বসলেন সত্যজিৎ রায়কে! কয়েকটা রিং হতেই, ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল গম্ভীর কণ্ঠ, হ্য়ালো কে বলছেন? উত্তরে সটান ঋতুপর্ণর প্রশ্ন, এই যে শতরঞ্জ এলিট সিনেমা হলে শুধু মুক্তি পাচ্ছে, দেখব কী করে? ঋতুপর্ণর এই প্রশ্নে খুব নরম সুরে সত্যজিৎ বলে উঠলেন, কেন তোমার বাড়ি কোথায়? ঋতুপর্ণও জানালেন, তাঁর বাড়ি টালিগঞ্জে। আর কলকাতার একটানা বৃষ্টির জন্য যে এলিটে পৌঁছনোট প্রায় অসম্ভব, সেটাও সেদিন সত্যজিৎকে স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন ঋতুপর্ণ।
ঋতুপর্ণর মুখে এমন কথা শুনে হতবাক হয়েই সত্যজিৎ সেদিন বলেছিলেন, বৃষ্টি কমলেই দেখো। প্রথম দিনই কেন দেখতে হবে? এত তাড়াহুড়ো কীসের! সত্যজিতের মুখে থেকে এমন কথা শুনে একেবারে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন ঋতুপর্ণ। এটা ছিল পারফেক্ট ফ্যানবয় মোমেন্ট।





