হীরালাল সেন কে? উত্তর খুঁজতে আসছে বায়োপিক
১৮৬৬ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন হীরালাল সেন। অত্যন্ত ধনী পরিবারে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। স্থির চিত্র তোলাই ছিল তাঁর নেশা। ১৮৯৮ সালে কলকাতার স্টার থিয়েটারে একটি চলচ্চিত্র দেখতে গিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন। ইংল্যান্ড থেকে ক্যামেরা আমদানি করেন।
হীরালাল সেন। হঠাৎ করে নামটা শুনলে আপনি হয়তো চিনতে পারবেন না। বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে হীরালালের নাম। এমনকি তাঁকে চলচ্চিত্রের আদিপুরুষ বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু এই হীরালাল এখন বিস্মৃতির অতলে। যিনি চলচ্চিত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন, তাঁকে নিয়েই আজ আর কোনও আলোচনা নেই। সেই ভাবনা থেকেই হীরালালের বায়োপিক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক অরুণ রায়। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘হীরালাল’ মুক্তি পাবে আগামী ৫মার্চ।
কেন হীরালালকে নিয়ে ছবি তৈরির কথা ভাবলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুললেন অরুণ। তাঁর কথায়, “ভারতের যেখানেই যান, যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, ভারতীয় সিনেমার জনক কে? উত্তর আসবে, দাদাসাহেব ফালকে। এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। আমরা বাঙালিরা এটা কেন মেনে নিলাম? সেটাই আমার প্রশ্ন। কীভাবে হীরালাল সেনের নাম পুরোপুরি মুছে গেল?”
১৮৬৬ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন হীরালাল সেন। অত্যন্ত ধনী পরিবারে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। স্থির চিত্র তোলাই ছিল তাঁর নেশা। ১৮৯৮ সালে কলকাতার স্টার থিয়েটারে একটি চলচ্চিত্র দেখতে গিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েন। ইংল্যান্ড থেকে ক্যামেরা আমদানি করেন। এরপর ভাই মতিলাল সেনের সঙ্গে ছবি প্রযোজনা সংস্থা ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ তৈরি করেন তিনি।
পরিচালক অরুণ রায় (বাঁদিকে), অভিনেতা কিঞ্জল দত্ত (ডানদিকে)।
অরুণ দাবি করলেন, ১৯১৩ সালে রাজা হরিশচন্দ্র দাদা সাহেব ফালকের প্রথম কাজ। অন্যদিকে ১৯০১, ০২ সালে প্রথম কাজ করেছিলেন হীরালাল সেন। জবা কুসুম তেলের প্রথম বিজ্ঞাপন হীরালালের তৈরি। আবার বঙ্গভঙ্গের উপর তথ্যচিত্রও তিনি তৈরি করেছিলেন।
এ হেন হীরালালের সম্পর্কে সত্যিই যে অনেকেই জানেন না, তা একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন হীরালালের চরিত্রে অভিনয় করা কিঞ্জল নন্দ। তাঁর কথায়, “প্রথম যখন ছবিটা সম্পর্কে আমাকে বলা হয়, আমি হীরালাল সেনকে চিনতামই না। এখনও অনেকেই জানেন না। আমিও তাঁদের দলেই ছিলাম। যাঁর জন্য এতবড় সিনেমা বিজনেস চলছে, তাঁর সম্পর্কে কিছু জানতাম না, তার জন্য আমি লজ্জিত। যে ভুল ইতিহাসের সঙ্গে বসবাস করছি, সেটা পরিবর্তন দরকার। ভারতে প্রথম সিনেমা, অ্যাড ফিল্ম, পলিটিক্যাল ডকুমেন্টরি তৈরি করেছিলেন হীরালাল। গুগলেও ওঁর সম্পর্কে খুব একটা তথ্য নেই।”
আরও পড়ুন, বাংলার প্রথম থ্রি-ডি ছবি জয়া আহসান অভিনীত ‘অলাতচক্র’
১৯১৩-এ হীরালালের কোম্পানি আকস্মিক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯১৭-এ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তার কিছুদিন আগেই এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর সারা জীবনের কাজ। এ হেন হীরালালকে বড় পর্দায় দেখতে কতটা আগ্রহী হবেন দর্শক?
ছবির একটি দৃশ্যে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
কিঞ্জল মনে করেন, “অভিনেতা হিসেবে চরিত্রকেই গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এই চরিত্রটি আমাকে ঋদ্ধ করতে পারব বলে মনে হয়েছিল। হীরালাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করব, এমন ভাগ্য তো সকলের হয় না। আমার বিশ্বাস, হীরালাল সেন কে, সেটা জানার জন্য মানুষ হলে যাবেন।”
অরুণের দাবি, “সিনেমা হলে দর্শক আসেন না, আমরা অভিযোগ করি। কিন্তু দর্শককে কেন আসবেন, কী দেখাই আমরা, সিনেমাটাই তো ঠিক করে করতে পারছি না। সবাই মিলে ভাল ছবি তৈরি করতে পারলে দর্শক নিশ্চয়ই আসবেন। ভুলে যাওয়া বাঙালি, যাঁদের নিয়ে গর্ব করতে পারি আমরা, তাঁদের কথা জানুন দর্শক, সে কারণেই এই ছবি তাঁরা দেখবেন।” মুখ্য চরিত্রে কিঞ্জলের পাশাপাশি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীর অভিনয়ে সমৃদ্ধ এই ছবি।