বাংলা ছবির প্রোমোশনকে ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ‘উইনডোজ’ সংস্থার তরফে কখনও পরিচালক, কখনও প্রযোজক হিসেবে শিবপ্রসাদ তাঁর প্রোমোশনাল স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এক্সক্লুসিভ কলম ধরলেন TV9 বাংলা ডিজিটালের জন্য।
সিনেমার প্রোমোশনের নির্দিষ্ট কোনও রূপরেখা এখনও তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা এখনও কোনও স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে পারিনি। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ডিজিটালের জন্য আলাদা-আলাদা প্রোমোশনাল প্ল্য়ান থাকে। কিন্তু সবথেকে বড় জিনিস হল কনটেন্ট। সেটা আমাদের ক্ষেত্রে সব সময় কাজ করেছে। কনটেন্ট যদি মার্কেট করতে পারে, তাহলে সিনেমাটাও মার্কেটেড হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, সিনেমার বাহ্যিক জিনিসটা মার্কেট করা হয়, সিনেমাটা হয় না। অর্থাৎ কনটেন্ট মার্কেটেড হয় না।
আরও পড়ুন, প্রত্যেক ছবির গল্প আলাদা, তাহলে প্রোমোশন এক হবে কেন?
আমাদের বিভিন্ন সিনেমার ক্ষেত্রে যে সব ব্র্যান্ড যুক্ত হয়েছে, তা কিন্তু সিনেমার জনপ্রিয়তার জন্য। বেসরকারি হাসপাতাল, শাড়ি, মশলা (পোস্ত), সফ্ট ড্রিঙ্ক, সোনার বিপণি- সকলেই মনে করেছে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে আমরা একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব। ‘কণ্ঠ’তে যুক্ত ছিল একটি বিখ্যাত অলঙ্কার বিপণি। কিন্তু কোথাও গয়নার বাক্স বা গয়না পরানো হচ্ছে, তেমন শট ছবিতে নেই। সেটা ‘হামি’ বা ‘রসগোল্লা’তেও ছিল না। তাহলে কী করে মার্কেটিং হল? এটা সিনেমা এবং ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা। ব্র্যান্ড অর্থাৎ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় যখন ব্র্যান্ড হিসেবে জনপ্রিয় হল, তখনই এই মার্কেটিং সম্ভব হল। আমাদের সঙ্গে যে সব ব্র্যান্ড যুক্ত হয়েছে, অন্য সিনেমায় যেমন প্রোমোশন হয়, তারা তেমন প্রোমোশন কেউ চায়নি। বরং আমাদের সিনেমার কনটেন্টের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছে।
আরও পড়ুন, নেপথ্যের কারিগররা কি আড়ালেই থাকবেন? হেয়ার স্টাইলিস্টের মৃত্যুতে ফের উঠল প্রশ্ন
দুঃখের বিষয়, সিনেমার সময় আমরা ভাবি, হোর্ডিংয়ের মার্কেটিং বা প্রোমোশন। ব্র্যান্ডের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আমরা সেটা কখনও ভাবি না। আমার মনে আছে, ‘মুক্তধারা’তে একটি বিশেষ সাবানের কোম্পানি থেকে অফার ছিল। বলা হয়েছিল, সংশোধনাগারের বন্দিরা ওই সাবান ব্যবহার করছে, সেটা দেখাতে হবে। আমি বলেছিলাম, সংশোধনাগারে ওই সাবানটা কেউ ব্যবহার করে না। ওই অফারে রাজি হলে, কলকাতা শহরে হয়তো ২০০টা হোর্ডিং হত আমার। কিন্তু স্ক্রিপ্ট কম্প্রোমাইজ করতে হত।
মার্কেটিং কী কনটেন্টের উপর চলে যাবে? নাকি কনটেন্ট আগে থাকবে? এটাই এখন আসল লড়াই। কোনও একটা জায়গায় গিয়ে নিজেকে আটকাতেই হয় যে, এটা করা যাবে না। আবার ‘হামি’তে লাল্টু বিশ্বাস ফার্নিচার বিক্রি করে। সেখানে ফার্নিচার কোম্পানির নাম বলতে হয়েছে। সেটা স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। চরিত্রর সঙ্গে বিজ্ঞাপন জুড়ে যাওয়াটা জরুরি। ‘পোস্ত’তে বাচ্চাটির নাম ছিল পোস্ত। বাড়ির লোকজন পোস্ত খাচ্ছে, এমন রেফারেন্স কিন্তু ছিল না। একটি পোস্ত প্রস্তুতকারক সংস্থা ওই ছবির সঙ্গে জুড়ে ছিল বলেও যে ওই নাম দিয়েছিলাম, তা-ও নয়। ওটা কাকতালীয়। মোট ২৭টা ব্র্যান্ড যুক্ত ছিল ছবিটার সঙ্গে। ‘প্রাক্তন’-এর সঙ্গে ২৩টা ব্র্যান্ড যুক্ত ছিল। আবার ছবির নাম যখন ‘হামি’ দিয়েছিলাম, তখনও কিন্তু জানতাম না কোন-কোন ব্র্যান্ড যুক্ত হবে।
আরও পড়ুন, “অতিমারির আবহে ভার্চুয়াল প্রোমোশন সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং”
আমাদের কাছে কনটেন্টই বড় কথা। তার জন্য বহু জায়গায় বহু সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারিনি। কিছু ক্ষেত্রে তারা অখুশি হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আমার যুক্তি বোঝাতে পেরেছি। তারা খুশি হয়েছে। ‘অলীক সুখ’-এ আমাদের কনটেন্ট ছিল চিকিৎসকও একজন মানুষ। সে ভগবান নয়। তারও ভুল হয়। ভুল হলে সে শুধরে নেয়। তার উপলব্ধি। আসলে একজন মানুষেরই গল্প। কোনও হাসপাতাল শুটিং করতে দিতে রাজি হয়নি। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা মনে করেছিল, এটাই হওয়া উচিত। চিকিৎসকও তো একজন মানুষ। আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমরা কখনও কনটেন্টের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করিনি।