‘ভয়, ভীষণ ভয়…’, কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা, ক্ষোভ উগরে দিলেন সৌরভ
পর্যটকদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত দেশ। সকলেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী।

২২ এপ্রিল, আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সকালটা। কাশ্মীরে প্রতিদিনের মতোই সকলের ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। এপ্রিল মাস বলে কথা। টিউলিপ ফেস্টিভ্যালের সময় বলে কথা। বছরের সব থেকে বেশি পর্যটক এই মাসেই কাশ্মীরে আসেন। কেউ পরিবারের সঙ্গে ট্রিপ করতে, কেউ আবার হানিমুনে। সকাল সকাল তাই তৈরি হয়ে ভূস্বর্গ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়া। প্ল্যান মাফিক কিছু মানুষের তালিকায় ছিল বৈসরণ। আর সেখানেই অপেক্ষায় ছিল এক ভয়ানক হত্যাকাণ্ড। দুপুর হতেই সব শেষ। পলকে তোলপাড় হয়ে যায় গোটা দেশ। পর্যটকদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত দেশ। সকলেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না অভিনেতা সৌরভ চক্রবর্তী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট করে লিখলেন, “গত সেপ্টেম্বরেই এই পাহেলগামে বেশ কয়েকটাদিন কাটিয়ে এসেছি আমি। সোলো ট্রিপ ছিল বলে আমি যে হোমস্টেতে ছিলাম, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। হোমস্টের ছেলেটি দিল্লি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। তাঁর খুব ইচ্ছে— দিল্লি স্টাইলে বাড়ির নিচে একটা ক্যাফে খুলবে। গত ৩-৪ বছরে যে হারে ট্যুরিস্ট বেড়েছে, তাতে হোমস্টে কালচার আরও বাড়বে বলেই তাঁর ধারণা ছিল। আমার গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন সিদ্ধু মুসেওয়ালার ভক্ত। ভালবাসা এতটাই যে গাড়ির সিটকভারগুলোতেও ওঁর ছবি লাগানো রয়েছে। ওর সঙ্গে পায়ে হেঁটে কিলোমিটার পর কিলোমিটার ঘুরে বেড়িয়েছি… লিডার নদীর পাড়ে বসে চা পান করেছি। আলোচনা করেছি— কোথায় ফারাক রয়ে গিয়েছে আমাদের মধ্যে। আজাদ কাশ্মীর ভাবনাটা সত্যিই একটা স্বনিয়ন্ত্রিত দেশের চাহিদা, নাকি তার আড়ালে রয়েছে পাকিস্তানের হাতে চলে যাওয়ার ট্রানজিট স্লিপ?”
View this post on Instagram
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও লেখেন, “টর্চার” শব্দটার সঙ্গে কত ছোট থেকেই পরিচিত হয়ে যায় তাঁরা… এমনই নানান কথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। ছেলেটা শুধুই হাসত… আর বলত, “সবকো সির্ফ পায়সা চাহিয়ে ” (সকলের শুধু টাকার দরকার)। ক্ষিদে পেটে একবার বোমা মারা যায়— কিন্তু বোমার বদলে যদি টাকা না আসে, তবে বারবার তা মারা যায় না। খুব অল্প সংখ্যায় হলেও উল্টো মানসিকতার মানুষও দেখেছি — যাঁদের চোখে মুখে একটা প্রচ্ছন্ন রাগ। নিজেদের মুঠোয় রাখা কাশ্মীরকে হারানোর রাগ। সমস্ত উন্নয়ন, বাইরে থেকে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ, নতুন প্রজন্মের কাছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ— এই সব কিছু তাঁরা হয়তো অশনিসংকেত হিসেবে দেখে… যাঁরা চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয়, “তুমি তো ভাই বাইরের লোক। তোমার সঙ্গে দূরত্ব আছে আমার।” যে দূরত্বে মানুষ মানুষকে আর পড়তে (বুঝতে) পারে না… তখন নিজের চারপাশে টানা বৃত্তটাকেই মনে হয় একটা পৃথিবী। যে পৃথিবীতে একটাই দেবতা প্রতিষ্ঠিত— ভয়, ভীষণ ভয়। ২৮ জন পর্যটককে নির্বিচারে মেরে ফেলার পেছনে যে কোনও দর্শন, কোনও যুক্তি, কোনও শর্তই থাকতে পারে না, এটা জলের মতো পরিষ্কার। উগ্রপন্থাকে যারা ধর্মের গোঁড়ামির সঙ্গে মাখনের মতো মাখিয়ে মানুষ খুন করে, তারা আসলে সব ধরনের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চায়। এরা আবার ‘আজাদ কাশ্মীর’-এর স্বপ্ন দেখে?”





