Anamika Saha: পর্দার ‘মা’ অনামিকা রেডিয়োতে ছিলেন কেবলই ‘নায়িকা’… রোম্যান্টিক গলার জন্য আজও তাঁরই ডাক পড়ে
Anamika Saha-Tollywood: "আমি যা রেডিয়ো থেকে পেয়েছি, কোথাও আমাকে তা দেয়নি। রেডিয়োর লোকেরা আমাকে মাথায় করে রেখেছিল", TV9 বাংলাকে একান্তভাবে বলেছেন অনামিকা সাহা।
সিনেমার পর্দার বিন্দু মাসি, জাঁদরেল শাশুড়ি, দজ্জাল মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনামিকা সাহা। মাটির মানুষ অভিনেত্রী পর্দায় নায়িকা হওয়ার অনুমতি পাননি শ্বশুরবাড়ি থেকে। কিন্তু অভিনয়ের খিদে ছিল তীব্র। সেই ক্ষুধা নিবারণের জন্য মোটা হয়ে, শরীর ফুলিয়ে, গাল ফুলিয়ে অভিনয় করতে এলেন মা-জেঠিমা-ঠাকুমা-দিদিমার রোলে। প্রায় সমবয়সি নায়কদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিরকাল। কোনও আক্ষেপ করেননি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে ক্যামেরার সামনে প্রণাম করতেন, আর ক্যামেরার বাইরে রসিকতা করে থাপ্পড় মারতেন। সেই অনামিকাই একসময়ের নামকরা রেডিয়ো আর্টিস্ট। রেডিয়োতে তিনি কেবলই ‘নায়িকা’ ছিলেন। রোম্যান্টিক নায়িকা! তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত TV9 বাংলার সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে দর্শক ‘রেডিয়ো আর্টিস্ট’ অনামিকা সাহা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অনামিকাও অনুরাগীদের নিরাশ করেননি। TV9 বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অনামিকা ভাগ করে নিলেন তাঁর রেডিয়ো দিনের না-বলা কথা।
রেডিয়োর অডিশনের পরই ভিআইপি হলেন
“একটা সময় আকাশবাণীতে ৫,০০০-এরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছি আমি। দ্বিতীয়বার সিনেমায় অভিনয় করার আগের সময়টার কথা বলছি। সে সময় চুটিয়ে অভিনয় করতাম রেডিয়োতেই। অডিশন দিয়ে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম। সে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞা! তখন আমার বয়স ১৭-১৮ হবে। একেবারে ছোট্ট একটা মেয়ে ছিলাম। ভয়ে, অন্ধকারে একটা ঘরের মধ্যে আমার অডিশন হয়েছিল। সেই ঘরে কেবল আমি আর আমার সামনে একটি মাইক্রোফোন ছিল। আর সামনে রাখা ছিল একটা স্ক্রিপ্ট। সেই স্ক্রিপ্ট দেখে আমাকে বলতে হয়েছিল। কোথায় যে কে আছেন, কে আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপর ইনপ্রম্পটু ছিল। ওরা একটা সাবজেক্ট দিল। সেই সাবজেক্টের উপর আমাকে দু’মিনিট অভিনয় করতে হল। তারপর আমি ওদের ভিআইপি হয়ে গেলাম…”
সিনেমার মা, রেডিয়োতে কেবলই নায়িকা
“জানেন, সব ক’টা নাটকেই নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছি রেডিয়োতে। এদিকে সিনেমার পর্দায় নায়িকা ছিলাম না। ছিলাম মা-জেঠিমা-ঠাকুমা-দিদা। কিন্তু রেডিয়োতে আমি কেবলই নায়িকা ছিলাম। নায়িকা ছাড়া অন্য কোনও রোলে আমি রেডিয়োতে অভিনয় করিনি। অনেকেই আমার হিরো হয়েছেন ‘চেহারা না দেখতে পাওয়া’ অভিনয়ে। শোভনলাল মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ বসু, গৌতম চক্রবর্তী… সে সময় রেডিয়োর যাঁরা হিরো ছিলেন, সকলেই আমার হিরো ছিলেন। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি পাঠ করেছি রেডিয়োতে। বিপিন গুপ্তা মুম্বই থেকে এসে আমার সঙ্গে পাঠ করেছিলেন। সে সময় রেডিয়োতে ‘মালিয়া’ বলে একটা নাটক হত। সেটায় আমি পাঠ করতাম। সেখানে তৃপ্তি মিত্রর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতাম। সেই নাটকের আমিই ছিলাম ‘মালিয়া’।”
পুরস্কার ও প্রশংসার বন্যা…
“রেডিয়োতে প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছি। প্রচুর নাটকের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছি। আমি যা রেডিয়ো থেকে পেয়েছি, কোথাও আমাকে তা দেয়নি। রেডিয়োর লোকেরা আমাকে মাথায় করে রেখেছিল। গায়ক অতুলপ্রসাদ সেনের গান আমরা শুনি, তাঁর জীবনী নিয়ে একটি নাটক হয়েছিল। দিল্লিতে নাটক গিয়েছিল। তাতে শাঁওলি মিত্রর একটা নাটক ছিল। আমি অভিনয় করেছিলাম অতুলপ্রসাদের জীবনীতে। সন্তু মুখোপাধ্যায় হয়েছিলেন অতুলপ্রসাদ। আমি ছিলাম গায়কের স্ত্রী হেমাঙ্গিনীদেবীর চরিত্রে। আমরা পুরস্কৃত হয়েছিলাম।”
রেডিয়োতে আবার কবে?
রেডিয়োতে ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করার পর সিনেমায় দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হল। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’… তারপর আরও কত কী! রেডিয়োতে নাটক আর সেভাবে করা হল না। তবে এখনও রেডিয়োতে নাটক করি। কিন্তু আগের মতো একেবারেই করি না। কারণ, আগের মতো রেডিয়ো নাটক আর হয় না। বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কালেভদ্রে একটা হয়তো হয়। ওইটুকুই আরকী! তখন ধরুন ডাক পেলাম…। আসলে আগের মতো প্রোডিউসাররাও তো আর নেই। কেউ অবসর পেয়েছেন। কেউ মারা গিয়েছেন। রেডিয়োতে এখন আর কোনও নাটক হয় না।”
এফএম নিয়ে কী মতামত?
“এখন এফএম-এর যুগ। কিন্তু আমি শুনি না। কারণ আমার এফএম শোনার সময় নেই।”
পর্দার মা-ই রেডিয়োর নায়িকা… বিষয়টা ঠিক কেমন?
“আমার গলা রেডিয়োতে নায়িকার গলা। আমি বলি না। লোকে বলে। এদিকে আমাকে নায়িকার মতো একেবারেই দেখতে নয়। আমি মোটাসোটা মায়ের রোল করা মানুষ। ওটা তো ভিজুয়ালি দেখা যায়। কিন্তু রেডিয়োতে গলাটাই আমার সব। বাচ্চা মেয়ের মতো।”
গালমন্দর অভিজ্ঞতা…
“নায়িকার মতো গলা পাওয়ার প্রমাণ বহুবার পেয়েছি। একবার আমাকে একটা অন্যরকম চরিত্র দেওয়া হল। সমরেশ বসু গালাগাল দিয়ে ভূত করে দিয়েছিলেন। উনি এক্কেবারে কট্টোর প্রোডিউসার ছিলেন। রেডিয়োতে দারুণ-দারুণ নাটক করতেন। উনি আমাকে ফোন করে বললেন, ‘অনামিকা তুমি এই রোল গ্রহণ করলে কী করে? তুমি ৫,০০০ নাটকের নায়িকা…তুমি এই রোল নিলে কেন?’ সেদিন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমার গলায় নাকি এখনও রোম্যান্স আছে।”
আরও পড়ুন: Breakups: আলাদা হল পথ, প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেল কিয়ারা-সিদ্ধার্থের