শুটিং ফ্লোরে দাঁড়িয়েই সুচিত্রা খবর পান তাঁর স্বামী আর নেই! খবরটা পেয়ে কী করেছিলেন মহানায়িকা?
অন্তত, তাঁর সহঅভিনেতা ও সহঅভিনেত্রীদের সাক্ষাৎকারে তেমনটাই উঠে আসে। তবে তিনি মারাত্মক প্রফেশনাল ছিলেন, সেটা কিন্তু নানা ঘটনাতেই প্রমাণিত। এই যেমন, এক সিনেমার শুটিংয়েই সুচিত্রা পেয়েছিলেন, তাঁর স্বামী দিবানাথ সেনের মৃত্যু হয়েছে। সুচিত্রা কিন্তু খবর পেয়ে শুটিং থামাননি।

তিনি মহানায়িকা। লোকে ভাবত, যে শুটিং ফ্লোরে তাঁর দাপট ছিল। শুটিংয়ে লোকজনের সঙ্গে নাকি খুব একটা কথাও বলতেন না। নিজের মতো ক্য়ামেরার সামনে শট দিতেন, আর চেয়ারে বসে বই পড়তেন। দম্ভ নাকি তাঁর মুখশ্রী চুইয়ে পড়ত। তবে গসিপ ম্য়াগাজিনে এসব রটলেও, আসলে সুচিত্রা মোটেই এমন ছিলেন না। অন্তত, তাঁর সহঅভিনেতা ও সহঅভিনেত্রীদের সাক্ষাৎকারে তেমনটাই উঠে আসে। তবে তিনি মারাত্মক প্রফেশনাল ছিলেন, সেটা কিন্তু নানা ঘটনাতেই প্রমাণিত। এই যেমন, এক সিনেমার শুটিংয়েই সুচিত্রা পেয়েছিলেন, তাঁর স্বামী দিবানাথ সেনের মৃত্যু হয়েছে। সুচিত্রা কিন্তু খবর পেয়ে শুটিং থামাননি।
পুরীতে ঘুরতে গিয়ে স্বামী দিবানাথ সেনের মা সুচিত্রাকে একেবার দেখেই পছন্দ করে নেন। তারপর চটজলদি বিয়ে। সুচিত্রার তখন বয়স খুবই অল্প। মা-বাবার পছন্দকেই হ্য়াঁ, বলতে বাধ্য হয়েছিলে তিনি। তারপর কলকাতায় এসে দিবানাথের সঙ্গে সংসার জীবন শুরু তাঁর। এই দিবানাথ সেনের জন্যই অভিনয়ে এসেছিলেন সুচিত্রা। স্বামী দিবানাথের হাত ধরেই প্রথম স্টুডিওপাড়ায় পা দিয়েছিলেন তিনি। স্বামী দিবানাথের নানা পরামর্শেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠছিলেন মহানায়িকা।
গুঞ্জনে রয়েছে, তবে পরের দিকে সুচিত্রার এই অভিনয়ই, তাঁর দাম্পত্যের কাঁটা হয়ে ওঠে। এমনও শোনা যায়, উত্তম ও সুচিত্রাকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে যে রটনা ছিল, তা মোটেই পছন্দ করতেন না দিবানাথ। ফলে অভিমান, রাগ জমে জমে পাহাড় হয়ে উঠেছিল সুচিত্রা ও দিবানাথের মাঝে। ফলাফল দাম্পত্যে চরম অশান্তি। শোনা যায়, মহানায়িকার বহুদিন কেটেছে মদ্যপ স্বামীর কাছে কুকথা শুনে। কিন্তু সুচিত্রা সেন চুপ করে থেকে ছিলেন। সেই অশান্তির আঁচ পড়তে দেননি তাঁর অভিনয় জীবনে এমনকী, দুই মেয়ের ওপরও। তাই একটা সময়ের পর মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়িও ছেড়েছিলেন। কিন্তু কখনও বাইরের মানুষদের বুঝতে দেননি তাঁর জীবনের ঝড়কে। বরং ব্যক্তিগত জীবনকে মেকআপের আড়ালে লুকিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনুরাগীদের স্বপ্নসুন্দরী।
সেই সময়ের এক বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনে এসেছিল, ১৯৬৯ সালে পরিচালক সুশীল মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘ কালো’ ছবির শুটিং করছিলেন সুচিত্রা সেন। তখনই খবর আসে, সুচিত্রার স্বামী আর নেই। যদিও বহুদিন ধরেই স্বামীর সঙ্গে সেপারেশনে ছিলেন সুচিত্রা। জাহাজে ট্র্যাভেল করার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুচিত্রার স্বামী দিবানাথ।
শোনা যায়, স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন সুচিত্রা। শুধু বলেছিলেন, ”আমার জীবনের একটা চাবি হারিয়ে গেল।” তবে স্বামীকে হারিয়ে মারাত্মক শোকগ্রস্ত হলেও, বুকে কষ্ট নিয়েই মেঘ কালোর শুটিং শেষ করেছিলেন সুচিত্রা। মহানায়িকা ঠিক ছিলেন এমনই।
