ঠিক কোথায়-কোথায় ব্যথা হলে বুঝবেন এসব হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ?
Heart Attack: ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা NCRB-র রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ভারতে ১২.৫% হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের এই প্রবণতা বাড়ার পিছনে বেশ কিছু নির্দিষ্ট কারণ আছে বলে মনে করেছেন চিকিত্সকরা।

কথায় বলে ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়’। কিন্তু ঘটনা হল, এই কথাটা সব সময় খাটে না। বেহিসেবি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে শরীর একটা সময় বদলা নেবেই। পরিণত বয়স পর্যন্ত সুস্থ-সবলভাবে জীবন কাটাতে চাইলে তাই সতর্ক হতেই হবে। হয়তো এই কারণেই পঞ্চাশোর্ধ্ব হওয়ার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। হার্ট অ্যাটাক মানেই বয়স্করা এই রোগের শিকার হবে, এমনটা আর নেই। শরীরের উপর অত্যাচার চললে ৩০-এর আগেও হানা দিতে পারে হৃদরোগ। কমবয়সিদের মধ্যে দিন-দিন হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে। অনেকের ক্ষেত্রে সময়মতো রোগ ধরা পড়ছে, চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানা দিচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। আর পরিণাম হচ্ছে মৃত্যু।
মানুষ যত বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে, যত কর্মব্যস্ততা, যত কর্পোরেট-প্রতিযোগিতা বাড়ছে, আমাদের দেশে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা তত বাড়ছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা NCRB-র রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ভারতে ১২.৫% হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে অল্প বয়সী মহিলাদের সংখ্যাও যথেষ্ট। আগে গ্রামের তুলনায় শহুরে মানুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি দেখা যেত। এখন সেই ভেদাভেদও আর দেখা যাচ্ছে না বলে চিকিত্সকদের মত।
কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের এই প্রবণতা বাড়ার পিছনে বেশ কিছু নির্দিষ্ট কারণ আছে বলে মনে করেছেন চিকিত্সকরা। যেমন: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ ও ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি। জীবনের গাড়িতে লাগাম টানতে না-পারাকেই হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। কোনও ধরনের শারীরিক গতিবিধি না থাকলে বা মোবাইল-কম্পিউটারে মুখ গুঁজে পড়ে থাকার কারণেও কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে মনে করেন ডাক্তাররা।
কিন্তু হার্ট অ্যাটাক যে আপনার দেহে হানা দিয়েছে, তা বুঝবেন কী ভাবে? TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ধীমান কাহালির সঙ্গে। তিনি বলেন, “হার্টের পিছনে অথবা বাঁ দিকে বা উপরের দিকের অংশে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তার সঙ্গে অনেক সময় বাম কাঁধে ব্যথা হয়। এটা খুব পরিচিত লক্ষণ। অনেক সময় দেখা যায় যে, বুকে ব্যথা নেই, শুধু বাঁ কাঁধে ব্যথা হচ্ছে। আপনি যদি ডান হাতটা বাঁ কাঁধের উপর রাখেন, তাহলে দেখবেন ব্যথাটা উপর থেকে নিচের দিকে যায়। খুব বিরল ক্ষেত্রে ডান কাঁধে ব্যথা হয় এবং ডান হাত দিয়ে ব্যথা নিচের দিকে নামতে থাকে।”
হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বেশ কিছু পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিত্সকরা। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেনে চললে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়। এরপর যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার চেষ্টা করা, দীর্ঘক্ষণ মোবাইল দেখা বন্ধ করা, রাত জেগে কাজ বন্ধ রাখা, বাড়তি লবণ ও মিষ্টি খাবার বাদ দিতে হবে। বাদ দিতে হবে তেল-চর্বি জাতীয় খাবার এবং ফাস্টফুড। পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে প্রচুর সবজি, ফলমূল, মাছ। এই বিষয়গুলো রোজকার জীবনে মেনে চললেই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে আপনি সক্ষম হবেন।
