ঘরবন্দি অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হলে বা অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করলে কোভিড রোগীরা কী করবেন?

কোভিড ১৯-এর উপসর্গ হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হল শ্বাসকষ্ট হওয়া ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া। কিন্তু দেশে যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যে দেশের কোনও হাসপাতালেই সেই ক্ষমতা নেই।

ঘরবন্দি অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হলে বা অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করলে কোভিড রোগীরা কী করবেন?
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Updated on: Apr 30, 2021 | 1:32 AM

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে হু হু করে বেড়ে চলেছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের আকাল। হাসপাতালে পোঁছেও শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে একের পর এক করোনা রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এমন কঠিন অবস্থায় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ছোট্ট পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ঘরবন্দি অবস্থায় কোভিড রোগীদের বাড়াবাড়ি না হলে হাসপাতালে নয়, বাড়িতেই আলাদা থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়িতেই যদি কোনও কোভিড রোগীর (Covid-19 patients) শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তা হলে বাড়ির সদস্যরা সেই সময়টা সামলাবেন কীভাবে? ভয় পাবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত রোগীর অবস্থা যাতে আরও অবনতি না হয়, তার জন্য কী করতে হবে তার একটি বিশেষ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।

কোভিড আক্রান্তদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে, অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করলে বিছানার মধ্যেই বালিশ উপর পেটে ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। এতে শ্বাসকষ্ট অনেকটাই সুবিধা হবে। শোওয়ার এই বিশেষ ধরণের পদ্ধতিকে প্রোনিং (Proning) বলে। কোভিড আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট হলে এই বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিশেষ ফল মেলে। এমনকি বিদেশের হাসপাতালগুলিতেও আইসিইউতে ভরতি হওয়া কোভিড রোগীদের শ্বাসকষ্ট উপশম করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।

আরও পড়ুন:  শ্বাসকষ্ট হলে সোজা নয়, উপুড় হয়ে শুয়ে থাকুন! উপকার মিলবে কয়েক সেকেন্ডেই

কোভিড হলে বারবার অক্সিমিটার দিয়ে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা মাপুন। ছোট্ট যন্ত্রটির সাহায্যে যদি দেখেন ৯৪ এর নীচে নেমে গিয়েছে, এই প্রোনিং পদ্ধতি শুরু করে দিতে পারেন। বাড়িতেই এই প্রোনিং পদ্ধতি (Proning position) করলে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করবে।

কী করবেন?

বিছানার মধ্যে পাঁচটি পর পর বালিশ রেখে, তার উপর সাবধানে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। একটি বালিশ থাকবে গলার নীচে, এক বা দুটি বালিশ থাকবে বুকের নীচ থেকে পেটের নীচ অবধি। আর একটি বালিশ থাকবে ঠিক পায়ের তলায়। উপুর হয়ে টানা আধঘন্টা থাকার চেষ্টা করুন। পারলে ২ ঘন্টাও শুয়ে থাকতে পারেন। তবে এক একটি পজিশন ৩০ মিনিটের নীচে একদমই নয়।

প্রোনিং পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট আস্তে আস্তে প্রশমিত হতে থাকে। বায়ু চলাচলেও উন্নত হতে থাকে। এরপর আপনার ডানদিকে ফিরে শুয়ে থাকুন আধঘন্টা থেকে ২ ঘন্টার মতো। এবার বালিশ পিঠের কাছে রেখে ৩০ মিনিট থেকে ঘন্টা দুয়েক বসে থাকতে হবে। তারপর ফের বাঁদিকে ফিরে ৩০ মিনিট থেকে ঘন্টা দুয়েক শুয়ে থাকুন। হয়ে গেলে ফের প্রথমের অবস্থানে শুয়ে থাকুন। পাশাপাশি এতক্ষণ সময় যদি না দিতে পারেন, তাহলে উপুর হয়ে শোওয়ার পাশাপাশি ঘন ঘন পাশ ফিরে শোওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন বিশিষ্ট ডাক্তাররা। তবে প্রত্যেকটি পজিশন আধঘন্টা অন্তর বদলালে ফল মিলবে দ্রুত।

প্রোনিং পদ্ধতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

– প্রোন পজিশনিং শরীরের মধ্যে বায়ু চলাচল স্বাভাবিক রাখে, অ্যালভেওলার ইউনিট খোলা রাখতে ও শ্বাস-প্রশ্বাস আরও সহজ করতে সাহায্য করে।

– রোগীর যখন শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, অক্সিজেনের মাত্রা (oxygen level) ৯৪-এর নিচে নেমে যায় তখন এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়।

– আইসোলেশনে (home isolation) থাকাকালীন রোগীর উচ্চরক্তচাপ, ব্লাড সুগার, তাপমাত্রার হেরফেরের লক্ষণগুলির পাশাপাশি নিয়মিত SpO2 পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যিক।

– হাইপোক্সিয়ার(hypoxia)মতো জটিলতা যাতে না বাড়ে তার জন্য প্রোনিং পদ্ধতি অবশ্যই জরুরি।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখবেন কীভাবে? জেনে নিন…

প্রোনিং করার সময় যে যে সতর্কতাগুলি অবলম্বন করা উচিত

– খাওয়ার এক ঘন্টা পর এই বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। – খুব সহজেই যখন শুতে ও বসতে পারবেন, তখনই নিজে নিজে করার ঝুঁকি নেবেন। কষ্ট বাড়লে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিন। – শরীরের অবস্থা বুঝে দিনে ১৬ ঘন্টা এই পদ্ধতি করা যেতে পারে। – স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বালিশের জায়গা কখনও কখনও বদল করতে পারেন। – শরীরে কোথাও আঘাত লাগলে বা হাড়ের ব্যাথা থাকলে সেই জায়গাগুলিতে নজর রাখুন।

কাদের জন্য প্রোনিং উপযুক্ত নয়

-গর্ভবতীরা কোভিডে আক্রান্ত হলে যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাহলে এই পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। – জটিল ভেনাস থ্রোম্বোসিস (Deep venous thrombosis) থাকলে এড়িয়ে চলাই ভাল। তবে এই সমস্যা মাত্র ৪৮ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যেই চিকিত্‍সা করা সম্ভব। – জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত যাঁরা, তাঁদের জন্য এই বিশেষ পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। – যাঁদের শিড়দাঁড়া বা মেরুদণ্ডের সমস্যা (Unstable spine), হাঁটু বা ফিমারে সমস্যা রয়েছে তাঁরা এই পদ্ধতি থেকে দূরে থাকুন।

কোভিড রোগীকে (non-self-pronating patients) প্রোনিং করাবেন কীভাবে?

– প্রথমে বিছানায় চাদর পেতে রোগীকে একপাশ করে শুইয়ে হাতের চারপাশে চাদরটা এমনভাবে জড়িয়ে নিন যাতে খুব সহজে গড়িয়ে বা উলটে দিতে পারেন।

– দ্বিতীয়ত চাদর পাতুন রোগীর শরীরের নীচে। যাতে উলটো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

– তৃতীয়ত, চাদর এমনভাবে টানুন যাতে রোগীকে বারবার ঘোরাতে পারেন। রোগীকে বিছানার মাঝখানে আনার ব্যবস্থা করতে পারলেই এই পদ্ধতি কার্যকর হবে। বারবার এইভাবে জায়গা বদল করতে পারলে রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটতে বাধ্য।