Sleep in Children: বাচ্চার ঘুমোতে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করতে হবে ঠিক ক’টা থেকে?
Insufficient Sleep in Children: বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আপনার বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ঘুম অপরিহার্য। সন্তানের জ্বর, পেট খারাপ হলে আপনি যেমন চিন্তিত হন, ঘুম না হলেও একইভাবে চিন্তা (পড়ুন সচেতন) হওয়া দরকার আপনার। বিশ্ব ঘুম দিবসে সন্তানে ঘুমের মান উন্নত করতে কী-কী বিষয়ের উপর জোর দেবেন, টিপস দিচ্ছেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।
মেঘা মণ্ডল
সকালে ৮.৩০টায় স্কুল। সারাদিন খেলাধুলো, পড়াশোনার পর বিছানায় শুতে যেতে-যেতে বেজে যাচ্ছে রাত ১২টা। আবার ৭টা বাজতে না-বাজতেই তুলে দিতে হচ্ছে বাচ্চাকে। ৭ ঘণ্টার কম ঘুমোচ্ছে ক্লাস ওয়ানে পড়া শিশু। আর আপনার ছেলেমেয়ের দলে আরও অনেক বাচ্চা রয়েছে। যাঁরা মেরেকেটে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমোয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আপনার বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ঘুম অপরিহার্য। সন্তানের জ্বর, পেট খারাপ হলে আপনি যেমন চিন্তিত হন, ঘুম না হলেও একইভাবে চিন্তা (পড়ুন সচেতন) হওয়া দরকার আপনার।
বিশ্বজুড়ে আজ, ১৫ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ঘুম দিবস (World Sleep Day)। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে ঘুম দিবসের ঠিক আগের দিন, ১৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স’ আয়োজন করেছিল একটি সেমিনার ‘ডিপস্লিপ’। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ইএনটি স্পেশালিস্ট ও স্লিপ অ্যাপনিয়া সার্জেন ডাঃ দীপঙ্কর দত্ত, স্লিপ ফিজিশিয়ান ডাঃ অরূপ হালদার, পালমোনোলজিস্ট ডাঃ দেবরাজ জাশ, নিউরোসাইক্রিয়াট্রিস্ট ও স্লিপ ফিজ়িশিয়ান ডাঃ রাজশ্রী নিয়োগী, পেডিয়াট্রিশিয়ান ডাঃ পল্লব চট্টোপাধ্যায়, পেডিয়াট্রিশিয়ান ডাঃ গৌতম ঘোষ এবং পেডিয়াট্রিশিয়ান ডাঃ সংযুক্তা দে। আলোচনার বিষয় ছিল বাচ্চাদের মধ্যে ঘুম কতটা জরুরি এবং তাদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা।
একটা শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন সে শুধু একটা কাজই জানে এবং তা হল: ঘুম। প্রথম ৬ মাস শিশুর মধ্যে ঘুমের পরিমাণটা বেশি থাকে: প্রথম ৩ মাস গড়ে ১০-১৮ ঘণ্টা। তারপর অর্থাৎ ৪ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ১৪-১৫ ঘণ্টা)। এরপর ধীরে-ধীরে ঘুমের সময়টা কমতে থাকে। তা-ও ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে একটি শিশুর বিকাশে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ঘুমের সময়ও কমে। কিন্তু স্কুলে পড়াকালীন যদি আপনার বাচ্চা ৫-৬ ঘণ্টা বা তারও কম ঘুমোয়, তাহলে বিপদ। কমবে তার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা। পড়াশোনা করলেও পড়া মনে রাখতে সমস্যা হবে।
সন্তানের ঘুমের মান কীভাবে বজায় রাখবেন, টিপস দিলেন চিকিৎসকেরা:
১) ৯টা বাজলেই বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে হবে। যদি বাচ্চাকে সকাল ৬.৩০-৭টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়, তাহলে রাত ৯টায় ঘুমোতে যেতেই হবে। আর ঘুমোতে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করতে হবে রাত ৮.৩০টা থেকে।
২) বাচ্চার পাশে বসে মোবাইল, ল্যাপটপে কাজ করা চলবে না। শুধু তাই-ই নয়, ঘুমনোর সময় আশপাশে মোবাইল রাখা চলবে না। এই ধরনের ডিভাইস থেকে যে ব্লু লাইট নির্গত হয়, তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। সবচেয়ে ভাল হয়, যে ঘরে ঘুমোবেন সে ঘরে মোবাইল না রাখা।
৩) ছোট হোক বড়, স্লিপ হাইজিন বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। ঘুমের সময়টা ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ, রাত ৯টায় ঘুমোতে যাওয়া, সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা। ছুটির দিন বলে সন্তানকে বেশিক্ষণ ঘুমোতে দেওয়া চলবে না। ছুটি হোক বা বেড়াতে যান, ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার সময়টা ঠিক রাখতেই হবে।
৪) সন্তান যদি এডিএইচডিতে (ADHD অর্থাৎ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজওর্ডার। এই মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চারা অতিরিক্ত চঞ্চল হয়ে যায়, জেদ বেড়ে যায়) ভোগে, সেক্ষেত্রে অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই সন্তানের ঘুমকে পর্যবেক্ষণ করুন। ঘুমের সময় আপনার সন্তান নাক ডাকে কি না, কিংবা ঘড়ঘড় শব্দ হয় কি না, মুখ খুলে ঘুমোয়, ঘুমনোর সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে কি না—এগুলো খেয়াল রাখুন।
৫) ১৮ বছরের পরে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য (৬-১২ বছর বয়সীদের জন্য ১০-১১ ঘণ্টা, ১২-১৮ বছর বয়সীদের জন্য সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ ঘণ্টা)। এবং এটার সঙ্গে কোনও রকম আপোষ চলবে না।