Death Anniversary of Lal Bahadur Shastri : তাসকেন্ত চুক্তির পরেই মৃত্যু নির্ভীক প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর, ৫৬ বছর পরেও খোলেনি রহস্যের জট

Lal Bahadur Shastri : ৫৬ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। নির্ভীক, স্পষ্টবাদী শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাসকেন্ত চুক্তির পর মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। তাঁর মৃত্য়ুর ৫৬ বছর পরেও খোলেনি রহস্যের জট।

Death Anniversary of Lal Bahadur Shastri : তাসকেন্ত চুক্তির পরেই মৃত্যু নির্ভীক প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর, ৫৬ বছর পরেও খোলেনি রহস্যের জট
লালা বাহাদুর শাস্ত্রী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 11, 2022 | 3:14 PM

আমরা আজ ‘নানহা’ এর ৫৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি। ‘নানহা’ নামে কেউ তাঁকে চিনতে না পারলেও ছোটোবেলায় প্রিয়জনদের এই মিষ্টি ডাকেই তিনি সাড়া দিতেন। তিনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তিনি স্বভাবে কিছুটা রাগী, সৎ এবং অত্যন্ত স্পষ্ট বক্তা ছিলেন। সারাদেশের কাছে ‘সাধারণ জীবনযাপন এবং উচ্চ চিন্তাভাবনার’ দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখনও বহু লোকের মণিকোঠায় রয়েছেন। তিনি ১৯৬৪ সালের ৯ জুন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি রাত দেড়টা নাগাদ। খুব অল্প সময়ের জন্য় প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন হলেও তিনি শিখিয়েছেন মাথা উঁচু করে বাঁচার কথা। তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস অবধি সংগ্রাম করেছেন যাতে ভারত এবং ভারতীয়রা কখনও কারোর পায়ে না পড়েন।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর আকস্মিক মৃত্যুর পর দেশবাসী শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। গুলজারিলাল নন্দ স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী দেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। ১৯৬২ সালে চিন-ভারতের যুদ্ধের পর ভারত একটি বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। সাধারণ মানুষ চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে সহবাস করছিল। একমুঠো খাবারের জন্য তখন সংগ্রাম করতে হত। যে পরিস্থিতিতে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন তখন সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ছিল তাঁর কাছে একটা বড় পরীক্ষা।

পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা

দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার কিছু মাস পরেই আরেকটা ঝড়ের সম্মুখীন হন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৬৫ সালের ৫ অগাস্ট ৩০ হাজার পাকিস্তানি সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় ঢুকে পড়ে। সেই পরিস্থিতিতে শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে বাধ্যে হয়ে উপত্যকায় ভারতীয় সেনা পাঠান লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এই যুদ্ধে সাফল্য আসে ভারতের ঘরেই। ঠিক এক মাসের মধ্যেই ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের লাহোর দখল করে। সেই যুদ্ধে, ভারতীয় সেনার কাছে পরাস্ত হয় পাকিস্তান সেনা। শুধু তাই নয় ভারতীয় সেনার হাতে ধ্বংস হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯০ টি ট্যাঙ্ক। এটা সেই সময়কার কথা যখন ভারতীয়রা ‘লাল গম’ খেতে বাধ্য হত। এই ‘লাল-গম’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিএল-৪৮০ স্কিমের আওতায় পাওয়া যেত।

ভারতকে একঘরে করার চেষ্টা ‘সুবিধাবাদী’ আমেরিকার

তখন ভারতের চারিদিকে শত্রু। আমেরিকা যখন ভারতের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছিল তখন প্রাণপণে ভারতকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টায় ব্রতী ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে শাসিয়েছিলেন। ভারতবাসীর মুখ থেকে অন্ন কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন নয়তো তাঁর দেশ লাল-গমের রপ্তানি বন্ধ করে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে তখন দেশ এবং দেশের জনগণের মধ্য়ে যেকোনও একজনকে বাছাই করার কঠিন সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। একদিকে ছিল জনগণের খেতে না পাওয়া থেকে রক্ষা করা এবং অন্যদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কাশ্মীরে দেশের সীমানা সুরক্ষিত রাখা।

শাস্ত্রীর জবাবে হতাশ আমেরিকা

খুব খারাপ পরিস্থিতিতেও নিজের উৎসাহ হারাননি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্লিপ্তভাবে বলেন, “আপনি ভারতে লাল-গমের সরবরাহ বন্ধ করতেই পারেন। আপনি যদি পাঠানও আমরা আর গ্রহণ করব না।” তাঁর এই কঠোর জবাবে খুব বড় ধাক্কা খায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর দেওয়া হুমকিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভারতীয় সেনাদের ফিরিয়ে আনবে।

ভারত কোনওদিন এই রহস্যজনক মৃত্যু ভুলবে না

১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পাকিস্তানের সঙ্গে তাসকেন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাসকেন্তে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্য়ুর ৫৬ বছর পরেও তাঁর চলে যাওয়ার ঘটনা এখনও রহস্য হয়েই আছে। তাঁর মৃত্যুর পর ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ভারত রত্নে সম্মানিত করে।