Chandrayaan-3 Vs Luna-25: ‘খরগোশ’ লুনা ২৫-এর আগেই কি চাঁদে টাচডাউন করবে ‘কচ্ছপ’ চন্দ্রযান-৩?
Lunar Mission: যেখানে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সেখানে একই সময়ে দুই দেশেরই চন্দ্রাভিযান কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। তবে ইসরোর তরফে দুই মহাকাশযানকে তাদের মিশনের জন্য শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
নয়া দিল্লি: ছোটবেলায় কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পটা মনে আছে? যেখানে কচ্ছপ ধীরগতিতে এগোচ্ছিল, সেখানেই ছুট লাগিয়েছিল খরগোশ। জয় নিশ্চিত এই ভেবেই যখন ঘুম লাগিয়েছিল খরগোশ, তখনই চুপচাপ পাশ কাটিয়ে ফিনিশ লাইন পার করেছিল কচ্ছপ। সেই গল্পই মনে করাচ্ছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) ও লুনা-২৫ (Luna-25)। ভারতের চন্দ্রযান-৩ যখন গুটিগুটি পায়ে চাঁদের দিকে এগোচ্ছে, তখনই হুঁশ করে পাশ থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল রাশিয়ার লুনা-২৫। একদিকে চাঁদে যাচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান-৩, অন্যদিকে রাশিয়াও পাঠিয়েছে তাদের মহাকাশযান লুনা-২৫। দুই দেশের মহাকাশযানই চাঁদে অবতরণ করবে, মাঝে ব্যবধান কেবল দুইদিনের। আগামিকাল, সোমবারই চাঁদে অবতরণ করার কথা লুনা-২৫-র। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে বুধবার, ২৩ অগস্টের বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। তবে শনিবারই রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়, শেষ মুহূর্তে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রি-ল্যান্ডিংয়ের জন্য যে কম্যান্ড দেওয়া হয়েছিল, তা অনুসরণ করেনি লুনা-২৫। ফলে কে আগে চাঁদে অবতরণই করবে, তাই-ই এখন দেখার।
একদিকে যেখানে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সেখানে একই সময়ে দুই দেশেরই চন্দ্রাভিযান কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। তবে ইসরোর তরফে দুই মহাকাশযানকে তাদের মিশনের জন্য শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদে যাওয়ার চেষ্টা করছিল ভারত। অন্যদিকে, ৪৭ বছর আগেই চাঁদ ছুঁয়ে ফেলেছিল রাশিয়া। দীর্ঘ বিরতির পর আবার চন্দ্রাভিযানে নেমেছে রাশিয়া। তবে ২০২৩ নয়, ২০২১ সালেই চাঁদে অভিযানের কথা ছিল রাশিয়ার। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই অভিযান ক্রমাগত পিছিয়ে যায়।
উৎক্ষেপণ-
গত ১৪ জুলাই অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-৩। গত ১ অগস্ট চন্দ্রযান-৩ ট্রান্সলুনার অরবিট বা কক্ষপথে প্রবেশ করে। এরপরে ৫ অগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩। বর্তমানে চাঁদের কক্ষপথের শেষ পর্যায়ে রয়েছে চন্দ্রযান। ইতিমধ্যেই শেষ ডি-বুস্টিং প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগামী ২৩ অগস্ট বিকেল ৫ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান-৩।
অন্যদিকে, গত ১০ অগস্ট রাশিয়ার ভস্তোচেনি কসমোড্রোম থেকে লুনা-২৫ উৎক্ষেপণ করা হয়। অক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সরাসরি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে লুনা-২৫। গত ১৬ অগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে রুশ চন্দ্রযান। ৫ দিন কক্ষপথে আবর্তন করার পর ২১ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানজ়িনি ক্রেটারের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবতরণ করবে। তবে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে শেষ মুহূর্তে। ১৯ অগস্ট ডি-বুস্টিংয়ের সময়ে ম্যানুভারের মুহূর্তে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়। চাঁদের প্রি-ল্যান্ডিং অরবিটে নামার নির্দেশ দেওয়া হলেও কাজ করেনি লুনা-২৫। ফলে ২১ অগস্ট চাঁদে অবতরণ করবে কি না লুনা-২৫, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
চন্দ্রযান-৩-র সঙ্গে লুনা-২৫-র পার্থক্য কোথায়?
- বিগত প্রায় ৫০ বছরে এই প্রথমবার চন্দ্রাভিযানে নেমেছে রাশিয়া। লুনা-২৫ চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে সয়ুজ় ২.১ভি রকেটে (Soyuz 2.1v rocket) ভর করে। অন্যদিকে, চন্দ্রযান-২ অভিযানের চার বছর পরই ইসরো চন্দ্রযান-৩ পাঠিয়েছে। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে এলভিএম-৩ রকেটে করে চন্দ্রযান-৩ পাঠানো হয়।
- রাশিয়া থেকে চাঁদে পৌঁছতে লুনা-২৫ সময় নিয়েছে মাত্র ৫ দিন। এরপরে ৭ দিন চাঁদের কক্ষপথে পাক খেয়ে ২১ অগস্ট চাঁদে অবতরণ করবে। অর্থাৎ মাত্র ১২ দিনেই চাঁদে পৌঁছে যাবে লুনা-২৫। অন্য়দিকে, ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান ধাপে ধাপে চাঁদের দিকে এগিয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করে চাঁদে পৌঁছতে চন্দ্রযানের সময় লাগবে ৪২ দিন।
- চন্দ্রযান-৩ এর মিশনের মেয়াদ ১৪ দিন, যা চাঁদের সময় অনুসারে মাত্র একদিন। অন্য়দিকে, রাশিয়ার পাঠানো লুনা-২৫ আনুমানিক এক বছর চাঁদে থাকবে এবং নমুনা সংগ্রহ করবে।
- লুনার-২৫ এর ল্যান্ডারে রয়েছে প্রপেল্যান্ট ট্যাঙ্কার। পাশাপাশি হাউসিং সোলার প্যানেল, কমিউনিকেশন টুল, ইনবিল্ড কম্পিউটার সহ একাধিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাংশ থাকবে। উল্টোদিকে, চন্দ্রযান-৩ ও প্রপালশন মডিউল ও রোভার আছে, যা বৈজ্ঞানিক নমুনা সংগ্রহে সক্ষম।
- চন্দ্রযান-৩ ও লুনা-২৫ উভয়ই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে। যদিও লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানজ়িনি ক্রেটারের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবতরণ করবে। ফলে দুই মহাকাশযানের মধ্যে সংঘর্ষের কোনও সম্ভাবনা নেই।
- চন্দ্রযান-৩ গোটা মিশনের জন্য খরচ হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে,লুনা-২৫ কে চাঁদে পাঠাতে রাশিয়ার খরচ হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬০০ কোটির সমান।