নয়া দিল্লি: বাইরে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হচ্ছে চোখ জ্বালা। বেশি সময় খোলা জায়গায় থাকলেই শুরু হচ্ছে কাশি (Cough), যা আর থামতেই চাইছে না। চিকিৎসকের কাছে গেলেই ধরা পড়ছে ফুসফুসের জটিল রোগ। বিষাক্ত বাতাসে দিল্লি(delhi)-বাসীর বর্তমান হাল এমনটাই।
বায়ুদূষণ (Air Pollution) নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)-র উদ্বেগ প্রকাশ করার পরই রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার নানা পদক্ষেপ করলেও সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে অন্য কথা। পেটের টানে যাদের নিত্যদিন বাইরে বের হতে হয়, তাদের কাছে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে এই দূষণ। শীতকাল আসলেই বিষাক্ত বাতাসের চাদরে ঢাকা পড়ে যায় গোটা দিল্লি।
দিল্লির এক অটোচালকের কথায়, দূষণের কারণে তাঁর ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে বাইরে বের হলেই চোখ জ্বালা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয় কাশি, শ্বাসকষ্ট। ক্রমাগত দূষিত বাতাসে থাকার কারণে বুকে কফ জমে যাচ্ছে।
দীপাবলির পর থেকেই দিল্লি ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে দূষণ চরম মাত্রায় পৌঁছয়। বিগত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সেই দূষণের রেশই জারি রয়েছে। দীপাবলি উপলক্ষ্যে রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি জুড়ে যে ব্যাপক পরিমাণে বাজি পোড়ানো হয়েছিল, তার জেরেই টানা চার-পাঁচদিন ধরে বাতাসের গড় গুণমান “বিপজ্জনক” পর্যায়েই ঘোরাফেরা করছে। এছাড়াও ক্ষেতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো থেকেও ব্যাপক পরিমাণে বায়ু দূষণ হয়েছে। গাড়ি ও শিল্পাঞ্চল থেকে দূষণ তো লেগেই রয়েছে।
সকাল থেকেই ধোঁয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা দিল্লির আকাশ। খালি চোখে ৫০ মিটার দূরত্বে কী রয়েছে, তাও দেখা সম্ভব হচ্ছে না। পিএম ২.৫, একধরনের ধূলিকণা যা মানবদেহের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর, গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এই ক্ষতিকর দূষিত কণার মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাণের ৩০ গুণ বেশি মাত্রায় পৌঁছেছিল, এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)।
দূষণ বাড়তেই হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতেও রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। অধিকাংশ রোগীরই ফুসফুসে প্রদাহ বা শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর কোনও রোগ ধরা পড়ছে। চিকিৎসককে দেখাতে আসা এক রোগী বলেন, “জানিনা কবে দিল্লির দূষণ রুখতে স্থায়ী সমাধান বের করা হবে। আমরা একটা গ্যাস চেম্বারের মধ্যে রয়েছি মনে হচ্ছে, যেখানে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছি আমরা সবাই।”
চলতি সপ্তাহেই এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের (Commission For Air Quality Management) তরফে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়। এরমধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল, কলেজ বন্ধ, সরকারি কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুযোগ দেওয়া, ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সহ একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানা (Haryana), রাজস্থান (Rajasthan) ও উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh) সরকারকেও এই নির্দেশগুলি মানতে হবে বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখিত প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে আগামী ২১ নভেম্বর অবধি সমস্ত ধরনের নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে, রেল পরিষেবা বা স্টেশন তৈরির কাজ, মেট্রো রেল কর্পোরেশনের কাজ, বিমানবন্দর ও আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাস তৈরি এবং জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনও প্রকল্পের কাজে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দিল্লির সীমানার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬টি প্ল্যান্ট আপাতত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলি আগামী ৩০ নভেম্বর অবধি বন্ধ থাকবে। এরপরও দূষণ নিয়ন্ত্রণে না এলে দুদিনের জন্য লকডাউন করা হতে পারে বলেও সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: Chandrababu Naidu: ‘আর নিতে পারছি না’, বিধানসভা থেকে বেরিয়ে কেঁদে ফেললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী