Don Bosco Shilchar: ‘রাইট স্বরবর্ণ উইদ মাত্রা’, বাংলা ভাষার প্রশ্ন হল খাঁটি ইংরাজিতে!
Don Bosco Shilchar: ইংরাজী মাধ্যমের স্কুলে, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন করা হল ইংরাজি ভাষায়, ইংরাজি হরফে। কেমন জানেন? প্রশ্ন করা হয়েছে, 'রাইট স্বরবর্ণ উইদ মাত্রা' (Write Swarabarna with Matra)! চোখ কপালে তোলার মতো।

শিলচর: ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’, এই একটি কবিতায় ভাষার প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে বাঙালিকে আয়না দেখিয়েছিলেন কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। ছত্রে ছত্রে ছিল আত্মঘাতী বাঙালির প্রতি কটাক্ষ। ভবানীপ্রসাদ আজ বেঁচে নেই। কিন্তু, তাঁর কবিতা একেবারে বাস্তব হয়ে উঠল। ইংরাজী মাধ্যমের স্কুলে, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন করা হল ইংরাজি ভাষায়, ইংরাজি হরফে। কেমন জানেন? প্রশ্ন করা হয়েছে, ‘রাইট স্বরবর্ণ উইদ মাত্রা’ (Write Swarabarna with Matra)! চোখ কপালে তোলার মতো। তাও আবার এই ঘটনা ঘটেছে অসমের শিলচরে। যে শিলচরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভাষা শহিদদের ইতিহাস। এই ট্যাঁশগরু মার্কা প্রশ্নপত্রটির ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবেই একে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ক্ষোভও।
এই কাণ্ড ঘটেছে শিলচরের বিখ্যাত ডন বসকো স্কুলে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রথম ইউনিট টেস্টের বাংলা ভাষার পরীক্ষায়, প্রশ্ন করা হয়েছে ইংরাজি ভাষায়। এমনকি, প্রশ্নপত্রটি ছাপাও হয়েছে রোমান হরফে। মোট ২০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে ৫ নম্বর ধার্ষ রয়েছে ‘ওরাল’ অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষার জন্য। বাকি প্রশ্নগুলি হল – ‘হাউ মেনি টইপস অব বর্ণস আর দেয়ার? রাইট দেয়ার নেম’, ‘রাইট স্বরবর্ণ উইদ মাত্রা’ এবং ‘রাইট স্বরবর্ণ উইদআউট মাত্রা’। এই প্রশ্নপত্রটির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমাজের সর্বস্তর থেকে এর সমালোচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষার এই চরম অবমাননা কেউই ভালভাবে নেননি। কেউ কেউ এই জঘন্য প্রশ্নপত্রটিকে, কোনও ধর্মকে অবমাননা করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
সমালোচনার মুখে পড়ে, শিলচরের জন বসকো স্কুলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের স্কুলে তৃকতীয় শ্রেণিতেই প্রথম বাংলা পড়ানো শুরু হয়। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা বাংলা শেখার একেবারে প্রাথমিক স্তরে থাকে। সম্পূর্ণ বাংলা বাক্য তারা বুঝতে পারে না। সেই কারণেই ইংরাজি ভাষা ও হরফে, বাংলা ভাষার পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়েছে। যেই রকম অনেক স্কুলে সংস্কৃত বা আরবী ভাষার পরীক্ষার প্রশ্ন ইংরাজীতে করা হয়।
@ranojpeguassam @himantabiswa At Don Bosco School Silchar, Question paper of Bengali subject printed in English. pic.twitter.com/YmyXjG91Z7
— Prabhas 🇮🇳 (@iAmPrabash) June 13, 2024
তবে, তাদের এই যুক্তি মানতে নারাজ অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “এই ছাত্রছাত্রীরা কি আকাশ থেকে পড়েছে? তারা কি এই এলাকার নয়? তারা কি বাঙালি ঘর থেকে আসেনি? বছরের পর বছর, এমনটা চলছে। আর আমরা চুপ করে আছি। এই স্কুল যদি বাংলা না পড়াতে পারে তাহলে তাদের এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেছেন, “সকলেই জানেন এই অঞ্চলের ভাষা আন্দোলনের কথা। কিন্তু এই বেসরকারি সংস্থাগুলি, আমাদের ভাষার অধিকার কেড়ে নিয়ে ঔপনিবেশিক পশ্চিমী ধারণাকে চাপিয়ে দিতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন দরকার।”
প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালের ১৯ মে বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে শিলচর রেল স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার ভাষাসৈনিক। তাঁরা অসমের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। শহিদ হয়েছিলেন ১১ জন। এই ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল। বাঙালি অধ্যুষিত সেই শিলচরেই এবার বাংলা ভাষার পরীক্ষার প্রশ্ন হল ইংরাজিতে। যেন, “কীসের গরব? কীসের আশা? আর চলে না বাংলা ভাষা… ।





