Explained on Tahawwur Rana: মনমোহন পারেননি, মোদী করে দেখালেন, তাহাউরের প্রত্যর্পণে কতটা হাত শক্ত হল বিজেপির?

Explained on Tahawwur Rana: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) বলেছিলেন, "তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কূটনীতির সাফল্য। মোদী সরকারের প্রচেষ্টাই হল ভারতের পরিচয়, ভূমি ও জনগণের উপরে যারা আক্রমণ করে, তাদের শাস্তি দেওয়া"।

Explained on Tahawwur Rana: মনমোহন পারেননি, মোদী করে দেখালেন, তাহাউরের প্রত্যর্পণে কতটা হাত শক্ত হল বিজেপির?
তাহাউরকে ফেরানোর নেপথ্যে মোদী কূটনীতির সাফল্য।Image Credit source: TV9 বাংলা

|

Apr 11, 2025 | 3:04 PM

নয়া দিল্লি: ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর। দেশের কাছে অভিশপ্ত একটা দিন। দেশের প্রাণকেন্দ্র মুম্বইয়ের ১২ জায়গা একসঙ্গে ভেসে গিয়েছিল রক্তে। ১০ জন লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি আরব সাগরের পথ ধরে মুম্বইয়ে এসে পৌঁছেছিল। তার পরের ঘটনা অনেকেরই জানা। বিখ্যাত তাজ হোটেল থেকে শুরু করে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোন্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল, নারিম্যান হাউস, মেট্রো সিনেমায় পরপর হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় মোট ১৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। জঙ্গিদের মধ্যে ৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছিল, একমাত্র জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছিল আজমল কাসব (Ajmal Kashav)-কে। মুম্বইয়ে এই হামলার প্রধান চক্রী ছিলেন তাহাউর রানা (Tahawwur Rana)। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তাঁকে আমেরিকা থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এবার ভারতেই তাঁর বিচার করা হবে। তাহাউরের এই প্রত্যর্পণকে মোদী সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য়দিকে, কংগ্রেস আবার দাবি করছে, তাহাউরের প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া তো ইউপিএ জমানাতেই শুরু হয়েছিল। তাহলে এনডিএ-র সাফল্য কী করে?

তাহাউরের প্রত্যর্পণের আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) বলেছিলেন, “তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কূটনীতির সাফল্য। মোদী সরকারের প্রচেষ্টাই হল ভারতের পরিচয়, ভূমি ও জনগণের উপরে যারা আক্রমণ করে, তাদের শাস্তি দেওয়া“। কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, “২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময় যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা তাহাউরকে ভারতে আনতে পারেনি।”

বৃহস্পতিবার তাহাউর ভারতের মাটিতে পা রাখার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসও বলেন, “আমি খুব খুশি যে মুম্বই হামলার মূল চক্রী তাহাউর রানাকে ভারতে আনা হয়েছে। আমি সমস্ত মুম্বইবাসীর তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কাসবকে আইনানুযায়ী শাস্তি দেওয়া হলেও, হামলার প্রধান চক্রী আমাদের হেফাজতে ছিল না। এনআইএ তদন্ত করছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে, তারাই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা যাবতীয় সহযোগিতা করব।”

বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল বলেন, “১৬ বছর বাদে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর কূটনীতির সাফল্যেই মুম্বই হামলার চক্রীকে ভারতে আনা সম্ভব হয়েছে। ওকে শুধু ফাঁসিই দেওয়া হবে না, এনআইএ হেফাজতে ওর থেকে এই ষড়যন্ত্রের নানা তথ্যও সামনে আসবে। বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সবসময় বলেন যে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর পাকিস্তান।”

এদিকে, বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা কানহাইয়া কুমার। তিনি দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তাহাউরের প্রত্য়র্পণ নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি।

অন্যদিকে, রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “এবার মুম্বই হামলার নেপথ্যের ঘটনা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে, কারণ আমরা জানি যে শুধুমাত্র ডেভিড হেডলি ও তাহাউর রানাই এই ষড়যন্ত্র করেনি, এর সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত রয়েছে। পাকিস্তানের কারা কারা যুক্ত ছিল, তাও জানা যাবে। আমি ইউপিএ সরকারকে অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে আমাদের সরকারকেও অভিনন্দন জানাই, তাদের প্রচেষ্টাতেই আজ তাহাউর ভারতে।”

প্রাক্তন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার বলেন, “তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ নিয়ে রাজনীতি করার সময় এটা নয়। আমার মনে হয় না কংগ্রেসের কেউ এই হামলায় পাকিস্তানের সংযোগ অস্বীকার করেছিল। ইউপিএ সরকারই প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, যা আজ সফল হয়েছে। এর জন্য গোটা দেশের প্রশংসা পাওয়া উচিত। তদন্তকারী সংস্থা, বর্তমান সরকার, পূর্ববর্তী সরকার-সকলের। তবে সুবিচার পেতে যদি ডেভিড হেডলিকেও আমেরিকা থেকে ভারতে আনা যেত, তবে আরও ভাল হত।”

লোকসভা নির্বাচন গত বছরেই শেষ হয়েছে। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনও মিটে গিয়েছে। তাহলেও বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে তাহাউরের প্রত্যর্পণ সাহায্য করবে। এমনটাই মত কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের দাবি, এটা মোদী সরকারের বড় কূটনৈতিক জয়। যেখানে নীরব মোদী, মেহুল চোকসির প্রত্যর্পণ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে, সেখানেই তাহাউরের প্রত্যর্পণ বিরাট সাফল্য। বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দেবে এই সাফল্য।  এবং পরবর্তী নির্বাচনগুলিতেও কেন্দ্রের শাসক দলকে মাইলেজ দেবে।